যুক্তরাষ্ট্রকে সবচেয়ে ঘৃণাকারী ৯ দেশ

0
135
Print Friendly, PDF & Email

আন্তর্জাতিক বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের গ্রহনযোগ্যতা দিন দিন বেড়ে চলার ধারাবাহিকতা বজায় ছিলো ২০১৩ সালেও। ২০১২ সালে পুরো বিশ্বে তাদের গ্রহনযোগ্যতা ছিলো ৪১ শতাংশ। ২০১৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৬ শতাংশে। অথচ ২০০৯ সালে এই হার ছিলো নিম্নমুখী।

তবে প্রদীপের নিচেও অন্ধকার থাকে। সারা বিশ্ব আমেরিকার দাদাগিরি মেনে নিলেও বেশকিছু দেশে ‘বিশ্বনেতা’ হিসেবে আমেরিকা খুবই অজনপ্রিয়। দেশগুলির মানুষ আমেরিকাকে রীতিমতো ঘৃণাই করে থাকে।

ইউএস গ্লোবাল লিডারশিপ প্রজেক্টের আওতায় একটি জরিপে উঠে এসেছে এমনই সব তথ্য। সেই জরিপ থেকেই আলাদা করা হয়েছে এমন ৯টি দেশ, যারা সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করে যুক্তরাষ্ট্রকে। পাঠকদের জন্য বিপরীত ক্রমানুসারে তুলে ধরা হলো দেশগুলির কথা।

জরিপটি চালিয়েছে যৌথভাবে মেরিডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ও গ্যালপ

৯। তিউনিশিয়া

অসমর্থনের হার ৫৪%

জিডিপি ৯,৪৪৭ মার্কিন ডলার

বেকারত্ব হার –

গড় আয়ু ৭৫ বছর

আরব বসন্ত শুরু হয়েছিল বেকার তিউনিশীয় যুবক বোয়াজিজির আত্মদানের পর থেকেই। জনগনের সরকারের প্রতি অনাস্থার মূল কারন ছিল বেকারত্তের হার, যা কিনা ২০১১ তে শতকরা ১৮ ভাগ পর্যন্ত উত্তীর্ণ হয়েছিল। ফলাফল বিন আলীর পতন।

বিন আলি পতনের পর যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার অর্থনৈতিক সাহায্য দেয় তিউনিশিয়াকে। এরপরও অধিকাংশ জনগণ যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের উপর বিরূপ ধারণা পোষণ করে।

৮। ইরান

অসমর্থনের হার ৫৬%

জিডিপি ১২,৮০৪ মার্কিন ডলার

বেকারত্ব হার ১৩.২%

গড় আয়ু ৭৩ বছর

বিগত বছর গুলোতে মার্কিনীদের সাথে ইরানের মূল সমস্যা ছিলো পরমাণু কর্মসূচী নিয়ে। তাদের সাথে কূটনীতিক সম্পর্ক নেই সেই ১৯৮০ থেকেই। দুই দেশের মাঝে সম্পর্কের অবনতি মূলত শুরু হয়েছে রেজা শাহের পতনের মধ্য দিয়ে।আর সম্পূর্ণভাবে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয় আমেরিকান দূতাবাসের ঘটনায়। সে সময় ইরানী কিছু ছাত্র প্রায় ৮০ জন আমেরিকানকে তাদের দূতাবাসে আটকে রাখে।

এরপরই শুরু হয় ইউএসএ কর্তৃক একের পর এক অর্থনৈতিক অবরোধ। একটি সতেজ অর্থনীতিকে কিভাবে পঙ্গু করে ফেলা যায় ইরান তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ। তবে ইরানের বর্তমান অবস্থা অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে চোস্ত ইংরেজি বলতে পারা হাসান রুহানির কারনে। পরমাণু কর্মসূচি কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ফলশ্রুতিতে অর্থনৈতিক অবরোধও খানিকটা শিথিল হয়েছে।

