শিগগির জিএসপি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই

0
200
Print Friendly, PDF & Email

সরকারের ‘রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ’ আর গার্মেন্ট নেতৃবৃন্দের নির্লিপ্ততার বলি হয়েছে তৈরি পোশাক খাত। পশ্চিমাদের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক বিরোধ আর ৫ জানুয়ারির ‘অগ্রহণযোগ্য’ নির্বাচনের কারণে শিগগির যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি ফিরে পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। ‘বিতর্কিত’ উপায়ে ক্ষমতা গ্রহণের কারণে সরকার দরকষাকষির ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। যে কারণে হাতছাড়া হওয়ার পথে ইউরোপের জিএসপি সুবিধা। এদিকে ‘জনপ্রত্যাশা উপেক্ষা করে’ দ্বিতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় এনে এর পুরোপুরি বাণিজ্যিক সুবিধা নিচ্ছে ভারত। পশ্চিমাদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধের নেতিবাচক প্রভাব ক্রমেই প্রকট হয়ে উঠছে দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত করে জিএসপি পুনর্বহালে একের পর এক নতুন শর্ত দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বিভিন্ন আইনের ঘোরপ্যাঁচে ফেলা হয়েছে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা বা জিএসপি (পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার) ইস্যুটিকে। জিএসপি পুনর্বহাল অনেক পরের কথা, এ বিষয়ে শুনানিই এখন অনিশ্চিত। শুনানির জন্য নতুন দুটি ইস্যু যোগ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মূল জিএসপি কর্মসূচি নবায়ন সংক্রান্ত বিল এবং ১৯৭৪ সাল থেকে অকার্যকর ট্রেড প্রমোশন অথরিটি (টিপিএ) বিল কংগ্রেসের উভয় কক্ষে পাস না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত জিএসপি নিয়ে শুনানি করতে পারবে না দেশটির বাণিজ্য দপ্তর। আর ওই দুটি বিল কংগ্রেসের দুই কক্ষে (সিনেট ও হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ) কবে পাস হবে, তাও অনিশ্চিত। এ কারণে বাংলাদেশের জিএসপি পুনর্বহাল বিষয়ে শুনানি কবে হবে, তার কোনো ঠিক নেই বলে ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস।
গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই খাতের বর্তমান সংকটের দায়ভার সরকারকে বহন করতে হবে। ক্ষমতাসীন দলের কিছু বিতর্কিত রাজনৈতিক পদক্ষেপের কারণে সংকট আরও জটিল হয়েছে। বিশেষ করে তারা ইঙ্গিত করেছেন ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে। এই কারণে যুক্তরাষ্ট্র স্থগিত হওয়া জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দিচ্ছে না। ইউরোপিয় ইউনিয়নে (ইইউ) বাংলাদেশের জিএসপি বাতিলের জোর শঙ্কা জেগেছে। ইইউ’র আবাসিক প্রতিনিধি উইলিয়াম হানা সম্প্রতি তাদের অসন্তোষের কথা প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের কমপ্লায়ান্স ইস্যুতে তিনি মোটেও সন্তুষ্ট নন। এই অসন্তোষ আরও প্রকট হয়েছে সাম্প্রতিক উপজেলা নির্বাচনে সরকারের নগ্ন হস্তক্ষেপের কারণে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দায়ভার গার্মেন্ট ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকেও বহন করতে হবে। কারণ এই খাতকে টিকিয়ে রাখতে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখেননি ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ। তারা ব্যবসার স্বার্থে পশ্চিমাদের সঙ্গে সরকারকে সংঘাতে যেতে বারন করেননি। সংকট উত্তরণে পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে দুরত্ব কমিয়ে আনার কোন কার্যকর উদ্যোগ নেই। এজন্য বিজিএমইএ বিকেএমইএ নেতৃবৃন্দ সরকারকে কোন চাপও দিচ্ছেন না। এভাবে পক্ষান্তরে প্রতিযোগী দেশগুলোকে- বিশেষ করে প্রধান প্রতিযোগী ভারতকে বাংলাদেশের বাজার দখলের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এদিকে ভারতও আওয়ামী লীগকে পুনরায় ‘ক্ষমতায় এনে’ পুরোপুরি বাণিজ্যিক সুবিধা নিচ্ছে। বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বাজার দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে ভারত। আর দেশটিকে সেই সুযোগ করে দিতে দেশের বাণিজ্যের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে নির্লিপ্ত রয়েছে সরকার। সরকারকে সহযোগিতা যুগিয়ে যাচ্ছে গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ।
যুক্তরাষ্ট্র শর্তপূরণের কথা বললেও তারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে বিবেচনায় নিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এদিকে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদও শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ড. ইউনূস ইস্যু বিবেচনায় নিলে সব শর্ত পূরণ করলেও যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দেবেনা।
