দশম সংসদ নির্বাচনের ব্যয় বিবরণী জমা না দেওয়াদের মধ্যে আছেন সরকারের অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রী সংসদ সদস্যরা। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, যারা সময় মতো সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে নির্বাচনের ব্যয় বিবরণী জমা দেননি তাদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং মামলার অগ্রগতি জানাতে রিটানিং কর্মকর্তাদের সময় বেধে দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত একটি চিঠি রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে পাঠায় ইসি।
ইসি সূত্র জানায়, ২৩ এপ্রিলের মধ্যে কারা হিসাব জমা দেননি, তার তালিকা ও ৩০ এপ্রিলের মধ্যে কাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে তার তালিকাও জমা দিতে রিটানিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে ইসি।
সূত্র মতে, সরকারি দলের একাধিক অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা ও মন্ত্রীরা ব্যয় বিবরণী জমা না দেওয়াদের তালিকায় রয়েছেন।
অন্যদিকে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী ইসির ওয়েবসাইটে প্রকাশের বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও তা প্রকাশ না করায় ইসি সচিবালয়ের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
নিদিষ্ট সময়ে হিসাব জমা দেওয়ার তালিকায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দশম সংসদ নির্বাচনে রংপুর-৬ ও গোপালগঞ্জ-৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রায় দশ লাখ টাকা নির্বাচনী ব্যয় করেছেন। তবে অন্তত ৪০ লাখ টাকা নির্বাচনী ব্যয় করার সুযোগ ছিল। তিনি নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগের দিনই এ হিসাব দিয়েছেন বলে ইসি সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মধ্যে নির্দিষ্ট সময়ে যারা ব্যয়ের হিসাব জমা দেননি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা, সঠিক সময়ের মধ্যে কতোজন ব্যয়ের রিটার্ন জমা দিয়েছেন এবং না দেওয়ায় কতো জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বা হচ্ছে, তাদের তালিকা পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে রিটার্নিং অফিসারদের চিঠি দিয়েছে কমিশন। ইসির সিনিয়র সহকারী সচিব মিজানুর রহমান এ চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘আরপিও’র ৪৪ এর সি ধারা অনুযায়ী নির্বাচিত ব্যক্তিদের নামে গেজেট প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে প্রার্থী বা তার এজেন্ট নির্ধারিত ফরমে ব্যয়ের রিটার্ন জমা না দিয়ে থাকলে সে সকল প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে দ্রুত কমিশনকে অবহিত করতে হবে’।
একই সঙ্গে যে সকল প্রার্থীরা সঠিক সময়ে ব্যয়ের হিসাব দাখিল করেছেন তাদের সম্পূর্ণ তথ্য পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে ইসি। ওই চিঠিতে নির্দিষ্ট সময়ে কতোজন এমপি তাদের ব্যয়ের রিটার্ন জমা দিয়েছেন, কারা দেননি এবং আইন অমান্য করায় কতোজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তারও তথ্য চাওয়া হয়েছে। গেজেট প্রকাশের হিসাব অনুযায়ী, গত ৭ ফেব্রুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সকল প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয়ের রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। নির্বাচনের পরপরই সকল প্রার্থীকে নোটিশ দিয়ে ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের উপ-সচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ জানান, ৮ জানুয়ারি নির্বাচিতদের গেজেট প্রকাশ করায় ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ব্যয় রিটার্ন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে ও ইসিতে এফিডেভিটের অনুলিপি জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল।
তিনি জানান, নির্বাচনে জয়ী, পরাজিত ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদেরও হিসাব দেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। নির্ধারিত সময় এক মাসের মধ্যে ব্যয়ের হিসাব দাখিল করতে ব্যর্থ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, এ সংক্রান্ত বিধান লঙ্ঘনে ২ থেকে ৭ বছরের কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন সংশ্লিষ্টরা।