৭। স্লোভেনিয়া

অসমর্থনের হার ৫৭%

জিডিপি ২৭,৪১৭ মার্কিন ডলার

বেকারত্ব হার ১০.৩%

গড় আয়ু ৮০ বছর

১৯৯২ সালে যুগোশ্লাভিয়া থেকে আলাদা হওয়া একটি সাবেক সমাজপন্থি রাষ্ট্র। এই ছোট্ট দেশটি অনেক আর্থিক সমস্যায় ভুগছে।স্বাধীনতার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের কোন নিরাপত্তা বিরোধ নেই। তবে অর্থনৈতিক বিরোধ আছে। ন্যাটোর সাথেও দেশটির ভালো সম্পর্ক রয়েছে।

৬। মিশর

অসমর্থনের হার ৫৭%

জিডিপি ৬,৫৫৩ মার্কিন ডলার

বেকারত্ব হার ১৩%

গড় আয়ু ৭১ বছর

প্রেসিডেন্ট মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই মূলত আমেরিকানদের প্রতি মিশরীয়দের অনাস্থা বাড়ছে। কিন্তু হোসনি মোবারকের পতনের সময় দেশটির বেশিরভাগ জনগণ আমেরিকানদের ভূমিকায় সন্তুষ্ট ছিল। তবে বর্তমান সামরিক সরকারকে সামরিক সহায়তা বৃদ্ধি ও বেসামরিক সাহায্য কমিয়ে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্তগুলোকে মিশরীয়রা ভালো চোখে দেখছে না।

৫। ইরাক

অসমর্থনের হার ৬৭%

জিডিপি ৭,১৩২ মার্কিন ডলার

বেকারত্ব হার –

গড় আয়ু ৬৯ বছর

আমেরিকার সাথে ইরাকের যুদ্ধের ইতিহাসটা অনেক লম্বা। ১৯৯১ তে উপসাগরীয়র পরপরই ২০০৩ এ শুরু হয় আরেক যুদ্ধ। যেটা শেষ হয় ২০১১-এ আমেরিকান বাহিনীর ইরাক ত্যাগের মাধ্যমে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার দরুণ ইরাক ভ্রমণে রেড এলার্ট জারি করে রেখেছে। দীর্ঘ সময় ধরে ইরাকে আমেরিকান বাহিনীর অবস্থান, লক্ষাধিক ইরাকির মৃত্যু আমেরিকানদের প্রতি ঘৃণার বিষবাষ্প ইরাকিদের মনে ছড়িয়ে দিয়েছে।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই স্থিতিশীলতার জন্য ইরাকি সরকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বেশিরভাগ নাগরিকের কাছে ২০১০-এ মার্কিন সমর্থনপুষ্ট নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া সরকার প্রধান নুরি আল মালিকি আস্থাভাজন হতে পারেননি।

২০১২ সালের এক জরিপে দেখা যায়, বেশিরভাগ ইরাকি সরকার সেনাবাহিনী, আইন অব্যবস্থাপনার প্রতি অসন্তুষ্ট। মাত্র ৩০ ভাগ লোক মনে করে, ২০১০ এর নির্বাচন একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন ছিলো। এর পিছনে ইরাকিরা এককভাবে মার্কিনদের দায়ী করে থাকে।

৪। ইয়েমেন

অসমর্থনের হার ৬৯%

জিডিপি ২,৩৪৮ মার্কিন ডলার

বেকারত্ব হার –

গড় আয়ু ৬৩ বছর

এ বছর গুয়ান্তানামো বে’তে ১০০-এর উপর ইয়েমেনি নাগরিককে কারাভোগ করতে হয়েছে। ইয়েমেনে চলা বর্তমান সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন ধরেই চিন্তিত। দুই দেশের সরকারের মাঝে একটি থমথমে সম্পর্ক বিরাজ করছে। দেশটির প্রায় ৭০ শতাংশ নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের প্রতি বিরূপ ধারণা প্রকাশ করে। শুধু মাত্র ৯ শতাংশ নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বকে মূল্যায়ন করে। দেশটি খুবই অর্থনৈতিক দুরবস্থায় আছে। মাথাপিছু আয় মাত্র ২৩৪৮ মার্কিন ডলার, যা কি না বিশ্বের অন্যতম নিম্নমুখী অর্থনীতি। অর্ধেকেরও বেশি জনগণ দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। উচ্চ নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মার্কিন নাগরিকদের উপর ইয়েমেনে ভ্রমণের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

৩। লেবানন

অসমর্থনের হার ৭১%

জিডিপি ১৫,৮৩২ মার্কিন ডলার

বেকারত্ব হার –

গড় আয়ু ৮০ বছর

অন্যান্য অনেক দেশের মত এরাও মার্কিন নেতৃত্বকে একেবারেই দেখতে পারে না। এর পিছনে মূল কারণ হল আমেরিকান সমর্থিত ইসরায়েলের সাথে দীর্ঘ যুদ্ধের ইতিহাস।

২। পাকিস্তান

অসমর্থনের হার ৭৩%

জিডিপি ৩,১৪৪ মার্কিন ডলার

বেকারত্ব হার ৬.৭%

গড় আয়ু ৬৬ বছর

শতকরা ৭৩ জন পাকিস্তানী এখনো আমেরিকার নেতৃত্বকে সম্পূর্ণ অগ্রহনযোগ্য মনে করে। ২০১২ থেকে এই হার আরও ৬ শতাংশ বেড়েছে। আমেরিকার সাথে পাকিস্তানের দোস্তিটা কিন্তু শুরু হয়েছে টুইন টাওয়ার হামলার কয়েক ঘণ্টা পর বুশের একটা ফোন কলের পর থেকে। জর্জ বুশ পারভেজ মোশারফকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন, “পাকিস্তান কি প্রস্তর যুগে ফিরে যাবে নাকি আমেরিকার সাথে থাকবে?” মোশারফ তাৎক্ষণিকভাবে পাকিস্তানে ঘাঁটি করে আফগানিস্তানে অভিযান চালানোর জন্য অনুমতি দেয়। এ ব্যাপারে শতকরা ৫৯ শতাংশ পাকিস্তানী দেশের জন্য আমেরিকাকে আল কায়েদার থেকেও বড় হুমকি মনে করে এবং পাকিস্তানের আজ এই অবস্থার জন্য সম্পূর্ণভাবে আমেরিকাকে দায়ি করে।

১। ফিলিস্তিন

অসমর্থনের হার ৮০%

জিডিপি –

বেকারত্ব হার –

গড় আয়ু ৭৩ বছর

শতকরা ৮০ ভাগ ফিলিস্তিনি আমেরিকান নেতৃত্বকে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্য অকার্যকর নেতৃত্ব মনে করে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দেশটির এই রকম বৈরি ভাবের একটি ব্যাখ্যা হচ্ছে, ফিলিস্তিনিদের বিপক্ষে ইসরাইলকে অন্ধ সমর্থন, হামাস শাসিত অঞ্চলকে ২০০৭ থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয় ইউনিয়ন কতৃক সন্ত্রাসবাদি এলাকা আখ্যা দেওয়া, সাথে সাথে হামাসকেও একটি জঙ্গি সংগঠন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা ইত্যাদি। প্যালেস্টাইন অঞ্চলে একটি জোর বিভক্তি এখনও চলছে। এক জরিপে প্রায় ১৮ ভাগ উত্তরদাতা বলেছেন, অন্যান্য অঞ্চল বিবেচনায় তাঁদের এই অঞ্চলটি সংখ্যালঘুদের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ জায়গা ছিল, কিন্তু এখন অবস্থা অনেকটাই পাল্টে গেছে এবং এর পিছনে মূল কারণ হল আমেরিকানদের প্রতি ঘৃণা।

শেয়ার করুন