পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘যেহেতু আমি এই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলাম, সে কারণে আমি জানি মন্ত্রণালয়ের কোথায় কোন কাজ কীভাবে হয়। সুতরাং এবার একই মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি হওয়ায় বরং আমার সুবিধাই হয়েছে। সংসদীয় কমিটি কোনো সুপারিশ করলে মন্ত্রণালয়ের সেটি অবহেলা করা সহজ হবে না।’ গতকাল মঙ্গলবার বিকালে জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির প্রথম বৈঠক শেষে সংসদের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিগত মহাজোট সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রী হাছান মাহমুদের কাছে এক সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, ‘আপনি তো আগে এই মন্ত্রণালয়েরই মন্ত্রী ছিলেন, এবার ওই মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি হয়েছেন। আগে দেখা যেত, সংসদীয় কমিটি অনেক সুপারিশ করলেও মন্ত্রণালয় সেগুলোর বেশিরভাগই বাস্তবায়ন করতো না, তখন আপনিও মন্ত্রী ছিলেন। এবার আপনার ক্ষেত্রেও কী তাই হবে?’ এই প্রশ্নের জবাবেই উপরোক্ত মন্তব্য করেন সাবেক এই পরিবেশ ও বন মন্ত্রী।
হাছান মাহমুদ বলেন, আজকে (মঙ্গলবার) যেহেতু প্রথম বৈঠক, সে কারণে এটি মূলত পরিচিতিমূলক সভা ছিল। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে সংসদীয় কমিটিকে অবহিত করা হয়েছে। বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে যে সুপারিশটি গৃহীত হয়েছে সেটি হল, পলিথিনের বিরুদ্ধে কার্যকর অভিযান পরিচালনা জোরদারের জন্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করা। বাংলাদেশে এখন এমন অনেক পলিথিন ব্যবহার হচ্ছে যেগুলো নিষিদ্ধ নয়, তবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। যেমন- চানাচুর, মুড়ি, বিস্কুটসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য প্যাকেটজাতকরণে যে পলিথিন ব্যবহূত হচ্ছে সেগুলো। যখন পলিথিনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়, তখন পলিথিনের মোড়কজাত পণ্য এভাবে বাজারে ছিল না। এখন ব্যাপকহারে সেটি ব্যবহার হচ্ছে। যা পরিবেশের ক্ষতি করছে। সে কারণে আমি যখন এই মন্ত্রণালয়ে ছিলাম, তখন এসব পণ্যের পলিথিনের মোড়ক রিসাইক্লিংকরণ বা পুনঃচক্রকরণের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। যদিও বাংলাদেশে এ কাজটি খুব ব্যয়বহুল, তারপরেও পরিবেশের স্বার্থে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। আজকের বৈঠকে আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। মন্ত্রণালয় কমিটিকে জানিয়েছে, প্রকল্পটি এখনও চালু হয়নি। কমিটির পক্ষ থেকে প্রকল্পটি দ্রুত চালুর জন্য মন্ত্রণালয়কে তাগিদ দেয়া হয়েছে। কমিটি সভাপতি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, একসময় খাবার পানির বোতল যত্রতত্র পড়ে থাকতো। এখন সেগুলো পুনঃচক্রকরণে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তনে পরিবেশ রক্ষায় গৃহীত কার্যক্রম নিয়েও আলোচনা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিরূপ প্রভাবের শিকার উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে আমরা বিগত সময়ে চেয়ার (সভাপতিত্ব) করেছি। নেতৃত্বের সেই আসনটি যেন আমরা ধরে রাখতে পারি, সেজন্যও মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।’
এদিকে সংসদ সচিবালয়ের গণসংযোগ শাখা থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সংসদীয় কমিটির বৈঠকে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ রেজিলিয়েন্স ফান্ড (বিসিসিআরএফ)’ বিষয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন এবং বিস্তারিত আলোচনা হয়। বাংলাদেশে বিসিসিআরএফ- এর সচিবালয় স্থাপন এবং সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম পরিচালনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিটি সুপারিশ করে। বিসিসিআরএফ প্রজেক্টের বিভিন্ন কার্যক্রম সংসদীয় কমিটিকে অবহিতকরণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শও দেয়া হয়।
হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য- পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, আব্দুর রহমান, নবী নেওয়াজ, ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী, টিপু সুলতান, মজিবুর রহমান চৌধুরী ও মেরিনা রহমান অংশ নেন। বৈঠকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারীসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মকর্তা এবং সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।