খন্দকার মোশাররফের তদন্ত কর্মকর্তাকে বদলি নিয়ে তোলপাড়

0
169
Print Friendly, PDF & Email

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিদেশে অর্থ পাচার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আহসান আলীকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয় থেকে কুষ্টিয়ায় বদলি করা হয়েছে। এ মামলার তদন্তসহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দুর্নীতির অনুসন্ধান করছেন দুদকের এ কর্মকর্তা। হঠাৎ তার এ বদলি নিয়ে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটিতে রীতিমত তোলপাড় শুরু হয়েছে।

দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, খন্দকার মোশাররফের দুর্নীতির তদন্ত ছাড়াও দুদকের এ কর্মকর্তা কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের আওয়ামী লীগের বিতর্কিত সংসদ সদস্য আবদুর রহমান ওরফে বদি ও সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান মিয়ার এপিএস শৌমেন্দ চন্দ্র শৈলেনের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করছেন। এছাড়া তিনি জ্বালানি সেক্টরের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করছেন।

আহসান আলী বাংলানিউজকে বলেন, খন্দকার মোশাররফের মামলার তদন্তসহ বিভিন্ন দুর্নীতির ঘটনায় যখন আমি অগ্রগতিমূলক তথ্য পেয়েছি ঠিক তখনই আমাকে বদলি করা হয়েছে।

দুদকের এ উপপরিচালক জানান, বিএনপির মোশাররফের মামলার চার্জশিটের জন্য খসড়া তদন্ত প্রতিবেদন এরইমধ্যে আমি কমিশনে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য জমাও দিয়েছি। যখন চার্জশিটের অনুমোদন চেয়ে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার সময় হয়েছে তখনই আমাকে বদলি করা হয়েছে।

দুদকের একজন মহাপরিচালককে(ডিজি) বদলির জন্য দায়ী করে তিনি বলেন, সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সম্প্রতি আমাকে বদলির নোটিশ দেওয়া হয়েছে। একজন ডিজি তার ক্ষমতা দেখিয়ে আমাকে কুষ্টিয়া বদলি করেছেন। প্রশাসনিক ক্ষমতা থাকায় তিনি আমার সঙ্গে অপেশাদারি আচরণ করেছেন।

ডিজির মনক্ষুণ্ন থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমি তার অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদ করেছি। দুর্নীতি দমন ব্যুরো থাকাকালীন তার বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলাও হয়েছে। সম্ভবত সেটা ৯৫ সালে। এছাড়া গতমাসেও আমি দুদক চেয়ারম্যানের কাছে তার অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে অভিযোগ করেছি।

দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো: শহিদুজ্জামানের সঙ্গে দুদকের উপ-পরিচালক আহসান আলীর দীর্ঘদিনের দ্বন্ধ চলছে। ৯৫ সালে শহিদুজ্জামান যখন দুর্নীতি দমন ব্যুারোর উপ-পরিচালক ছিলেন তখন আহসান আলী তার বিরুদ্ধে জালিয়াতি এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী পদে থাকা অবৈধ দাবি করে রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন। ৯৭ সালে উচ্চ পর্যায়ের এক তদন্তে শহিদুজ্জামান সাময়িক বরখাস্ত হয়ে পরে আবার চাকরিতে যোগদান করেন।

আহসান আলী দাবি করেন, যেসব আলোচিত দুর্নীতির অনুসন্ধান ও তদন্ত আমি করে আসছি তাতে উনি সন্তুষ্ট না হয়ে আমাকে বদলি করেছেন।

এদিকে এসব অভিযোগের বিষয়ে প্রশাসন বিভাগের ডিজি শহিদুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমার উপরে চেয়ারম্যান, কমিশনারদ্বয় আছেন। আমি চাইলেই তাকে বা কাউকে বদলি করতে পারি না।

পাল্টা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে শহিদুজ্জামান বলেন, আহসান আলীর বিরুদ্ধেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। তিনি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। উনি আমাকে সামাজিকভাবে হেয় করতে চেষ্টা করছেন। আমার বিরুদ্ধে যেসব পেশাগত অপপ্রচার তিনি করেছেন তার সুরাহা আদালত করেছে।

দুদকের উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, দু’জনের দ্বন্ধ দীর্ঘদিনের। দুজনই দুজনের বিরুদ্ধে দুদক চেয়ারম্যান মো: বদিউজ্জামানের কাছে একাধিকবার অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগও করেছেন।

‘তবে গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত চলাকালীন এবং আলোচিত দুর্নীতির অনুসন্ধানকালীন সময়ে তার বদলি ঠিক হয়নি’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গত বুধবার দুদকের উপ-পরিচালক মো. আহসান আলী তার বদলি আদেশ বাতিলের জন্য পুন:আবেদন করেন। ওই আবেদনপত্রে তিনি দুদকের মহাপরিচালক (প্রশাসন) মো. শহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুদক চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেন।

অভিযোগে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন ব্যুরোতে কর্মরত থাকা অবস্থায় দুদকের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা তাকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন। মহাপরিচালক মো. শহিদুজ্জামানসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের ষড়যন্ত্রে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে আহসান আলীকে কুষ্টিয়ায় বদলি করা হয়েছে।

শেয়ার করুন