৪২ বছর ধরে বাংলাদেশ শোষণ করছে ভারত

0
164
Print Friendly, PDF & Email

সিপিবি ও বাসদের তিস্তা মার্চের সমাপনী সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, পাকিস্তান ২৩ বছর বাঙালিদের শোষণ করেছে। আর ভারত ৪২ বছর ধরে স্বাধীনতায় সহযোগিতার নামে বাংলাদেশ শোষণ করছে। টুঁটি চেপে ধরে আছে বাংলাদেশের। তিস্তার পানি সরিয়ে ভারত মানবতাবিরোধী অপরাধ করছে। ভারত বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতিকে ব্যবহার করে বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। ৪২ বছরের মেরুদণ্ডহীন শাসক শ্রেণী পানির অধিকার নিশ্চিত করতে পারেনি। বামপন্থীরা তিস্তা ইস্যু নিয়ে কথা বললেও আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি কোনো কথা বলছে না। তারা সবাই ভারতের দালাল। সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল।
গতকাল শনিবার বিকেলে তিন দিনব্যাপী রোডমার্চের সমাপনী দিনে লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারাজসংলগ্ন সাধুরবাজারে সমাবেশে সিপিবি ও বাসদ নেতারা এ কথা বলেন। বাসদের নীলফামারী জেলা সভাপতি আব্দুস ছালামের সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির উপদেষ্টা কমরেড মনজুরুল আহসান খান, বাসদ সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান, সিপিবি সাধারণ সম্পাদক কমরেড সৈয়দ আবু জাফর আহমেদ, বাসদ কেন্দ্রীয় সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন, সিপিবি কেন্দ্রীয় সদস্য রুহিন হোসেন প্রিন্স, বাসদ রংপুরের সমন্বয়ক কমরেড আব্দুল কুদ্দুস প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, শেখ হাসিনার সরকার সংবিধান রক্ষার নির্বাচনের নাম করে ভারতের সাথে বন্ধুত্বের নামে তাদের দাসত্ব করছে। শেখ হাসিনা সরকার ভারতীয় শাসক শ্রেণীর স্বার্থ হাসিল করছে। ফারাক্কায় পরীক্ষামূলক বাঁধ দেয়ার নামে ভারত শেখ মুজিব সরকারের সাথে প্রতারণা করেছে। শেখ মুজিব প্রতারিত হয়েও ফারাক্কার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেননি। আন্দোলন করেছিলেন মওলানা ভাসানী। আজকের ভারতের আগ্রাসী ভূমিকার মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে মওলানা ভাসানীর লংমার্চই ছিল আসল। তাই ভারতের প্রতারণা ও বর্তমান শাসক শ্রেণীর বিরুদ্ধে একাত্তরের মতো যুদ্ধ করে তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে এখনই নেমে পড়তে হবে।
বক্তারা বলেন, ভারত আমাদের ওপর আগ্রাসন চালাচ্ছে। উজানে পানি সরিয়ে নিয়ে ২৭টি প্রকল্পের মাধ্যমে আমাদের দেশের প্রাণ প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। নির্বাচনকালে শেখ হাসিনা ভারতকে গ্যাসব্লক দিয়ে দিয়েছে। সুন্দরবন ধ্বংস করে রামপাল প্রকল্প উদ্বোধন করেছে। সীমান্ত হত্যার জন্য বাংলাদেশ সরকার কোনো কথা বলে না। ট্রানজিটের জন্য ভদ্রতার কারণে শেখ হাসিনা সরকার ভারতের কাছে ফি চায় না। গদি রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী ভারত যা চাইছে তা-ই করছেন। বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ তিনি রক্ষা করছেন না। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিএনপি-জামায়াত নরেন্দ্রমোদির দিকে চেয়ে আছে। জাতীয় পার্টি বলছে তাদের নাকি মুখ নেই। জামায়াত ক্ষমতায় যেতে চাইলেও পানির জন্য কিছুই বলে না। তাদের দাসত্বের জন্য বাংলাদেশ তিলে তিলে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন বামমোর্চার সমন্বয়ক অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার। তিনি ঘোষণাপত্রে পাঁচ দফা দাবি উপস্থাপন করে দাবি আদায়ে আগামী ১৬ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভ ও মে মাসে পানির জন্য জাতীয় কনভেনশন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
এর আগে দুপুর ১২টায় রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠ থেকে সমাবেশের মধ্য দিয়ে লংমার্চ শুরু হয়। পথে পাগলপীর, কিশোরগঞ্জ, টেংগনমারী, জলঢাকায় পথসভা করে। সিপিবি ও বাসদের ঢাকা, রংপুর, লালমনিরহাট ও নীলফামারীর নেতাকর্মীরা এতে অংশ নেন। এরও আগে গত ১৭ এপ্রিল জাতীয় প্রেস কাব থেকে বিকেল ৩টায় যাত্রা শুরু করে লংমার্চ সিরাজগঞ্জে এসে বিরতি দেয়। ১৮ এপ্রিল সিরাজগঞ্জ থেকে যাত্রা শুরু করে বগুড়ায় সমাবেশ শেষে রংপুরে এসে যাত্রা বিরতি দেন। এর আগে ঢাকা ৮ থেকে ১০ এপ্রিল গণতান্ত্রিক বামমোর্চা ও ৩১ মার্চ রংপুর থেকে বাসদ তিস্তা অভিমুখে লংমার্চ করে। আগামী ২২ ও ২৩ এপ্রিল বিএনপি ঢাকা থেকে একই ইস্যুতে মির্জা ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে তিস্তা ব্যারাজ অভিমুখে লংমার্চ করবে।
প্রসঙ্গত, তিস্তার ভারত অংশে গজল ডোবা ব্যারাজের সব গেট বন্ধ করে দেয়ায় মৃত্যুর সাথে দরকষাকষি করছে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্প। মরে গেছে তিস্তা। এই মুহূর্তে সেখানে সাড়ে তিন হাজার কিউসেক পানি থাকার কথা থাকলেও কোনো পানি নেই। শনিবার ৫৫০ কিউসেক পানি থাকলেও তা তিস্তা নয়, ভুগর্ভস্থ পানি বলে জানিয়েছেন রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী-২ আতিকুর রহমান।

শেয়ার করুন