প্রচণ্ড গরমের পর স্বস্তির বৃষ্টি

0
174
Print Friendly, PDF & Email

অবশেষে দেখা মিলল বহু কাঙ্ক্ষিত স্বস্তির বৃষ্টির। এক পশলা বৃষ্টিই পাল্টে দিল সব কিছু। বুলিয়ে দিল শান্তির পরশ। মুন্সিগঞ্জ, ভোলা, পটুয়াখালী ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গতকাল শুক্রবার দেখা মেলে স্বস্তির বৃষ্টির। এসব এলাকায় অনেকেই রাস্তায় এবং বাড়ির ছাদে বৃষ্টিতে ভিজে উল্লাস করে।

সময়ের সাথে সাথে রাজধানীতেও তাপমাত্রা কিছুটা কমতে শুরু করে। বিকালের দিকে রাজধানীর বনশ্রী এলাকাসহ কোথাও কোথাও ঝড়ো শীতল বাতাস বয়ে যায়।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকাতেও বিক্ষিপ্তভাবে দু’এক জায়গায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া এখন তাপমাত্রা কমতে থাকবে। গতকাল শুক্রবার ঢাকায় তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কিন্তু আগের দিন ঢাকায় গত ৫৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এরআগে ১৯৬০ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

এদিকে গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা আগের দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার চেয়ে কম। আগেরদিন বৃহস্পতিবার যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এরআগে ১৯৭২ সালে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল রাজশাহীতে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

গতকাল দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে ঈশ্বরদীতে ৪১ ডিগ্রী সেলসিয়াস, যশোরে ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস, টাঙ্গাইলে ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস ও মংলায় ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল রংপুরে ২২ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্তব্যরত আবহাওয়া পূর্বাভাস কর্মকর্তা (ডিএফও) আবুল কালাম মল্লিক গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, তাপমাত্রা আর বাড়ার সম্ভাবনা দেখছি না। যেহেতু দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে তাই তাপমাত্রা এখন কমবে। গতকাল ভোলায় ২ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, পূর্বাভাস অনুযায়ী ২৭ এপ্রিলের পর ঢাকায় বৃষ্টিপাতের কথা থাকলেও আজ ( শুক্রবার) দু’এক জায়গায় বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ ছাড়া অন্যান্য অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর এপ্রিল মাসে সাধারণত দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয় ১৪৭ মিলিমিটার। কিন্তু এবার গত ২০ দিনে সারা দেশে গড় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে মাত্র ৬২ মিলিমিটার। ফলে সারাদেশে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, অবশেষে বহুপ্রতিক্ষিত বৃষ্টি হয়েছে মুন্সীগঞ্জে। এতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে মুন্সীগঞ্জবাসী। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় অতিষ্ট ছিলো এ জনপদের মানুষ। প্রচণ্ড তাপদাহে মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ব্যাহত হয়। ডায়েরিয়া নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়া ছাড়াও কৃষকরা কোন ফসল রোপণ করতে পারেনি কৃষি জমিতে। শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে ১ ঘন্টাব্যাপি এই কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টিতে সকলের মুখে হাসি ফুটেছে। এর আগে প্রচণ্ড তাপধাহে অতিষ্ট মানুষ শুক্রবার জুমার নামাজের পরে মসজিদে মসজিদে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিরা দোয়া করেন। সদর থানা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এহসানুল করিম জানান, বৃষ্টি হওয়ার কারণে ডায়েরিয়া নিউমোনিয়া ও চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব কমে আসবে। টঙ্গিবাড়ীর কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, গত দুই মাস আগে আলু উত্তোলন করেও বৃষ্টি না হওয়ার কারণে অন্য কোন ফসল ফলানো সম্ভব হয়নি।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গতকাল শুক্রবার বিকালে নারায়ণগঞ্জে দেখা মিললো বৃষ্টির। শুধু বৃষ্টিই নয়, সাথে ঝড়ো হাওয়া আর শিলাও ছিল। জেলার সদর উপজেলার ফতুল্লা, আড়াইহাজার, সোনারগাঁও, বন্দর উপজেলায় ঝড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টির খরব পাওয়া গেছে। কিন্তু সেখানে শিলাবৃষ্টি না হওয়ায় ফসলের কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। তবে রূপগঞ্জ উপজেলা ও সিদ্ধিরগঞ্জে বৃষ্টি হয়নি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গতকাল শুক্রবার বিকালে দমকা হাওয়ার সাথে শিলা বৃষ্টি হয়েছে। শিলা বৃষ্টিতে কোন ফসলহানি হয়নি বলেও জানা যায়। তবে অনেকদিন পর বৃষ্টি হওয়ার কারণে গরমের তীব্রতা ও অস্বস্তিকর অবস্থা কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে বলে জানান সাধারণ মানুষ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা শহর ছাড়াও সরাইল, আশুগঞ্জ, নবীনগর, নাসিরনগর ও আখাউড়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় দমকা হাওয়ার সাথে শিলাবৃষ্টি হয়েছে।

শেয়ার করুন