ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রলীগের নেতা সায়াদ ইবনে মোমতাজ হত্যার দুই সপ্তাহ পর কাল বুধবার ক্লাসে ফিরছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আজ মঙ্গলবার শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন শিক্ষকেরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কোনো ধরনের পরীক্ষা না দেওয়ার শর্তে ক্লাসে ফিরতে রাজি হয়েছেন।
এদিকে শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা, আশরাফুল হক হলের প্রভোস্ট, ওই হলের দুই হাউস টিউটর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরছেন, তবে পরীক্ষায় নয়
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্মারক বিজয় ’৭১-এর পাদদেশে সমবেত হন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নিলেও তাঁদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের পরীক্ষায় তাঁরা অংশ নেবেন না। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সায়াদ হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত অন্যান্যদের গ্রেপ্তার ও সম্পূরক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে সব খুনিকে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান। এ জন্য তাঁরা আগামী মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রশাসনকে সময় বেঁধে দেন। তাঁদের এ দাবি পূরণ না হলে ওই দিন আবার ক্লাস বর্জন করে কঠোর কর্মসূচি দেবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরে তাঁরা একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
ক্লাসে ফিরতে ইচ্ছুক শিক্ষকেরা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে আজ বেলা ১১টায় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভা বসে। সভায় কাল বুধবার থেকে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে গত বুধবার সম্পূরক তদন্ত কমিটি গঠন, দায়িত্ব অবহেলার জন্য অনতিবিলম্বে ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা, প্রক্টরিয়াল বডি ও আশরাফুল হক হলের প্রভোস্টকে অপসারণ এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টাস্ক ফোর্স গঠনের দাবি করেন শিক্ষকেরা। শিক্ষক সমিতির সভাপতি লুত্ফুল হাসান বলেন, আমাদের দাবি অনেকাংশে পূরণ হয়েছে, তবে প্রক্টরিয়াল বডির অপসারণের দাবি অব্যাহত আছে।
ছাত্র উপদেষ্টা, হল প্রভোস্টের পদত্যাগ
শিক্ষক সমিতির দাবির মুখে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা সুলতান উদ্দিন ভূঞা। এ ছাড়া আশরাফুল হক হলের প্রভোস্ট রফিকুল ইসলাম, হাউস টিউটর কামরুল হাছান ও ফুয়াদ হাসান পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁরা আজ সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন। এর আগে ৩ এপ্রিল ছাত্রবিষয়ক বিভাগের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান পদত্যাগ করেন।
সম্পূরক তদন্ত কমিটি গঠন
এর আগে তদন্ত কমিটি গঠন করে ৬ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে প্রশাসন। ওই কমিটির প্রধান ছিলেন মাত্স্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক মোহসীন আলী। কিন্তু জড়িত সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা হয়নি দাবি করে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক সমিতিও সম্পূরক তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ শিক্ষক সমিতিকে সম্পূরক তদন্তের কথা জানান উপাচার্য মো. রফিকুল হক। নতুন এ তদন্ত কমিটির প্রধান কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদের কৃষিশক্তি ও যন্ত্র বিভাগের শিক্ষক আবু তাহের মো. জিয়াউদ্দিন। এ ছাড়া কমিটিতে আছেন মনোরঞ্জন দাস, মো. আকতারুজ্জামান, আবদুল মোমেন মিয়া ও একজন সহকারী প্রক্টর। তবে এ কমিটি কবে নাগাদ প্রতিবেদন দেবে, তা উল্লেখ করা হয়নি।
টাস্ক ফোর্স গঠন
শিক্ষক সমিতির দাবিতে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৫ সদস্যের টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য। আগামী নভেম্বর পর্যন্ত টাস্ক ফোর্সের কার্যক্রম বহাল থাকবে। ফোর্সের আহ্বায়ক করা হয়েছে ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টাকে আর সদস্যসচিব করা হয়েছে প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহ্বায়ককে। টাস্ক ফোর্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতিকে অবহিত করবে।
উপাচার্য রফিকুল হক বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্তকে আমি সাধুবাদ জানাই। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ অব্যাহত রাখতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’
উল্লেখ্য, গত ৩১ মার্চ, সন্ধ্যায় মাত্স্যবিজ্ঞান অনুষদের শেষ বর্ষের ছাত্র সায়াদকে আশরাফুল হক হলের একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে পেটানো হয়। ওই রাতে সায়াদকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ১ এপ্রিল সকাল ১১টার দিকে তিনি ময়মনসিংহ শহরের ট্রমা সেন্টারে মারা যান। এ ঘটনায় হত্যা মামলা হয় এবং মূল অভিযুক্ত ও তাঁর সহপাঠী ছাত্রলীগের নেতা সুজয় কুমার কুণ্ডু, রোকনুজ্জামান, আনিসুজ্জামান ও নাহিদকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালি থানার পুলিশ