জোট ছাড়ছে জামায়াত!

0
171
Print Friendly, PDF & Email

বিএনপির সঙ্গে চরম টানাপড়েন চলছে ১৯-দলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামীর। একে-অন্যকে আর তেমন একটা বিশ্বাস করতে পারছে না। তা ছাড়া সাম্প্রতিক আন্দোলন ও উপজেলা নির্বাচনের সাফল্যে নিজেদের ওপর আস্থা বেড়ে গেছে জামায়াতের। উপরন্তু মাওলানা সাঈদী ও নিজামীসহ দলের শীর্ষ নেতাদের সাজা কমানোর ব্যাপারেও ভেতরে ভেতরে সরকারের সঙ্গে তারা দেনদরবার করছেন বলেও সন্দেহ করছে বিএনপি। ফলে জোটের নেতৃত্বাধীন দল বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব বাড়ছে। এমনকি সহসাই জোট ছাড়তে পারে ১৯-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক এই ইসলামী দলটি। আকারে-ইঙ্গিতে সম্প্রতি এ কথা বিএনপিকে জানিয়েও দিয়েছেন তারা। আর এটা অাঁচ করতে পেরেই বেগম খালেদা জিয়া জোটের বৈঠকে ঢাকা মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল হালিমের উপস্থিতিতে পরিষ্কার জানতে চেয়েছেন, ‘জামায়াত আসলে কোন পথে?’ আওয়ামী লীগের সঙ্গে জামায়াতের গোপন সমঝোতার আশঙ্কা প্রকাশ করে উদ্বেগও জানিয়েছেন বেগম জিয়া।

জামায়াত নেতাদের মতে, সারা দেশে তাদের সংগঠনটি এখন বিএনপির চেয়েও অধিক শক্তিশালী। জামায়াতের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা জানান, কাদের মোল্লার ফাঁসিসহ দল ও শীর্ষ নেতাদের চরম দুর্দিনে বিএনপির কোনো সহযোগিতা পায়নি জামায়াত। সাম্প্রতিক আন্দোলনেও বিএনপি নেতারা তেমন একটা মাঠে ছিলেন না এবং অদূর ভবিষ্যতেও বিএনপিকে দিয়ে জোরালো কোনো আন্দোলন হবে বলে আস্থায় আনতে পারছেন না তারা। ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার গুলশানের বাসায় গৃহবন্দী অবস্থায় থাকলেও বিএনপির একজন নেতাও তার প্রতিবাদে মাঠে নামেননি। ২৯ ডিসেম্বরের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির দিন বিএনপির একজন নেতা দূরে থাক একজন কর্মীকেও মাঠে দেখা যায়নি। একমাত্র জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরাই সেদিন ঢাকার রাজপথে নেমেছিলেন এবং মালিবাগে পুলিশের গুলিতে একজন নিহতসহ ১৫ জন আহত হয়েছিলেন। অন্যদিকে সাম্প্রতিক উপজেলা নির্বাচনে দেশব্যাপী এত দমন-পীড়নের মধ্যেও জামায়াত আশাতীত সফল হয়েছে। এতে নিজেদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস অনেক গুণ বেড়ে গেছে তাদের। ফলে তারা বিএনপিকে আর আগের মতো আস্থায় রাখতে পারছে না।

বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, জামায়াতের পক্ষ থেকে তাদের দলীয় শীর্ষ নেতাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ফাঁসির হাত থেকে বাঁচাতে সরকার ও আওয়ামী লীগের উচ্চ একটি অংশের সঙ্গে দেনদরবার চলছে। প্রক্রিয়াটি সফল হলে জামায়াত নিজেই ১৯-দলীয় জোট ও বিএনপিকে ছেড়ে চলে যেতে পারে। বিষয়টি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জানতে পেয়ে চরম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি বগুড়ার মতো বিএনপির শতভাগ ঘাঁটিতে বিএনপির প্রার্থীর বিপরীতে প্রার্থী দিয়ে মিছে জনপ্রিয়তা অর্জনের জামায়াতি প্রচেষ্টাকেও ভর্ৎসনা করেন তিনি। বিএনপির অন্য একটি সূত্র জানায়, সারা দেশে জামায়াত-শিবির নেতাদের ধরপাকড় বন্ধের পাশাপাশি তাদের গ্রেফতার-হয়রানি বন্ধসহ রাজনৈতিক সুযোগ প্রদানের প্রস্তাবগুলো নিয়ে সরকারের সঙ্গে জামায়াতের দেনদরবার হচ্ছে। এসব প্রস্তাব বিবেচনায় রেখেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও জামায়াত সামনে এগোচ্ছে। আর তারই অংশ হিসেবে জামায়াতও কিছু দিন ধরে রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রদান থেকে নীরব রয়েছে। হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে সমঝোতা এবং শাহবাগ থেকে ইমরান এইচ সরকারসহ গণজাগরণ মঞ্চ উৎখাতের বিষয়গুলোর যোগসূত্র রয়েছে বলে ধারণা করছে বিএনপি। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক একজন উপদেষ্টা এবং জামায়াতের একজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল (যিনি বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন) এ সমঝোতা প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন বলে জানা যায়। এ প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শুরার একজন প্রভাবশালী সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপিকে দিয়ে আর আন্দোলন হবে না। কারণ বিএনপি আন্দোলনের দল নয়। তারা হলো অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ক্ষমতায় গিয়ে সুযোগ-সুবিধা ভোগের দল। রাজপথে আন্দোলনে নামার কোনো আগ্রহ, পরিকল্পনা বা মানসিকতা কোনোটাই বিএনপির নেই। এমনকি সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের সামর্থ্য নিয়েও এখন মানুষের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে। কাজেই জোট নেত্রী যত হুঙ্কারই দিন না কেন, বিপদে যে তার পাশে কেউ নেই সে কথা সেনানিবাসের বাড়ি থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া এবং ২৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিসহ গত পাঁচ বছরে বারবার প্রমাণ হয়েছে।

তবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, ঢাকা মহানগরীর আমির মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান সরকারের সঙ্গে জামায়াতের গোপন সমঝোতা প্রক্রিয়ার কথা উড়িয়ে দিয়ে বলেন, এটি সম্পূর্ণভাবে একটি অপপ্রচার, যা জনপ্রিয় দল জামায়াতের বিরুদ্ধে চলমান গভীর ষড়যন্ত্রেরই অংশমাত্র। এ সরকারের সঙ্গে জামায়াতের সমঝোতার কোনো প্রশ্নই আসে না। মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আবদুল হালিমের ভাষ্য হলো, উপজেলা নির্বাচনের আগে নানা সমস্যার কারণে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগের কিছুটা ঘাটতি থাকলেও আমরা এ সমস্যা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আমরা জোটের সঙ্গে আছি, ভবিষ্যতেও এ জোট অটুট থাকবে।

শেয়ার করুন