আশাবাদীরা বিমানবন্দর পর্যন্ত গেলেন। কিন্তু নববর্ষের কোনো ‘উপহার’ দিলেন না বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। দুবাইয়ের আইসিসি সভা থেকে ফিরে পরশু পুরোনো কথাগুলোই বললেন ঘুরেফিরে—বাংলাদেশ দলের ম্যাচ সংখ্যা আরও বাড়বে, বাংলাদেশ খেলতে যাবে ভারতে ইত্যাদি ইত্যাদি।
বোর্ড সভাপতি অবশ্য চাইলেই নববর্ষের ‘বিস্ময়-উপহার’টা দিয়ে দিতে পারতেন বিমানবন্দরে উপস্থিত সাংবাদিকদের। নির্দিষ্ট করে বলে দিতে পারতেন, আগামী ৮ বা ৯ জুন তিন ওয়ানডের সিরিজ খেলতে বাংলাদেশে আসছে ভারত, ২০১৬ সালে একটি মাত্র টেস্ট খেলতে ভারতে যাবে বাংলাদেশ দল, যেটি কলকাতার ইডেন গার্ডেনে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এ ছাড়া, ২০১৯ সালে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলতে যাবে নিউজিল্যান্ডে, অথবা জানিয়ে দিতে পারতেন ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়া দল আসবে বাংলাদেশ সফরে।
আইসিসির চলমান ২০২০ পর্যন্ত এফটিপির (ভবিষ্যৎ সফর পরিকল্পনা) বাইরে এমন আরও অনেক খেলাই যোগ হতে যাচ্ছে বিসিবির ভবিষ্যৎ পঞ্জিকায়। তবে আইসিসির নতুন নিয়ম অনুযায়ী দ্বিপক্ষীয় সিরিজের ব্যাপারে একমত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দুই বোর্ড তা লিখিতভাবে জানাবে আইসিসিকে। এরপর আইসিসি দুই বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়ে এফটিপিতে তুলবে সিরিজগুলো। এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের খেলাগুলো চূড়ান্ত হতে আরও মাস দুয়েক সময় লাগতে পারে। সে জন্যই হয়তো এসব বিষয়ে এখনই সরাসরি কিছু বলেননি বোর্ড সভাপতি।
বর্তমান এফটিপি অনুযায়ী ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের টেস্ট খেলার কথা ৩৮টি, ওয়ানডে ৬৮টি ও টি-টোয়েন্টি ১২টি। বিসিবির একটি সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের সঙ্গে গত কয়েক মাসের দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে লিখিত চুক্তির ভিত্তিতে ২০২০ সাল পর্যন্ত টেস্টের এই সংখ্যা বেড়ে হতে পারে ৪৬, ওয়ানডে ৮০ এবং টি-টোয়েন্টি ম্যাচ ১৭টি। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সংখ্যা শুধু দ্বিপক্ষীয় সিরিজে, আইসিসি এবং এসিসির ইভেন্ট এসবের বাইরে। আপাতত আলোচনা ২০২০ পর্যন্ত এফটিপিকে ঘিরে হলেও আইসিসির নতুন এফটিপি হবে ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের সিরিজ বা ম্যাচগুলো নিয়ে এখন পর্যন্ত শুধু প্রাথমিক আলোচনাই হয়েছে।
এই ম্যাচ বা সিরিজগুলো কার বিপক্ষে কয়টি, সেটি নির্দিষ্ট করে জানা না গেলেও একটা বিষয় নিশ্চিত—‘বিগ থ্রি’ ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়াসহ বাড়তি ম্যাচ আছে নিউজিল্যান্ড, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও। ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা এখনো চলছে। আর জিম্বাবুয়ে বোর্ডের সঙ্গে বিসিবি আলোচনা করবে অন্যান্য দেশের সঙ্গে খেলাগুলো নিশ্চিত হওয়ার পর। তবে পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এফটিপির বাইরে এখনো কোনো ম্যাচ বা সিরিজ আদায় করা যায়নি বলে জানিয়েছে সূত্র।
বাড়তি সিরিজ ও ম্যাচের বিষয়ে সরাসরি কিছু না বললেও বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান আকরাম খানের কথা, ‘বিভিন্ন বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বাড়তি ম্যাচের চেষ্টা করা হচ্ছে। পুরো প্রক্রিয়াটা শেষ হলে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে পারব।’ বিসিবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরী আশাবাদী, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ দলের ম্যাচের সংখ্যা
কমার তো কোনো সুযোগ নেই-ই, বরং পারফরম্যান্স ভালো হলে দিনে দিনে সেটা বাড়বে, ‘এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। সব দেশের সঙ্গেই আমরা কথা বলেছি বা বলব। সে আলোচনার ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই আমরা কিছু বাড়তি ম্যাচের প্রতিশ্রুতি আদায় করতে পেরেছি। এ ছাড়া, মাঠের পারফরম্যান্স ভালো হলে বাংলাদেশ দলের সঙ্গে আরও বেশি করে ম্যাচ খেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অনেক বড় বোর্ডই।’
শেষের শর্তটাই আসল ব্যাপার। বিসিবি কর্তারা যতই অন্য বোর্ডের দরজায় কড়া নাড়ুন, মাঠের খেলায় উন্নতি না এলে বাংলাদেশের সঙ্গে খেলতে রাজি হবে না কেউই। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ক্রিকেটটাকে ‘বিক্রয়যোগ্য পণ্য’ করে তোলার আসল দায়িত্বটা তাই ক্রিকেটারদেরই।