রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলে প্রচণ্ড গরমের কারণে আমের গুটি (কড়ালি) ঝরে পড়ছে। আর গুটি ঝরে পড়া রোধে ও পোকার আক্রমণ ঠেকাতে আম চাষীরা মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ কীটনাশক স্প্রে করছে। গুটিকে দ্রুত বড় করতে ছিটানো হচ্ছে হরমোন ও ভিটামিন সেপ্র। এসবের ফল হচ্ছে উল্টো, গুটি ঝরে পড়ছে আরো বেশি। যার কারণে এবার আমের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, রাজশাহী অঞ্চলে এবার ৪৮ হাজার ৩১৩ হেক্টর জমিতে আমের বাগান করা হয়েছে। আম উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৫ লাখ টন। এবার সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে কিনা তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে সংশয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় রয়েছে মোট বাগানের প্রায় অর্ধেক অর্থাত্ ২৩ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে আম বাগান। এ থেকে প্রায় ২ লাখ টন আম উত্পাদনের টার্গেট ধরা হয়েছে। এছাড়া শুধু রাজশাহী জেলায় ৮ হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমির বাগানে আম উত্পাদনের টার্গেট ধরা হয়েছে ৯০ হাজার ৩৫০ টন। নওগাঁয় ৪ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমির বাগানে ৭৭ হাজার ২০০ টন, নাটোরে ৩ হাজার ৭০০ হেক্টর জমির বাগানে ৪২ হাজার ৮৪৬ টন, বগুড়ার ৩ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমির বাগানে ৩১ হাজার ২৩০ টন, জয়পুরহাটের ৬২২ হেক্টর বাগানে ৪ হাজার ১৩৬ টন, পাবনার ১ হাজার ৯০৪ হেক্টর জমির বাগানে ১৫ হাজার ৩৭৮ টন এবং সিরাজগঞ্জের ২ হাজার ৫৫ হেক্টর জমির বাগান থেকে ২০ হাজার ৫৫০ টন আম উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ধরেছে কৃষি বিভাগ।
রাজশাহী আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
এদিকে কৃষি অফিস সূত্র জানায়, তাপমাত্রা কিছুটা বেশি থাকলেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার রাজশাহী অঞ্চলের ছোট বড় প্রায় সকল গাছে প্রচুর মুকুল এসেছিল। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে আমের গুটির বোটা শুকিয়ে ঝরে যাচ্ছে। অন্যদিকে আম ব্যবসায়ীরা গুটি ঝরে পড়া ও পোকার আক্রমণ ঠেকাতে গাছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই অতিরিক্ত ওষুধ স্প্রে করছে। এতেও গুটি (কড়ালি) ঝরে যাচ্ছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ সূত্রে জানা যায়, অনুকূল আবহাওয়ায় এবার রাজশাহী অঞ্চলের আম বাগানে পর্যাপ্ত মুকুল এসেছিল। আমের গুটিও টিকেছিল প্রচুর। কিন্তু বিরূপ আবহাওয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত ওষুধ স্প্রে করায় গুটি ঝরে যাচ্ছে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দে র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও গবেষক ড. আবদুল আলিম বলেন, বিভিন্ন কারণে আমের গুটি ঝরে যেতে পারে। প্রচণ্ড খরা, রোগ, পোকার আক্রমণ, পুষ্টির অভাব এবং সেচের অভাব এমনকি সংশ্লিষ্টরা না বুঝে অতিরিক্ত হরমোন ও ভিটামিন সেপ্র করলে আমের গুটি ঝরে পড়তে পারে। তিনি আরো বলেন, গুটি ধরে রাখার জন্য আম বাগানে সেচের পরিমাণ বাড়াতে হবে। যেসব গাছ থেকে এখনো আঠালো পদার্থ বের হচ্ছে ওইসব গাছে প্রতি ১০ লিটার পানিতে কীটনাশক কোনফিডর ২ গ্রাম ও ডাইথেন (এম-৪৫) ২০ গ্রাম এক সাথে মিশিয়ে সেপ্র করলে কড়ালি ঝরে পরা কমে যাবে।
তবে রাজশাহীর পবার মথুরাপুরের আম চাষী এমদাদ ও ইটাঘটির আব্দুল মালেক, মোহনপুরের হরিপুরের আম চাষী আমজাদ হোসেন বলেন, গুটি ঝরে যাওয়ায় গাছের গোড়ায় সেচ এবং গুটিতে কীটনাশক সেপ্রসহ বিভিন্ন পরিচর্যার পরও কাজ হচ্ছে না।