আবার নৈরাজ্য করলে বিএনপির রাজনীতির কবর হয়ে যাবে

0
134
Print Friendly, PDF & Email

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ডেড ইস্যুতে আন্দোলনের হুমকি দিয়ে একবার ব্যর্থ হয়েছেন; নতুন করে দেশে আর কোন নৈরাজ্য, জ্বালা-পোড়াও করলে বিএনপির রাজনীতি চিরদিনের জন্য কবর হয়ে যাবে। ২০১৯ সালের জানুয়ারির আগে নির্বাচনের সম্ভাবনা আবারো নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, সরকারের মেয়াদ পূর্ণ করেই সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উত্তরবঙ্গ সফরের তৃতীয় দিনে গতকাল শনিবার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন, ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে বৈঠক এবং চিকিত্সক, কর্মচারীদের সঙ্গে পৃথক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। দুপুর ১২টায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছেই মোহাম্মদ নাসিম রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সভাকক্ষে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সঙ্গে বৈঠক এবং জোহরের নামাজের পর রামেক অডিটরিয়ামে চিকিত্সক-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

মোহাম্মদ নাসিম বলেন, স্বাস্থ্য সেবার ক্ষেত্রে কোন ধরনের দলবাজির পাশাপাশি চিকিত্সকদের অনিয়ম ও দুর্নীতি কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। চিকিত্সকদের সেবার ব্রত নিয়ে দেশ ও জনগণের স্বার্থে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, সরকার সাধ্যমত আপনাদের সম্ভাব্য সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করবে। চিকিত্সা অঙ্গন থেকে তিনি রাজনৈতিক ‘ক্যান্সার’ দূর করার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, উত্তারাঞ্চলের সর্ববৃহত্ চিকিত্সা প্রতিষ্ঠানে বার্ন ইউনিট থাকবে না, এমনটি হতে পারে না। আগামী সাত দিনের মধ্যে এই হাসপাতালের বার্ন ইউনিট চালুর ঘোষণা দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এজন্য প্রয়োজনীয় সকল সরঞ্জাম সাত দিনের মধ্যেই রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে যাবে। এছাড়া নতুন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) যেসব অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতির সংকট রয়েছে একই সময়ের মধ্যে সেগুলোও পৌঁছে দেয়া হবে। এছাড়া রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অকেজো যন্ত্রপাতির পরিবর্তে নতুন সরঞ্জামাদি সংযোজন এবং সংস্কার কাজের জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণাও দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি রামেক ক্যাম্পাসে একটি গাছের চারা রোপণ করেন।

চিকিত্সকদের ধর্মঘট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কথায় কথায় ধর্মঘট ডাকবেন না। ধর্মঘট চলাকালে একজন রোগী মারা গেলে তার দায় নেবে কে? সত্যিকার অর্থে যদি আপনি একজন চিকিত্সক হন, তাহলে ধর্মঘট করবেন না। তিনি বলেন, চিকিত্সকেরও ভুল হতে পারে। তাদের আঘাত করার বিষয়টি রোগীর স্বজনদের ভেবে দেখার জন্য আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ডাক্তার এবং রোগীদের সুরক্ষায় জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনেই আইন পাস করা হবে।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজকে

বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজকে (রামেক) বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আগামী জুনের মধ্যেই সকল আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সর্বস্তরের মানুষ তুমুল করতালি দিয়ে স্বাগত জানান। এ সময় মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সকলের দাবি অনুযায়ী জাতীয় চার নেতার অন্যতম রাজশাহীর কৃতী সন্তান শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানের নামে এই মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে একটি কমিটি গঠন করেছে। আইন করে এটি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করা হবে।

রামেক হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা এমপির সভাপতিত্বে রাজশাহীর সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, আকতার জাহান এমপি, আয়েন উদ্দিন এমপি, হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন, উপ-পরিচালক আ.স.ম বরকত উল্লাহ, রামেক অধ্যক্ষ ডা. মীর আবু রায়হান, উপাধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী, রামেক শিক্ষক সমিতির সভাপতি দায়েম উদ্দিন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ ও রামেকের সকল বিভাগীয় প্রধান উপস্থিত ছিলেন। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসপাতালের ভিতর-বাহির পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার এবং চিকিত্সকদের রোগীদের সাথে ভাল আচরণ করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, চিকিত্সার ক্ষেত্রে কোন ধরনের অবহেলা সহ্য করা হবে না। হাসপাতালকে সম্পূর্ণ অনিয়ম ও দুর্নীতি মুক্ত রাখা হবে। এরপর স্বাস্থ্যমন্ত্রী রামেক হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) পরিদর্শন করেন। তিনি হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং ব্যবস্থাপনায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

রামেককে বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, আখতার জাহান এমপি, আয়েন উদ্দিন এমপি, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভুঁইয়া, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হাসান, বিএমএ-এর মহাসিচব অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আবদুল খালেক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

শেয়ার করুন