সচিবদের ১৯টি নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

0
126
Print Friendly, PDF & Email

সরকারের কার্যক্রম পরিচালনা আরও গতিশীল করতে সচিবদের প্রতি ১৯টি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৭ এপ্রিল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় তিনি এসব নির্দেশনা দেন।
প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উল্লেখযোগ্য দিকনির্দেশনার মধ্যে রয়েছে- প্রকল্প নির্বাচনে নির্বাচনী প্রতিশ্র“তিকে অগ্রাধিকার, সন্ত্রাস ও নাশকতা কঠোরভাবে দমন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরণ, নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত ও সর্বস্তরে ই-গভর্নেন্সকে ছড়িয়ে দেয়া।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাসংবলিত একটি ডিও লেটার (আধা সরকারিপত্র) সম্প্রতি সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের কাছে পাঠিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা। ১০ এপ্রিল স্বাক্ষরিত ওই পত্রে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে অবহিত করারও নির্দেশ দেয়া হয়।
চিঠিতে জানানো হয়, সচিব সভায় প্রকল্প নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের নির্বাচনী প্রতিশ্র“তিতে অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান জানিয়ে সচিবদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রকল্প নির্বাচনের ক্ষেত্রে দূরদর্শী চিন্তা করতে হবে। প্রকল্প প্রণয়নকালে সম্পদের সীমাবদ্ধতা ও পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। জটিলতা এড়াতে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয় ও অন্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা থাকলে তা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করতে হবে।
সন্ত্রাসী ও নাশকতামূলক কার্যকলাপের বিষয়ে সচিবদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের জানমালের বিধান করতে হবে। শিল্পাঞ্চলে যে কোনো মূল্যে শান্তি বজায় রাখতে হবে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পেশিশক্তি ও সন্ত্রাস নির্মূল করার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
উপজেলা পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার কথা উল্লেখ করে সচিবদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন স্তরের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কাছে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে সহায়ক ভূমিকা রাখতে হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় আইনশৃংখলা, অবকাঠামো উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তাসহ সব ধরনের উন্নয়ন কর্মসূচি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে ন্যস্ত করা হবে। এসব প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব সম্পদ আহরণের মাধ্যমে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।
সর্বস্তরে ই-গভর্নেন্সকে ছড়িয়ে দিতে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের শেখ হাসিনা বলেন, আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন নতুন ধ্যান-ধারণা, কর্মপদ্ধতি এবং সর্বাধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে হবে। প্রশাসনিক সংস্কার ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের মেয়াদ বাড়াতে হবে। জনপ্রশাসনের জন্য প্রণীত সিভিল সার্ভিস আইন দ্রুত চূড়ান্ত করা হবে বলেও সচিবদের জানান প্রধানমন্ত্রী।
মেধাবী শিক্ষিত বেকারদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, কিন্তু পদের অভাবে ক্যাডার পদে নিয়োগ পাননি এমন প্রার্থীদের নন-ক্যাডার প্রথম শ্রেণীর পদে নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ কারণে পিএসসির ক্ষমতা ও এ সংক্রান্ত নিয়োগবিধি সংশোধন করা হয়েছে।
বিভিন্ন মামলায় রাষ্ট্রের স্বার্থ সুরক্ষায় আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব গভীরভাবে পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নদী দূষণমুক্ত রাখার বিষয়ে তিনি সচিবদের বলেন, নদীর তীরবর্তী শিল্প-কারখানার বর্জ্য যাতে নদীর পানি দূষিত না করতে পারে সে বিষয়ে প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৬০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ অর্থ যাতে পরিপূর্ণভাবে সদ্ব্যবহার করা হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। ধ্বংসাত্মক ও নাশকতার মাধ্যমে যে সময় নষ্ট হয়েছে তা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে পুষিয়ে নিতে হবে।
সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে ভূমি উন্নয়ন করসহ নানা ধরনের বিল বকেয়া রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব বকেয়া দ্রুত পরিশোধ করার ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রয়োজনে অর্থবিভাগ এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবে।
সব স্তরে গণশুনানি (পাবলিক হেয়ারিং) প্রচলনের নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ডিসিরা সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিনে গণশুনানি করে থাকে। একইভাবে জেলা পর্যায়ের অন্যান্য কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও এ শুনানি করতে পারে। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে মন্ত্রণালয় বিভাগ, অধিদফতর ও সংস্থা প্রধানরাও এ শুনানির পদ্ধতি চালু করতে পারে।

শেয়ার করুন