দেশে রাজনৈতিক সংকটের স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে সকল দলের অংশগ্রহণে দ্রুত একটি প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক’ (সুজন)। গতকাল রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে সংগঠনটির সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, যত তাড়াতাড়ি নির্বাচন হয় ততই মঙ্গল। ভবিষ্যতে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের বিকল্প নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে দশম জাতীয় সংসদের সদস্যদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, আর্থিক আয়, দায়-দেনা, মামলা, আয়কর ও পেশাগত বিষয়ে সকল ধরনের তথ্য তুলে ধরেন সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। সেখানে বলা হয়, দশম জাতীয় সংসদের ৩৫০ জন সদস্যের মধ্যে পেশাগত দিক দিয়ে আইনজীবীর চেয়ে তিন গুণেরও বেশি রয়েছেন ব্যবসায়ী। আইনজীবী রয়েছেন মাত্র ৫১ জন। আর ব্যবসায়ীর সংখ্যা ১৭৫ জন (৫০ শতাংশ)। অবশ্য ৩০০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে এই হার আরও বেশি (১৬৩ জন বা ৫৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ)।
সাংবাদিক সন্মেলনে জানানো হয়, আওয়ামী লীগের ২৭৩ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ব্যবসায়ী রয়েছেন ১৪২ জন, জাতীয় পার্টির ৪০ জনের মধ্যে ১৮ জন ব্যবসায়ী। শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ১২৮ জনের (৩৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি রয়েছে। স্নাতক ডিগ্রি রয়েছে ১৪৭ জনের (৪২ শতাংশ)। আর ১৫ জনের (৪ দশমিক ২৮শতাংশ) শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিকের নিচে। তবে সংসদ সদস্যদের অধিকাংশই (২৭৫ জন বা ৭৮দশমিক ৫৭ শতাংশ) স্নাতক বা স্নাতকোত্তর।
৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ৩১ জনের (৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ) বিরুদ্ধে বর্তমানে মামলা আছে, অতীতে মামলা ছিল ১৪৩ জনের (৪০ দশমিক ৮৫ শতাংশ) বিরুদ্ধে, অতীত ও বর্তমান উভয় সময়ে মামলা ছিল বা রয়েছে এমন প্রার্থীর সংখ্যা ২৩ জন (৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ)।
আয় সম্পর্কে বলা হয়, ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে বাত্সরিক ৫ লক্ষ টাকার কম আয় করেন ৮০ জন (২২ দশমিক ৮৫ শতাংশ)। সর্বোচ্চ ৩৫ দশমিক ৪২ শতাংশ (১২৪ জন) এর বাত্সরিক আয়সীমা ৫ লক্ষ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা। ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ৫ লক্ষ টাকার কম সম্পদের মালিক মাত্র ১২ জন (৩ দশমিক ৪২ শতাংশ)। তবে অধিকাংশ (২২৬ জন বা ৬৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ) সংসদ সদস্যরই সম্পদ কোটি টাকার উপরে। আওয়ামী লীগের ২৭৩ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে এই সংখ্যা ১৯৪ জন (৭১ দশমিক ০৬ শতাংশ), আর জাতীয় পার্টির ৪০ জনের মধ্যে ১৮ জন (৪৫ শতাংশ)। আর নারী সংসদ সদস্য বাদে ৩০০ জন সংদস্যর মধ্যে মোট করদাতা হলেন ২৫৮ জন। ১০৭ জন সংসদ সদস্য পাঁচ হাজার টাকা বা তার চেয়ে কম আয়কর দেন। ৩১ জন সংসদ সদস্য ১০ লাখ টাকার ওপরে আয়কর দেন।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘হলফনামার মহাসত্য হল এখানে মিথ্যা তথ্য রয়েছে। ইচ্ছা করেই এ কাজ করেছে রাজনীতিবিদরা। এর পিছনের সত্য উদঘাটন করতে হবে।’
সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, ‘৩০০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে ২৫৮ জন আয়কর প্রদান করলেও ৪২ জন আয়কর দেন না। অথচ বার্ষিক ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আয় করলেই আয়কর প্রদান করতে হয়। তাহলে কি আমরা ধরে নেব এদের কেউই ওই পরিমাণ টাকা আয় করেন না। কিন্তু এ তথ্য আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়।’