গত বছরের ২৭ জুন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের জিএসপি (শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার) সুবিধা স্থগিত করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক কখনো জিএসপি সুবিধা না পেলেও পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ ও শ্রমিক নিরাপত্তার প্রসঙ্গ টেনেই জিএসপি স্থগিত করে ওবামা প্রশাসন। জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে বাংলাদেশকে ১৬টি শর্ত দেয় যুক্তরাষ্ট্র। জুলাইয়ের মধ্যেই জিএসপি পুনর্বহালের আশায় যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া কর্মপরিকল্পনার ১৬ দফা শর্তের বেশির ভাগই ইতোমধ্যে করেছে সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদা অনুযায়ী, ১৫ এপ্রিল (মঙ্গলবার) কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তর ইউএসটিআরের কাছে প্রতিবেদন পাঠাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সরকারের ধারণা ছিল, মে মাসের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে শুনানি করবে আর জুলাইয়ের মধ্যেই জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তে আসবে। বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে আগামী জুলাই মাস দুরের কথা- শিগগির জিএসপি পুনর্বহালের আশা পূরণ হওয়ার কোনো স্বপ্ন দেখতে পারছেন না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
স্থগিত হওয়া জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ওই দুটি বিলই কেবল বাধা নয়, দেশটির পক্ষ থেকে ১৬ দফার বাইরেও নতুন নতুন শর্ত আসায় হতাশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র যে ১৬টি শর্ত দিয়েছে, তার মধ্যে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ দেওয়ার কথা বলা আছে। সরকার ওই শর্ত মেনে গার্মেন্ট কারখানাগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন ব্যবস্থা চালু করছে। কিন্তু অনেক কারখানায়ই ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত শ্রমিকরা নেতার মতো আচরণ করলেও মালিকরা তাঁদের সতর্ক পর্যন্ত করতে পারছেন না। যুক্তরান্ত্রর ঢাকা দূতাবাস ও দেশটি থেকে সফরে আসা বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা এখন বলছেন, কেবল ট্রেড ইউনিয়নের সুযোগ দিলেই হবে না, এর সঙ্গে সম্পৃক্ত শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে মালিকরা যাতে কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারেন, তাও নিশ্চিত করতে হবে। রাজনৈতিক কারণেই এসব শর্ত দেয়া হচ্ছে বলে মনে করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তবে দেশটি যেভাবে একের পর এক শর্তারোপ করছে, তাতে মনে হয় তারা বাংলাদেশের স্থগিত হওয়া জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের বিষয়ে সহানুভূতিশীল নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে হলে বাংলাদেশকে আমেরিকার রাজনৈতিক বিষয় বুঝতে হবে। আর তা হলো ৫ জানুয়ারির নির্বাচন। আমেরিকা চায় বাংলাদেশে আরেকটি অংশগ্রণমূলক নির্বাচন এবং তার জন্য সংলাপ। সেটা নিশ্চিত না হওয়ার আগ পর্যন্ত তারা জিএসপি সুবিধাকে চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবে। এই সময়ে তাদের কথা-বার্তাতেও তা স্পষ্ট হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে দেখা করার পর ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা বলেছেন, জিএসপি ফিরে পেতে বাংলাদেশ বেশ কিছু কাজ করেছে, তবে আরো অনেক কাজ বাকি। মার্কিন সহাকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালও ওই একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন, জিএসপি ফিরে পেতে বাংলাদেশকে আরো অনেক কাজ করতে হবে। এর সঙ্গে তিনি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে আমেরিকার আগের অবস্থানের কথাই জানিয়েছেন। বলেছেন, সংলাপ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম মন্ত্রণালয় মনে করছে, শর্ত পূরণে কিছু অগ্রগতি হলেও জিএসপি ফিরে পাওয়ার জন্য তা যথেষ্ট নয়। ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটিতে এক শুনানিতে দেশটির ব্যুরো অব ইন্টারন্যাশনাল লেবার এফেয়ার্সের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারির দায়িত্বে থাকা এরিক বিয়েল বলেন, জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে বাংলাদেশকে আরো কাজ করতে হবে।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, জিএসপি ফিরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে দশম সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধীতার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে পারে ওবামা প্রশাসন।  সব শর্ত পূরণ করার পরও যদি রাজনৈতিক ইস্যু ও ড. ইউনূস প্রসঙ্গ টেনে আনা হয় তাহলে জিএসপি সুবিধা নাও পাওয়া যেতে পারে। সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সভা শেষে সচিবালয়ে তিনি সাংবাদিকদের এই কথা বলেন।
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের মূল জিএসপি কর্মসূচি নবায়ন না করা পর্যন্ত বাংলাদেশের স্থগিত হওয়া জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল বিষয়ে ইউএসটিআর কোনো ধরনের শুনানির আয়োজন করবে না। তার পরও যেহেতু দেশটি ১৫ এপ্রিলের মধ্যে তাদের দেওয়া কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতির তথ্যসংবলিত প্রতিবেদন পাঠাতে বলেছে, সময়মতো আমরা তা পাঠিয়ে দেব। দেশটির মূল কর্মসূচি নবায়ন করার পরই তারা শুনানি করবে। তবে তা কবে হবে, সে সম্পর্কে কোনো ধারণা করা সম্ভব নয়।
