মোদির সমালোচনার জবাব দিতেই প্রিয়াঙ্কাকে মাঠে নামিয়েছে কংগ্রেস

0
123
Print Friendly, PDF & Email

ভারতে লোকসভা নির্বাচনের ছয়টি পর্ব ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি আছে আর তিনটি পর্ব। নির্বাচনের প্রায় শেষ পর্যায়ে এসে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস নেতারা দলের পক্ষে প্রচারণায় নামিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে। বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদি গান্ধী পরিবার ও প্রিয়াঙ্কার স্বামী রবার্ট ভদ্রের কঠোর সমালোচনা করে এত দিন ধরে যে বক্তব্য দিয়ে আসছেন তার উপযুক্ত জবাব দিতেই শেষ পর্যন্ত প্রিয়াঙ্কাকে মাঠে নামিয়েছে কংগ্রেস। অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সমালোচনা করে এতদিন ধরে নরেন্দ্র মোদি বিভিন্ন জনসভায় যে বক্তব্য দিচ্ছেন তার জবাব দিতে শুরু করেছেন মনমোহন সিং। তিনি বলেছেন, দেশে মোদি ঢেউ বলে কোনো কিছু তৈরি হয়নি। খবর পিটিআই, টিএনএন, এনডিটিভি, আনন্দবাজার, আজকাল ও অন্যান্য ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের।
মোদির সমালোচনায় প্রিয়াঙ্কা
 লোকসভার তিন দফার ভোট এখনো বাকি। তার আগেই বিশেষজ্ঞদের অনেকে যখন সরকার গঠনের দৌড়ে বিজেপিকে এগিয়ে রাখছেন, তখন প্রচারের প্রায় শেষ ধাপে পৌঁছে রণকৌশল পাল্টাল কংগ্রেস। প্রচারের মুখ্য মঞ্চে তুলে আনা হলো প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে।
প্রিয়াঙ্কার প্রচারের আলোয় রাহুল ঢাকা পড়ে যাবেন, সেই আশঙ্কায় গোড়ার দিকে প্রিয়াঙ্কাকে প্রচারে নামাতে চাননি দলের নেতারা। কিন্তু এখন তাদের অনেকে মনে করছেন, মোদির বিরুদ্ধে প্রিয়াঙ্কার আক্রমণের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। তিনি প্রচারে যখনই নেমেছেন, আলো কেড়েছেন। আর প্রিয়াঙ্কার মধ্যে ইন্দিরা গান্ধীর ছায়া তো দেখেন অনেকেই। তাই দেরিতে হলেও মোদিকে রুখতে প্রচারের মূল মঞ্চে আনা হয়েছে প্রিয়ঙ্কাকে।
দ্বিতীয়ত, সরাসরি মোদিকে আক্রমণ করার ব্যাপারে দ্বিমত ছিল কংগ্রেসে। রাহুলকে ‘শাহজাদা’ বলে মোদি যখন কটা করছিলেন, তখন রাজনৈতিক আক্রমণে সৌজন্য দেখাতে গিয়ে মোদির সমালোচনা করেননি সোনিয়া-রাহুল। কিন্তু দলের হাইকমান্ডই এখন মনে করছে, মোদিকে জবাব দিতে হবে তারই ভাষায়। বস্তুত মোদি যেমন প্রতিটি আক্রমণের জবাব মুহূর্তের মধ্যেই দিচ্ছেন, কংগ্রেসেরও গোড়া থেকে একই মনোভাব নেয়া উচিত ছিল বলে মনে করছেন তারা।
প্রিয়াঙ্কার সক্রিয় হয়ে ওঠার বিষয়টি নজর এড়ায়নি বিরোধী শিবিরেও। তারা বলছেন, রাহুলকে দিয়ে কাজ হচ্ছে না বুঝেই প্রিয়াঙ্কাকে প্রচারে নামিয়েছে কংগ্রেসকে। তবে সেই সমালোচনা খারিজ করে কংগ্রেস হাইকমান্ড বলছে, প্রিয়াঙ্কা প্রচারণায় নামলে দলের যে ভালো হবে, তা রাহুল জানেন। তাই তিনিই মোদির বিরুদ্ধে আক্রমণ তীব্রতর করার জন্য প্রিয়াঙ্কাকে পরামর্শ দিয়েছেন। আবার প্রিয়াঙ্কাও জানেন, তিনি অমেথি-রায়বেরেলির বাইরে গিয়ে প্রচার করলে রাহুলের তি হবে। তাই দাদা ও মায়ের লোকসভা কেন্দ্র থেকেই তিনি মোদিবিরোধী বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন গোটা দেশে।
দেশে কোনো মোদি-ঢেউ নেই : মনমোহন
প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে দিনকয়েক আগেই ‘মৌনিমোহন’ বলে সমালোচনা করেছিলেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদি। বৃহস্পতিবার আসামের দিসপুরে নিজের ভোট দিয়েই মোদিকে পাল্টা আক্রমণ করলেন মনমোহন সিং। এ দিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে মোদি-ঢেউ বলে কিছু আছে এমনটা তিনি আদৌ মনে করেন না। এটা (মোদি-ঢেউ) আসলে সংবাদমাধ্যমের তৈরি।’
গত জানুয়ারিতে নিজের স্বভাববিরুদ্ধভাবেই মোদির সমালোচনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছিলেন, ‘নরেন্দ্র মোদির মতো মানুষ প্রধানমন্ত্রী হলে, তা হবে দেশের পে মারাত্মক তিকর।’ গুজরাটে দাঙ্গার জন্য সরাসরি সে দিন মোদিকেই কাঠগড়ায় তুলেছিলেন তিনি। তবে লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু হওয়ার পর মনমোহন হয়েছিলেন বিরোধীদের আক্রমণের লক্ষ্য। সম্প্রতি তার সাবেক উপদেষ্টার লেখা দু’টি বই ঘিরে তাকে ক্রমাগত সমালোচনায় বিদ্ধ করছিল বিজেপি। এত দিন চুপচাপ থাকলেও, বৃহস্পতিবার মুখ খোলেন মনমোহন।
