তবুও ক্ষমতাসীন জোট

0
189
Print Friendly, PDF & Email

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল কার্যত কত দলের শরিক? জোটের অঙ্কে থাকলেও ভোটের অঙ্কে নেই। ১৪ দলের বেশ কয়েকটি দল শুধুই সাইনবোর্ড-সর্বস্ব। কোনো কোনো দলের রাজনৈতিক কার্যালয়ও খুঁজে পাওয়া দায়। দু-একটি দলে কেন্দ্রীয় নেতা আছে কিন্তু তৃণমূলে সংগঠন নেই। জোটের ১৪ দলের আটটি দলেরই অস্তিত্ব নেই। জোটে তো দূরের কথা, রাজনৈতিক মাঠেও নেই কার্যক্রম। আওয়ামী লীগ জোটের ব্যানারে নাম থাকলেও জোটের কার্যক্রমে তারা গুরুত্বহীন। জোটের কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতেও এসব দল অনেকটা নিষ্ক্রিয়। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ছাড়া অন্যান্য দলগুলো জোটের শোভা বাড়ালেও কেবল নাম ভূমিকায় রয়েছে এসব দলের অংশগ্রহণ। বিগত সরকারের আমলে শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছিলেন জোটের কয়েক নেতা। এবার সরকারের মন্ত্রিসভায় জোটভুক্ত তিনটি দলের শীর্ষনেতার ঠাঁই হয়েছে মন্ত্রিসভায়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপ, সাম্যবাদী দল, কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, জাকের পার্টি, বাসদ (রেজাউর রশিদ) নিয়ে ১৪ দলীয় জোট। নতুনভাবে যুক্ত হয়েছে জাতীয় পার্টি (জেপি), তরিকত ফেডারেশন। এই দুই দল জোটে আসার আগে যে ১৪ দলীয় জোট, এখনো সেই নামেই জোটের পরিচয়।

সূত্রমতে, জোটের অন্যান্য শরিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছেও গুরুত্বহীন। এ নিয়ে বঞ্চিত শরিক দলের মধ্যে ক্ষোভের বেদনাও কম নয়। যদিও আওয়ামী লীগ এসব বিষয় আমলে আনছে না। টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন, চাওয়া-পাওয়া ও কর্মসূচি নিয়ে জোটের বৈঠকে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশও ঘটেছে। গত ৩ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের বৈঠকে সারা দেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম কর্মসূচি নির্ধারণে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। শরিক দলের নেতা ন্যাপের এনামুল হক বলেন, কীভাবে কর্মসূচি পালন করবেন আগে কমিটি ঠিক করুন। কর্মসূচি ঘোষণা করলেই পালন করা যায় না। আগে তৃণমূলে ১৪ দলকে সংগঠিত করতে হবে। এ সময় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এনামুলের উদ্দেশে বলেন, আপনারা আগে নিজ নিজ দলের কর্মসূচি দিন। শুধু আওয়ামী লীগই কর্মসূচি করবে বা ১৪ দলগতভাবে করতে হবে তা তো ঠিক নয়।

সূত্রমতে, সদ্যসমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনের পাঁচটি ধাপ শেষ হলেও এ পর্যন্ত হাতেগোনা কয়েক জায়গায় প্রার্থী দিতে সক্ষম হয়েছিল ক্ষমতাসীন জোটের শরিক দলগুলো। বেশির ভাগ দলই কোনো প্রার্থী দেওয়া তো দূরের কথা নির্বাচনের ধারেকাছেও ছিল না। ১৪ দলের অন্যতম শরিক দল ওয়ার্কার্স পার্টি। দেশের ৫১টি জেলায় সাংগঠনিক কার্যক্রম রয়েছে। তবে উপজেলা নির্বাচনে মাত্র ২৮টি উপজেলায় প্রার্থী দিতে সক্ষম হয় দলটি। এর মধ্যে নড়াইল সদর, বরিশাল সদর, রাজশাহীর পবা ও দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় একজন পুরুষ ও তিনজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়লাভ করেন। তবে জাতীয় সংসদে তাদের ৬ জন প্রতিনিধি এবং মন্ত্রিসভায়ও ঠাঁই পেয়েছেন পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

জোটের আরেক শক্তিশালী দল জাসদ। এ দলের সারা দেশে ৫৮টি জেলায় সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। ক্ষমতাসীন জোটে এ দলের ৬ জন এমপি রয়েছেন। দলের সভাপতি সরকারের তথ্যমন্ত্রী। উপজেলা নির্বাচনে ১০০ প্রার্থী দিলেও চেয়ারম্যান পায়নি দেশের কোথাও। কুলাউড়ায় একজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান, কুষ্টিয়ার মিরপুরে ভাইস চেয়ারম্যান ও রাজশাহীর বাঘায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়লাভ করেন।

রাজধানীতে কেন্দ্রীয় ১৪ দলীয় জোটের কর্মসূচিতে দেখা মেলে জোটের শরিক গণতন্ত্রী পার্টির। অন্য সময় হাতেগোনা দু-একটি কর্মসূচি ছাড়া কোনো কর্মসূচি নেই। বেশ কয়েকটি জেলায় সাংগঠনিক কর্মসূচি থাকলেও একমাত্র কিশোরগঞ্জ ও গাজীপুর জেলা ছাড়া সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী কোনো কার্যক্রম নেই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২৮টি জেলায় কমিটি এবং কমিটি না থাকলেও ৩২টি জেলায় আমাদের কার্যক্রম আছে। চেষ্টা করছি সারা দেশে কমিটি গঠনের।

শরিক দল সাম্যবাদী দলের বেশ কয়েকটি জেলায় কার্যক্রম থাকলেও সাংগঠনিক অবস্থা ভঙ্গুর। তবে এ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিগত মেয়াদে সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়ে নিজের ভাগ্য গড়ে নিয়েছেন। অন্য দলগুলোর কার্যক্রম দেখা গেলেও এখন আর দিলীপ বড়ুয়া একটি ব্যানার হাতে নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়ান না। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

দেশের প্রাচীন দল ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির ৩৪টি জেলায় পূর্ণাঙ্গ ও ২৬টি জেলায় আহ্বায়ক কমিটি থাকলেও উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার মতো নেতা-কর্মী খুঁজে পায়নি তারা।

একইভাবে বেহাল অবস্থায় রয়েছে কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণআজাদী লীগ, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, জাকের পার্টির। দেশব্যাপী এসব দলের সাংগঠনিক ভিত্তি এখনো গড়ে উঠেনি। জোটেও তারা ফ্রাক্টর হতে পারেনি।

নতুনভাবে আওয়ামী লীগের জোটে যুক্ত হয়েছে বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বাধীন জেপি। জোটে সদ্য যোগ দেওয়া এ দলটির সারা দেশেই সাংগঠনিক কাঠামো রয়েছে।

শেয়ার করুন