পদোন্নতি হচ্ছে না সহসাই, প্রশাসনে ক্ষোভ

0
166
Print Friendly, PDF & Email

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় যোগ্য ও মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার কথা বলা হলেও অনিয়মের কারণে বঞ্চিত হয়েছেন খোদ সরকার দল সমর্থিত শতাধিক কর্মকর্তা। আর এ নিয়ে চরম অসন্তোষ, হতাশা ও ক্ষোভ এখন বঞ্চিতদের মধ্যে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, যোগ্য ব্যক্তিদের দু’একজন আগে পদোন্নতিতে বাদ পড়তে পারেন। তবে যোগ্য ব্যক্তিরা পদোন্নতি পাবেন। যোগ্য ছাড়া আর কাউকে পদোন্নতি দেওয়া হবে না।

যুগ্ম সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব এবং সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপ-সচিব পদে পদোন্নতির অপেক্ষায় থাকা প্রায় ৩ শতাধিক কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে না।

পদোন্নতি বঞ্চিতদের অভিযোগ, সরকারি চাকরিজীবীদের যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতিতে প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছা থাকলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী যোগ্য ব্যক্তি অনেকেই বঞ্চিত হয়েছেন। আবার বিএনপি-জামায়াতপন্থি অনেকেই পদোন্নতি পেয়েছেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে। কয়েক দফা পদোন্নতিতে জ্যেষ্ঠ না হয়েও এবং দুর্নীতির অভিযোগে বিভাগীয় মামলা থাকার পরও অনেকে পদোন্নতি পেয়ে পুরষ্কৃত হয়েছেন।

বঞ্চিতদের দাবি, প্রশাসনের শক্তিশালী একটি প্রভাব বলয় ও তাদের সমর্থিতদের তদবিরবাজির জন্য অনেকেই পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন আগে। কেউ কেউ ভারপ্রাপ্ত সচিব হলেও একই ব্যাচের কারো কারো ভাগ্যে এখনও জোটেনি যুগ্ম সচিবের পদমর্যযাদা। আর পদোন্নতি না পেয়ে মনোয়ার হোসেন নামের এক যুগ্ম সচিব আত্মহত্যা করেছেন এমন অভিযোগ উঠেছিল আগেই।

তাদের মতে, মাস্টারদা সূর্য সেনের নাতনি এবং ক্যাডার সার্ভিসের একমাত্র মহিলা মুক্তিযোদ্ধা হয়েও যোগ্য নারী কর্মকর্তা ড. রীতা সেনের পদোন্নতি হয়নি। বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদনের (এসিআর) ফলাফল ভালো থাকলেও তাকে মূল্যায়ন করা হয়নি বিগত সময়ে। যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার এই কর্মকর্তাকে বর্তমানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে রাখা হয়েছে। আর অনেক কর্মকর্তা পদোন্নতির অপেক্ষা করতে করতে অবসরেও চলে গেছেন।

জানা গেছে, মাস্টারদা সূর্য সেনের নাতনি ক্যাডার সার্ভিসের একমাত্র নারী মুক্তিযোদ্ধা ড. রীতা সেন ছাড়াও বিরাশি ব্যাচের প্রায় ৭০ জনের মতো যুগ্ম সচিব পদোন্নতির অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে গোপালগঞ্জের মেয়ে কৌশল্যা রানী বাগচিও রয়েছেন। এছাড়া চন্দ্রনাথ বসাক, পরিমল চন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ রায়, অনন্ত কুমার চৌধুরী, রতন কুমার রায়, গাজী মিজানুর রহমান ও মুরাদ হোসেনসহ অন্যান্য যুগ্ম সচিবরা রয়েছেন পদোন্নতি বঞ্চিত হচ্ছেন।

অন্যদিকে পদোন্নতির অপেক্ষায় থেকে অবসরে গেছেন নিশিথ কুমার সরকার, সুকুমার চন্দ্র সাহা ও মো. ইউসুফসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বঞ্চিত একাধিক কর্মকর্তা জানান, এতো কিছুর পরেও যুগ্ম সচিব ও উপ-সচিব পদে প্রায় ৩ শতাধিক কর্মকর্তার পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঝুলে গেছে। সম্প্রতি সুপিরিয়ির সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভায় পদোন্নতি দিতে আলোচনা হলেও যুগ্ম সচিব ও উপ-সচিব পদে শিগরিই পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে না। তাদের আশঙ্কা, এবারও হয়তো প্রশাসনের শক্তিশালী কোনো প্রভাব বলয় আগের মতোই কাজ করছে কি-না। আর এ বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টাকেও কাজে লাগানো হতে পারে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ করেও প্রশাসনে আস্থাভাজন হতে পারেননি যুগ্ম সচিব পর্যায়ের শতাধিক কর্মকর্তা। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে নির্যাতন সহ্য করলেও প্রশাসন মূল্যায়ন করেনি তাদের। বিরাশি ব্যাচের প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন যুগ্ম সচিব পদোন্নতির এখনও অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের অনেকের এসিআর ফলাফল ভালো এবং দলের জন্যও তারা নিবেদিত।

অপরদিকে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা এবং অন্যান্য অভিযোগে বিভাগীয় মামলা থাকলেও অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে একই ব্যাচের একাধিক ব্যক্তিকে। তাদের মধ্যে নাছিমা বেগমকে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিবও করা হয়েছে। একই ব্যাচের কর্মকর্তা নাছিমা বেগমের স্বামী মো. ফয়জুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব করা হয়েছে। আর একই ব্যাচের উত্তম কুমার রায় এখনও উপ-সচিব হয়ে রয়েছেন বলে জানান ভুক্তভোগীরা।

উপ-সচিব হিসেবে পদোন্নতির অপেক্ষায় থাকা সিনিয়র সহকারী সচিবদের অনেকেই নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পদোন্নতির অপেক্ষায় রয়েছি। শুনেছি, পদোন্নতি দেওয়া হবে। তবে তা বিশেষ কোনো কারণে আটকে রয়েছে। কি কারণে আটকে রয়েছে জানার চেষ্টা করলে ফলাফল ভালো নাও হতে পারে। তাই কারণ জানতে চাই না- যোগ করেন এসব কর্মকর্তারা।

তারা আরও বলেন, সরকারের জন্য কাজ করি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য কাজ করেছি। ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আস্থাভাজন হতে পেরেছি কি-না তা জানি না।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কয়েক দফা পদোন্নতি দেওয়া হয় প্রশাসনে। গত বছরের ১৮ জুলাই লিয়েনসহ একদিনে ২২৪ জনকে যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এছাড়াও একাধিকবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে বিগত সরকারের সময়।

শেয়ার করুন