শুধু মনমোহনই নন, এ দিন মোদির সমালোচনা করেছেন সোনিয়া গান্ধীও। বৃহস্পতিবার মোদির রাজ্য গুজরাটে দাঁড়িয়েই সোনিয়া বলেছেন, ‘দুর্নীতির সব সীমা ছাড়িয়েছে বিজেপি। অথচ, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ এনেই চলেছে।’ ভালসাদের জনসভায় দাঁড়িয়ে কংগ্রেস সভানেত্রীর প্রশ্নÑ ‘বিজেপি শাসিত কোনো রাজ্যে দুর্নীতিবিরোধী নির্দিষ্ট আইন রয়েছে কি?’ মোদির উন্নয়নের দাবি খারিজ করে দিয়ে সোনিয়া বলেন, ‘দিনে মাত্র ১১ টাকা আয় হলেই সেই ব্যক্তি গুজরাট সরকারের চোখে আর দরিদ্র নন। আপনারাই বলুন, এটা কি ঠিক? মনে রাখবেন, দরিদ্রদের সাথে ওদের কোনো সম্পর্কই নেই।’ তার সংযোজন, ‘বিজেপি এমন একটা প্রচার করছে যেন ওরা মতায় এলে ভারতে স্বর্গ নেমে আসবে বাস্তব কিন্তু ঠিক উল্টো কথাই বলছে।’
মনমোহন সশস্ত্র বাহিনীকে দুর্বল করেছেন : বিজেপি
ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান ও উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ আসনে বিজেপির প্রার্থী ভি কে সিং বলেছেন, মনমোহন সিংয়ের সরকার গত দশ বছরে দেশের সশস্ত্র বাহিনীকে দুর্বল করেছে। রাজ্যের আমেথি আসনে বিজেপির প্রার্থী স্মৃতি ইরানির পে প্রচারণা চালাতে এসে ভি কে সিং এ মন্তব্য করেন। এই আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী দলটির ভাইস প্রেসিডেন্ট রাহুল গান্ধী।
এ দিকে বিজেপির সভাপতি রাজনাথ সিং গত বৃহস্পতিবার গুজরাটের খেদা জেলার কাথাল শহরে বলেছেন, ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ না করে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী দেশের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। ওই নির্বাচনে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করা সত্ত্বেও সোনিয়া প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহণ না করে মনমোহন সিংকে প্রধানমন্ত্রী করেন।
মুসলিম দলগুলোর পছন্দের প্রার্থী
লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদি মুসলমানদের বিরুদ্ধে সরাসরি আক্রমণ না করলেও বিজেপির অন্য নেতারা ও সঙ্ঘ পরিবার যেভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছে তাতে ভারতের জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ যে আতঙ্কিত তা মুসলিম দলগুলোর মনোভাব থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। আর তাই জামায়াতে ইসলামি হিন্দ সাম্প্রদায়িক ও ফ্যাসিস্ট শক্তিকে পরাস্ত করতে দেশজুড়ে তাদের পছন্দের তালিকা প্রকাশ করেছে। মুসলিম ভোটকে এক জায়গায় জড়ো করার উদ্দেশ্য নিয়েই এই তালিকা ঘোষণা করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিজেপি বাদে আম আদমি পার্টি, সমাজবাদী পার্টি, বহুজন সমাজ পার্টি, রাষ্ট্রীয় জনতা দল, সংযুক্ত জনতা দল, এনসিপি, তৃণমূল কংগ্রেস এবং বামদলগুলোসহ সব দলই মুসলিম দলগুলোর পছন্দের তালিকায় রয়েছে। অন্য দিকে জামায়াতে উলেমা-ই হিন্দের প থেকে কোনো তালিকা প্রকাশ না করা হলেও ধর্মনিরপে প্রার্থীকেই ভোট দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এই দলের এক নেতা বলেছেন, আমরা সেই প্রার্থীদের ভোট দেয়ার আবেদন জানিয়েছি, যারা ধর্মনিরপে এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রায় কাজ করবে। এই দু’টি ঘোষণা নিয়ে প্রবল আগ্রহও তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে। দু’টি দলেরই সারা দেশে বিস্তৃত রয়েছে সংগঠন। ভারতে মোট জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ১৫ কোটি। অর্থাৎ প্রায় ১৩.৪ শতাংশ।
ভোট বর্জন
সেতু তৈরির দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ না হওয়ায় জঙ্গিপুরের বসন্তপুর গ্রামের ১১৯৫ ভোটার বৃহস্পতিবার ভোট দিলেন না। এই লোকসভা কেন্দ্রেরই ঝিল্লি গ্রামের রায়পুর বুথের ৩৯৭ ভোটারও ভোট দিতে আসেননি। রায়পুরে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র না হওয়ায় এই প্রতিবাদ। উত্তর দিনাজপুর ও মালদহের কিছু ভোটারও পরিকাঠামোগত উন্নয়নের দাবিতে ভোট বয়কট করেছেন।

শেয়ার করুন