প্রকল্প ২০১৩ সালে শেষ কাজ হয়েছে ২৫ ভাগ

0
198
Print Friendly, PDF & Email

যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে নেয়া আলোচিত ছয়টি চার লেন প্রকল্পের মধ্যে দু’টির কাজ কাগজে-কলমে ২০১৩ সালে শেষ হয়ে গেছে। তবে বাস্তবে কাজ হয়েছে গড়ে ২৫ ভাগ। সময় মতো কাজ শেষ না হওয়ায় এসব প্রকল্পের ব্যয় ইতোমধ্যে প্রায় দুই হাজার ১৮৮ কোটি টাকা বেড়ে গেছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ প্রকল্পগুলোর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চারলেন প্রকল্পের গড় অগ্রগতি প্রায় ২৫ ভাগ। অপরিকল্পিতভাবে সড়কগুলো চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ হওয়ার কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এ সড়কগুলোতে বেড়েছে জনভোগান্তি। সড়কের বিভিন্ন স্থানে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে আসন্ন বর্ষা মওসুমে এ ভোগান্তি আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে এ দুই মহাসড়কে তিন ঘণ্টার যাত্রায় সময় ব্যয় হচ্ছে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা। এভাবে ঢিমেতালে কাজ চলতে থাকলে আসন্ন বর্ষা মওসুমে সময় নেবে সাত থেকে আট ঘণ্টাÑ জানালেন যাত্রীরা। তারা জানান, এ দুই প্রধান মহাসড়কে মাঝে মধ্যে গর্ত দেখা দেয়। মাঝে-মধ্যে বালু-সুরকি ফেলে যাতায়াত উপযোগী করা হলেও দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে আবারো আগের চেহারায় ফিরে যায়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পে মোট বরাদ্দ তিন হাজার ১৯০ কোটি টাকা। ২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় দুই হাজার ১৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। ২০১০ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। গত সাত বছরেরও বেশি সময়ে দুই দফায় ব্যয় বেড়েছে এক হাজার ২২ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় সড়ক ও সেতু নির্মাণ প্যাকেজে ১৯২ দশমিক ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ প্রকল্পে মোট বরাদ্দের অর্থ থেকে ব্যয় হয়েছে এক হাজার ১২১ কোটি ৯৬ হাজার টাকা। এর আগে ২০১০ সালে প্রকল্প ব্যয় এক দফা বাড়ানো হয়। সে সময় ২১৫ কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পের ব্যয় ঠিক করা হয় দুই হাজার ৩৮২ কোটি টাকা। ২০১১ সালে দ্বিতীয় দফায় প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়। যুক্তি হিসেবে নির্মাণসামগ্রীর দাম ও নকশায় কিছুটা পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। ওই মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এ প্রকল্পে সড়ক উন্নয়নের পাশাপাশি ৪৬৩ মিটারের তিনটি ফাইওভার, ৩৩ মিটারের দু’টি আন্ডারপাস, ৩৩টি স্টিল ফুট ওভার ব্রিজ ও ৬১টি বাসস্টপ স্থাপন হওয়ার কথা।
২০০৬ সালের জানুয়ারিতে অনুমোদিত প্রকল্পটির (দাউদকান্দি টোল প্লাজা থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত) কাজ শুরু হয় ২০১০ সালের জানুয়ারিতে। প্রকল্পের সম্ভাব্য শেষ হওয়ার তারিখ দেখানো হয়েছে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর। বাংলাদেশ সরকার ও জাপানের জেডিসিএফের অর্থায়নে এ প্রকল্পের কাজ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। ২০০৫-৬ অর্থবছরে এ প্রকল্পে ব্যয় হয় ৭৪ লাখ টাকা, ২০০৬-৭ সালে চার কোটি ৭৩ লাখ ৪২ হাজার টাকা, ২০০৭-৮ সালে দুই কোটি ৬৪ লাখ ৩৪ হাজার টাকা, ২০০৮-৯ সালে ২২ কোটি ৩৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা, ২০০৯-১০ সালে ১৯৫ কোটি ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার টাকা, ২০১০-১১ সালে ১০১ কোটি ২৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা ও ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৫৭ কোটি ১২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৩ তে এ প্রকল্পে বরাদ্দ দেখানো হয়েছে ১৭৫ কোটি টাকা।
কর্মকর্তারা জানান, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে রাজধানী ঢাকার সাথে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মধ্যে যোগাযোগব্যবস্থার পর্যাপ্ত উন্নয়ন হবে। যানজট, যাতায়াত সময় ও সর্বোপরি সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে। এ প্রকল্পের অগ্রগতি না হওয়া প্রসঙ্গে কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা ছিল; একাধিক মামলার কারণে কাজ থেমে ছিল। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মূলত সমন্বয়হীনতা, বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অদতা ও উদাসীনতার জন্যই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
