ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাগুলোর আলোচিত গ্যাস-নৈরাজ্য থামেনি। কারণ অবৈধ গ্যাসলাইন অপসারণের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। ঢাকঢোল পিটিয়ে, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে কয়েকটি এলাকায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও কয়েক দিনের মধ্যে সেগুলো চালু হয়ে গেছে। তিতাস গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কর্তৃপক্ষ সে তথ্য জেনেও আর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
তবে উপজেলা নির্বাচনের কারণে ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ না পাওয়ায় অপসারণ বন্ধ ছিল বলে দাবি করেছে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও তিতাসের স্থানীয় দপ্তরগুলো। অবশ্য সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচনের আগে স্থানীয় সাংসদেরা সরকারের শীর্ষ নেতাদের এই বলে নিরস্ত করেছেন যে এই হাজার হাজার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলে উপজেলা নির্বাচনে সরকারি দলের প্রার্থীকে ভোটের জন্য ভুগতে হবে। এ ছাড়া স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা কোটি কোটি টাকার এই অবৈধ গ্যাস-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় প্রশাসন কার্যত চুপ করে আছে।
বিচ্ছিন্ন সংযোগ চালুর পরও কোনো ব্যবস্থা না থাকায় অবৈধ সংযোগকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি উপজেলায় স্থানীয় সাংসদের প্রভাবের কারণে বিজ্ঞপ্তি দিয়েও অভিযান চালায়নি তিতাস কর্তৃপক্ষ। আর এই সময়ের মধ্যে সোনারগাঁ এলাকায় আরও প্রায় ছয় হাজার অবৈধ সংযোগ দিয়েছে আওয়ামী লীগের ‘গ্যাস কমিটি’। গাজীপুরেও মহানগর ছাত্রলীগের সহসভাপতি সায়মন সরকারের নেতৃত্বে অবৈধ গ্যাসসংযোগ দেওয়ার কাজ অব্যাহত আছে। এই চক্রটি ইতিমধ্যে অবৈধ সংযোগের বিনিময়ে প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। জেলার কালিয়াকৈরে বিচ্ছিন্ন লাইনগুলো আবার সচল করা হয়েছে। ঢাকার কেরানীগঞ্জেও বিচ্ছিন্ন করা অবৈধ লাইন আবার চালু হয়ে গেছে।
সাভারেও উচ্ছেদ করা অবৈধ লাইন আবার বসানোর চিত্র সরেজমিনে দেখা গেছে। এ এলাকায়ও অবৈধ লাইন স্থাপন ও সংযোগ দেওয়ার চক্র সক্রিয় আছে।
পেট্রোবাংলার হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা ও আশপাশের জেলাগুলোর বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার অবৈধ বিতরণ লাইন বসানো হয়েছিল। পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে কয়েক দিন অভিযান চালিয়ে ৩৫ কিলোমিটারের মতো লাইন অপসারণ করেছিল বলে দাবি করে তিতাস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বাকি লাইন অপসারণ না করেই অভিযান বন্ধ রাখা হয়েছে।
বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের বন্দর, সোনারগাঁ ও রূপগঞ্জ উপজেলা, গাজীপুর সদর ও কালিয়াকৈর, ঢাকার সাভার ও কেরানীগঞ্জসহ কয়েকটি এলাকায় নির্বিচারে অবৈধ লাইন বসানো হয়। নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলায় এক দিন সীমিত কিছু অভিযান চালানো হয়েছিল। অন্য উপজেলাগুলোতে অভিযান শুরুই করা যায়নি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে।
জানতে চাইলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নওশাদ ইসলাম প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, অভিযান বন্ধ করা হয়নি। এই সময়ে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কিছু অভিযান চালানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় পুলিশি সহায়তা পেলে অন্য জায়গাগুলোতেও অভিযান চালানো হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত আছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে তিতাস অবৈধ গ্যাস বিতরণ লাইন অপসারণের অভিযান শুরু করে। এর আগে অবৈধভাবে লাইন স্থাপনকারীদের নিজ উদ্যোগে তা বিচ্ছিন্ন করার জন্য ১০ দিন সময় দেওয়া হয়। তবে তাতে কোনো সাড়া মেলেনি। শুধু গাজীপুরের একজন গ্রাহক অবৈধ লাইনের ৪০ মিটার পাইপ তুলে তিতাসের স্থানীয় কার্যালয়ে জমা দিয়েছিলেন।
অবৈধ লাইন বসানোর সঙ্গে তিতাসের একশ্রেণীর কর্মকর্তা ও ঠিকাদার সরাসরি জড়িত। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা