ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারণায় পশ্চিমবঙ্গে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে ‘সারদা কেলেঙ্কারি’। এই চিট ফান্ড কেলেঙ্কারির ঘটনায় ব্যাখ্যা চেয়ে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের কয়েকজন শীর্ষ নেতার কাছে চিঠি পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি কর্তৃপক্ষ। এর জের ধরে বাগ্যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও কংগ্রেসের সহসভাপতি রাহুল গান্ধী।
‘সারদাকাণ্ড’ নিয়ে তৃণমূলের সমালোচনায় মেতে উঠেছে কংগ্রেস, বিজেপি ও বামপন্থীরা সবাই। কথার লড়াইতে যোগ দিয়েছেন বিজেপির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদিও। তবে তৃণমূলের প্রধান মমতা এ কেলেঙ্কারির সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে লড়ে যাচ্ছেন সমানতালে।
রাহুল গান্ধী গত শনিবার পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুরে নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে মমতার কঠোর সমালোচনা করেন। কংগ্রেসের সহসভাপতি বলেন, ‘আমরা খাদ্যের অধিকার রক্ষা করি, গরিবের কথা বলি। মমতা চিট ফান্ড আর সারদার কথা বলেন। এ ঘটনায় মমতার সরকার সিবিআইয়ের তদন্ত চায় না। কারণ, উনি জানেন, তদন্ত করা হলে তাঁর আসল মুখ বেরিয়ে আসবে।’ আগের দিন মালদহ ও মুর্শিদাবাদে রাহুল বলেন, ‘এখানে বড় বড় দুর্নীতি হচ্ছে। সারদা কেলেঙ্কারির কথা তো আপনারা সবাই জানেন। ২০ লাখ মানুষ এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ মমতার নাম উল্লেখ করে রাহুল বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নিজেদের গরিবের সরকার বলে দাবি করে। তা-ও দুই বছরে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। বরং যারা এ কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত, তাদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে।’
রাহুলের এই সমালোচনার জবাবে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার তথা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরমকে আক্রমণ করেন মমতা। তাঁর অভিযোগ, ঠিক নির্বাচনের সময় এই কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্তে চিদাম্বরমের হাত রয়েছে। গত শনিবার মালদহের সিকান্দারপুরে এক জনসভায় চিদাম্বরমকে হুমকি দিয়ে মমতা বলেন, ‘ক্ষমতা থাকলে তুই আমায় টাচ কর। তারপর তোকে কী করতে হয় জানি। আমি মায়াবতী নই, মুলায়ম সিং নই, আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’
রাহুল গান্ধী সরাসরি মমতার নাম ধরে সমালোচনা করলেও নরেন্দ্র মোদি যেন একটু সংযত। সম্প্রতি শিলিগুড়িতে নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে মোদি বলেন, ‘চিট ফান্ডের মাধ্যমে চিটিং হয়েছে। লাখ লাখ গরিব মানুষের সঞ্চয় লুট করা হয়েছে। এই অপরাধ যারা করেছে, তাদের কাউকেই ছাড়া হবে না। রাজনৈতিক নেতারা যুক্ত থাকলে তাঁদেরও সাজা হবে।’ মোদি তাঁর বক্তব্যে মমতা বা তৃণমূলের নাম উল্লেখ করেননি।
রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বাম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য গত শুক্রবার শ্রীরামপুরে নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে মমতার সমালোচনা করে বলেন, ‘আগে বলতেন উনি সততার প্রতীক। এখন তো দেখছি সারদার প্রতীক!’
মমতা কিন্তু সহজে হার মানছেন না। কোনো সমালোচনাকারীকেই ছেড়ে কথা বলছেন না তিনি। মালদহে এক প্রচারণায় গিয়ে মমতা বলেন, ‘সারদা নিয়ে অনেক মাথাব্যথা! পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় সারদা নিয়ে গোল বাধিয়েছিল। আমি যদি মিথ্যা কথা বলি, আমাকে গ্রেপ্তার করে জেলে পুরে দেবেন! আমি দেখে নেব! আর যদি আমি সত্যি কথা বলে থাকি, তাহলে কংগ্রেস নাকখত দেবে, সিপিএম দাসখত দেবে, আর বিজেপিও দাসখত দেবে।’
গত শুক্রবার সারদা গোষ্ঠীর কর্ণধার ধনকুবের সুদীপ্ত সেনের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী পিয়ালি সেন ও ছেলে শুভজিত্ সেনকে গ্রেপ্তার করে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন কালোটাকার লেনদেন আটকানো ও উদ্ধারের কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি)। তাঁদের জেরা করার পর তৃণমূলের ছয় নেতার কাছে চিঠি পাঠানো হয়। আর এতেই আলোচনার কেন্দ্রে চলে আসে সারদা কেলেঙ্কারি।
আগামী মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে সারদা কেলেঙ্কারির শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। কেলেঙ্কারির তদন্ত রাজ্য সরকারের সিআইডির হাতে থাকবে, নাকি কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হবে, তা নিয়েই শুনানি চলছে। অভিযোগ রয়েছে, তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে যাওয়া ঠেকাতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে মমতা সরকার। কারণ, তদন্ত সিআইডির হাতে থাকলে তা প্রভাবিত করার সুযোগ পাবে তৃণমূল।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার হলফনামার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টকে জানায়, সারদা আমানতকারীদের কাছ থেকে দুই হাজার ৪৬০ কোটি টাকা তোলে। এর মধ্যে ৪৭৫ কোটি টাকা ফেরত দিলেও বাকি এক হাজার ৯২৮ কোটি টাকার খোঁজ মিলছে না। এরপর এই কেলেঙ্কারি খতিয়ে দেখতে জোর তত্পরতা শুরু করে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। এনডিটিভি ও টাইমস অব ইন্ডিয়া