২০১০ সালের জুলাইয়ে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। প্রথমে এ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ৯৯২ কোটি ১০ লাখ পাঁচ হাজার টাকা। কাগজে-কলমে ২০১৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। পরবর্তী সময়ে মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়ে এ প্রকল্পের বরাদ্দ ধরা হয় এক হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে ব্যয় বেড়েছে ৮২৩ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের আওতায় জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ৮৭ দশমিক ১৭ কিলোমিটার বিদ্যমান দুই লেনকে চার লেনে উন্নীত করার কথা। এ ছাড়া ৪১১ মিটারের পাঁচটি ব্রিজ, ৪৫০ মিটারের একটি ফাইওভার ৯৮টি কালভার্ট নির্মাণের কথা। ২০১০-১১ অর্থবছরে এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৮৯ কোটি ৬৭ লাখ ৯৩ হাজার টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে ২৫০ কোটি এক লাখ ২৫ হাজার টাকা, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৬৪৪ কোটি ৪৮ লাখ ৮৬ হাজার টাকা ও ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে সাত কোটি ৯১ লাখ ৫১ হাজার টাকা। চলতি বছরে বরাদ্দ ১২৪ কোটি টাকা।
এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী-কাঁচপুর সড়ক আট লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের অগ্রগতি গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার দশমিক ৫৭ শতাংশ। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১২০ কোটি ২৭ লাখ টাকা। ২০১১ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পের কাজ ২০১৩ তে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তব অগ্রগতির বেহাল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এর মেয়াদকাল চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে কি না এ নিয়ে খোদ যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু অ্যাপ্রোচ সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের গতি নেই বললেই চলে। ২০১০ সালে শুরু এ প্রকল্পের ব্যয় ইতোমধ্যে একবার বাড়ানো হয়েছে। সময় বাড়িয়ে বাস্তবায়নের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে ২০১৪ সাল পর্যন্ত। প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোর পর দাঁড়িয়েছে ১৫৩ কোটি ৭০ লাখ টাকায়।
অন্য দিকে ব্যয় বাড়লেও জয়দেবপুর চৌরাস্তা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা চার লেন সড়কের কাজ শুরুই হয়নি বলে জানান কর্মকর্তারা। এ প্রকল্পটির অনুমোদন দেয়া হয় গত বছরের এপ্রিলে। মোট ব্যয় ধরা হয় দুই হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। তবে নকশাগত ত্রুটি সংশোধনের নামে কাজ শুরুর আগেই প্রকল্পে আরো ২৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়। এতে তিনটি দাতা সংস্থাÑ এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), আবুধাবি ফান্ড ও ওপেক ফান্ড এক হাজার ৮৪৩ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ২০১৮ সালের মার্চের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার টার্গেট থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজই শুরু হয়নি।
কর্মকর্তারা জানান, নবীনগর-ডিইপিজেড-চন্দ্রা সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ অসমাপ্ত রেখেই ইতোমধ্যে এর উদ্বোধন করা হয়েছে। নির্দিষ্ট বরাদ্দ থেকে কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় এ প্রকল্পেও ৬৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়। এর ফলে প্রাক্কলিত ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৩০ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। উপকরণের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে এ ব্যয় বাড়ানো হয়েছিল। ২০১৩ সালের জুনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল।

শেয়ার করুন