জবি থেকে শাখা সরাবে না বাংলাদেশ ব্যাংক

0
161
Print Friendly, PDF & Email

‘‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সদরঘাট শাখাটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে অবস্থিত- দাবিটি অযৌক্তিক। শাখাটি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব জায়গায় রয়েছে। এর পক্ষে যথেষ্ট দলিলও আছে ব্যাংকের কাছে। তাই ওই স্থান থেকে শাখা সরিয়ে নেওয়ার কোনো যুক্তিই নেই ’’ বলে মন্তব্য করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ক্যাম্পাস থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সদরঘাট শাখা স্থানান্তরের জন্য গভর্নরকে দেওয়া এক চিঠির প্রেক্ষিতে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ জানিয়েছে, শাখা স্থানান্তরের অনুরোধ বিবেচনা করার কোনো অবকাশ নেই। শাখাটি বিপুল জনসাধারণের সরকারি খাতে খাজনা, কর পরিশোধ এবং পেনশন উত্তোলনসহ নানাবিধ সেবা দিয়ে আসছে।

তাছাড়া, দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ব্যাংক ও সরকারি কোষাগারে নোট ও মুদ্রা যোগানে ভূমিকা পালন করছে। ফলে সদরঘাটের এ শাখাটি ওই স্থান থেকে কোনভাবে সরানো যাবে না।

প্রসঙ্গত, গত ৪ মার্চ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান ক্যাম্পাস থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সদরঘাট শাখা স্থানান্তরের জন্য গভর্নরকে এক চিঠির মাধ্যমে অনুরোধ করেন। এর প্রেক্ষিতে গত ২২ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান উপাচার্যকে উত্তর পাঠিয়ে চিঠি দিয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, শাখা স্থানান্তরের অনুরোধ বিবেচনা করার কোনো অবকাশ নেই।

চিঠির জবাবে আতিউর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সদরঘাট শাখা ভবনটি আদৌ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অবস্থিত নয়। পুরনো ঢাকায় অবস্থিত এ শাখাটি বিপুল জনসাধারণের সরকারি খাতে খাজনা, কর পরিশোধ এবং পেনশন উত্তোলনসহ নানাবিধ সেবা দিয়ে আসছে। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ব্যাংক ও সরকারি কোষাগারে নোট ও মুদ্রা যোগানে ভুমিকা পালন করছে।

উপাচার্যের এক অভিযোগের জবাবে চিঠিতে গভর্নর বলেছেন, সদরঘাট শাখায় ইনসিনেটরে কোনো নোট পোড়ানো হয় না। ফলে বিষাক্ত গ্যাস নির্গমনের কোনো প্রশ্নই আসে না। তবে পুরাতন নোট শ্রেডিংজনিত শব্দ দূষনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ার অভিযোগের বিষয়ে নজর দিবে বাংলাদেশ ব্যাংক। শব্দ দূষণ যেন অস্বস্তিকর মাত্রায় না যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিনিময়ে গভর্নর সদরঘাট শাখায় জন সাধারণের সেবা পাওয়ার সুবিধা নির্বিঘ্ন রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সচেতন মনযোগ ও সহযোগিতা আশা করেন।

উল্লেখ্য, ব্যাংকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮ শতাংশ জায়গাজুড়ে অবস্থিত- এমন অভিযোগ তুলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা। তারা গত মার্চে ক্যাম্পাস থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সদরঘাট শাখা স্থানান্তরের দাবিতে আন্দোলনে নামে। এ সময় ব্যাংকের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে সেখানে ‘বঙ্গবন্ধু একাডেমিক ভবন’ লেখা একটি ব্যানার টানিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

গত মার্চে বাংলাদেশ ব্যংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেছিলেন ‘শাখাটি বাংলাদেশ ব্যাংকের সবচেয়ে পুরাতন অফিস। বাংলাদেশ ব্যাংক হওয়ার আগে তৎকালীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ডেপুটি গভর্নর ওই অফিসে কাজ করতেন। তাই এর সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক পটভূমি জড়িয়ে আছে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. সরকার আলী আব্বাস বলেছিলেন, ইতিহাস থেকে জানা গেছে, এটি এক সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায়ের ছাত্রীদের হল ছিল। অন্যান্য হল যেমন বেদখল হয়ে গেছে এ জায়গাটিও বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতছাড়া হয়ে যায়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ৩৮ শতাংশ জায়গা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সদরঘাট শাখাটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। পাকিস্তান সরকারের আমলে এ শাখাটি পুরনো ও ছেঁড়া নোট পোড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হতো। ১৯৮৩ সালে ওই সময়ের রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ তৎকালীন জগন্নাথ কলেজ পরিদর্শনে এসে শাখাটি বিশ্ববিদ্যালয়কে বুঝিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন। পরে দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও কলেজ কর্তৃপক্ষ জায়গাটি বুঝে পায়নি।

পরবর্তী সময়ে ১৯৯৫ সালের ২ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কলেজটিকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা দেন। এ সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনুরোধে তিনি ব্যাংকের শাখাটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তর ও এর কার্যক্রম অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু এরপরও জায়গাটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া সম্ভব হয়নি কলেজ কর্তৃপক্ষের। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে এসব গাল-গল্পের কোনো ভিত্তি নেই।

শেয়ার করুন