যেমন আছে রেশমার পরিবার!

0
605
Print Friendly, PDF & Email

ইট ভাঙছেন জোবেদা খাতুন। স্বপ্ন নিজের একটা ভালো বাড়ি গড়ার। তাই নিজের ঘর তৈরির ইট নিজেই ভাঙছেন জোবেদা। এতে একদিকে অলস সময় কাটছে। অন্যদিকে খরচ কমছে জোবেদার স্বপ্নের বাড়ি তোলার।

এই জোবেদা খাতুন আর অন্য কেউ নয়, এক সময়ের আলোচিত সাভারের রানা প্লাজা ট্রাজেডির মৃত্যুঞ্জয়ী রেশমার মা। সাভারের রানা প্লাজার ধ্বংস স্তুপ থেকে ১৭ দিন পর উদ্ধারের পর যে রেশমা আলোচিত হয়েছেন বিশ্বজুড়ে। এই রেশমার গ্রামের বাড়ী দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের কোশিগাড়ীতে এখন বাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত রেশমার মা। ইতোমধ্যে দু’টো পাকা ঘর তুলেছেন। আরো তিনটি পাকা ঘর তৈরির প্রস্তুতি চলছে। এ কারণেই বাড়িতে বসে ইট ভাঙছেন রেশমার মা।

পহেলা বৈশাখের দিনে গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে এসেছিলেন রেশমা। ছিলেন দুদিন, দুই রাত্রী। তার খালুর দাফন ও দোয়া মাহফিলে শরিক হতে এসেছিলেন। প্রায় ৪ মাস পর গ্রামের বাড়িতে এসেছিলো রেশমা।

রেশমা ঢাকায় যাওয়ার সময় ৩ হাজার টাকা দিয়ে যান মায়ের কাছে।

মা জোবেদা জানান, নতুন ঘর তোলার জন্য ফাঁকা জায়গায় মাটি ভরাট এবং বালু কেনার জন্য ওই টাকা দিয়েছে রেশমা। এছাড়া প্রতিমাসে ২ থেকে ৪ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে মায়ের কাছে পাঠায় রেশমা।

সরকারিভাবে প্রাপ্ত ৫০ হাজার, রানা প্লাজার ৫০ হাজার এবং বাড়ির জমি সংক্রান্ত বিরোধের সমঝোতায় এক ব্যক্তির কাছে প্রাপ্ত ৫০ হাজার এই মোট দেড় লাখ টাকায় ২টি পাকা ঘর তুলেছেন রেশমার মা। আরো ৩টি ঘর তোলার প্রস্তুতি চলছে।

এদিকে রেশমার বাড়ির সামনের মহাসড়কের ধারে স্থান পেয়েছে মৃতুঞ্জয়ী রেশমার ছবি সম্মিলিত বিশাল সাইন বোর্ড।

ঘোড়াঘাট উপজেলার  ৩ নং সিংড়া ইউনিয়নের কোশিগাড়ী গ্রামের কৃষক মৃত আনসার আলী ও গৃহিনী জোবেদা খাতুনের ২ ছেলে ৩ মেয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট রেশমা (২০)। বিয়ের পর স্বামী আব্দুর রাজ্জাক, মা জোবেদা, ভাই জয়েদুল, সাদেক ও মোঝো বোন আসমাসহ ৪ বছর ধরে রেশমা অবস্থান করছে ঢাকায়।

রেশমার মা জোবেদা তার সম্পর্কের এক নাতি আরজন আলীকে বিয়ে করেন। রেশমা স্বামীর সাথে পৃথক হওয়ার পর ৪ মাস আগ থেকে সাভারের রানা প্লাজার একটি গার্মেন্টেসে কাজ শুরু করে।

২০১৩ সালের এপ্রিলে সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন রেশমা। তাকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিল তার পরিবারের লোকজন। পরে প্রায় ১৭ দিন পর রেশমাকে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়।

এদিকে স্থানীয় সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম আকাশ বলেন, “রেশমা সারা বিশ্বে স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু রেশমার জন্মস্থান দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে এখনো তেমন কোনো স্মৃতি স্থাপনা নির্মাণ হয়নি। যা দেখে আমরা গর্ব করবো। রেশমার উন্নয়ন হলেও তার পরিবার এখনো বেহাল দশায় জীবনযাপন করছে।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা চাই রেশমার পরিবারেরও উন্নয়ন হোক। রেশমার বড় ভাই জাহিদুল এখন ফেরি করে বারো ভাজা বিক্রি করছে। ছোট ভাই সাদেক ঢাকায় রিকশা চালাচ্ছে। রেশমার পালিত বাবা আরজন আলী খাবার হোটেলে শ্রমিকের কাজ করছে। তাদের অবস্থার উন্নতি হলে আমরা স্বার্থক হতাম।”

এদিকে রেশমার পালিত বাবা আরজন আলী জানায়, তাদের বাড়ির সামনে এক ব্যক্তি একটি ক্লিনিক তৈরি করছে। ক্লিনিকের প্রাচীর তাদের জায়গায় ঢুকে যাওয়ায় স্থানীয় সমঝোতা বৈঠকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে তাদের। ওই টাকা দিয়েই তারা আরো পাকা ঘর তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছে।

শেয়ার করুন