ওয়াশিংটনে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম গত ৫ মার্চ ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও শ্রম মন্ত্রণালয়ে একটি ফ্যাক্স বার্তা পাঠান। তাতে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের মূল জিএসপি কর্মসূচি ২০১৩ সালের ৩১ জুলাই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। ওই বছরের মধ্যেই তা নবায়ন করার জন্য বহু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে সিনেটর টম কুবার্নের আপত্তির মুখে বিলটি সিনেটেই আটকে থাকে। এ কারণে ২০১৩ সালের মধ্যে তা নবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এ ক্ষেত্রে জিএসপি নবায়নের বিকল্প উদ্যোগ নিতে পারে দেশটি। তবে জিএসপি নবায়নের সঙ্গে টিপিএ বিলটিও যুক্ত হয়ে গেছে। এখনো টিপিএ বিল নিয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। তাই ধারণা করা যায়, কংগ্রেসে মূল জিএসপি কর্মসূচি নবায়ন হওয়ার পরই ইউএসটিআরের জিএসপি-বিষয়ক বাণিজ্য উপকমিটি আনুষ্ঠানিক শুনানির আয়োজন করবে। তার পরই বাংলাদেশের জিএসপি পুনর্বহালের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানা যাবে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের ফরেন রিলেশনস কমিটির চেয়ারম্যান রবার্ট ম্যানেন্দেজ বিজিএমইএকে লেখা চিঠিতে বলেছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত মালিক বা ব্যবস্থাপকরা ট্রেড ইউনিয়নের সংগঠক ও সদস্যদের বিরুদ্ধে হয়রানি, নির্যাতন, সহিংসতা বন্ধ না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত জিএসপি পুনর্বহালের জন্য কিছুই করা হবে না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপির আওতায় বাংলাদেশের রপ্তানি আয় নগণ্য। তবে সম্প্রতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বালি সম্মেলনে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর বেশির ভাগ পণ্যকেই উন্নত দেশগুলো শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই সিদ্ধান্ত যেকোনো সময় কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিশ্বের অন্য স্বল্পোন্নত দেশগুলো সব পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পাবে। আর জিএসপি স্থগিত থাকলে তখন বাংলাদেশ ওই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে। এতে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানির বাজার যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
জিএসপি ইস্যুর নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যেই গার্মেন্ট খাতে স্পষ্ট হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি পোশাক শিল্পের দুই প্রধান উপখাত নিটওয়্যার ও ওভেন। এ নিয়ে উদ্যোক্তা-রফতানিকারকদের শঙ্কা, বর্তমান কার্যাদেশের পরিমাণ আগামী দিনগুলোতে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
রফতানি পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, এখন পর্যন্ত রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি বজায় থাকলেও এর হার ক্রমেই কমে এসেছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নিট ও ওভেন খাতে যথাক্রমে ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশ ও ১৫ দশমিক ৯২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আর চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত যা ছিল যথাক্রমে ১৮ দশমিক ১৩ শতাংশ ও ১৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। ডিসেম্বরে প্রবৃদ্ধির হার ছিল আরও বেশি, যথাক্রমে ১৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ ও ২০ দশমিক ৩৭ শতাংশ। নভেম্বরে এ দুই খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল যথাক্রমে ২০ দশমিক ৪৮ শতাংশ ও ২১ শতাংশ। ব্যবসায়ীদের শঙ্কা, শিগগিরই নেতিবাচক ধারায় পৌঁছবে প্রবৃদ্ধির সূচক।
তৈরি পোশাকের রপ্তানি আদেশও দিন দিন কমছে। বিজিএমইএ’র হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১২ সালে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আদেশ ছিল ২৯ হাজার ৪১৬ টি। প্রতিমাসে গড়ে ২৪শ ৫১টি। ২০১৩ সালে এই আদেশ ছিল ৩০ হাজার ১টি। মাসে গড়ে ২৫শত টি করে। আর ২০১৩ সালের প্রথম ৭ মাসে গড় আদেশ ছিল ২৭ শ ২১টি করে। কিন্তু শেষ ৫ মাসে এর গড় কমে এসে দাড়ায় ২১শ ৯০টিতে।
এসব পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত নভেম্বর ডিসেম্বরে যখন টানা হরতাল অবরোধ ছিল তখন গার্মেন্ট রপ্তানিতে ২০ শতাংশের ওপরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আর ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরে এলেও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশে নেমে এসেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে- মূল্য সমস্যা রাজনৈতিক অস্থিরতা বা কারখানার কর্মপরিবেশ (কমপ্লায়ান্স) ইস্যু নয়, মূল সমস্যা পশ্চিমাদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ। আর এ কারণেই জানুয়ারি থেকে আশঙ্কাজনক হারে কমছে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি যা শিগগিরই নেতিবাচক ধারায় পৌঁছার তীব্র শঙ্কা জেগেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন- বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধার সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধকে যুক্তরাষ্ট্র জড়াবে না বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
বিজিএমইএ’র সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম ইনকিলাবকে বলেন, রাজনৈতিক বিরোধের বিষয়টি সরকার দেখবে। যুক্তরাষ্ট্রের অধিকাংশ শর্ত আমরা ইতোমধ্যে পূরণ করেছি। শর্ত পূরণ হলে আমাদের জিএসপি ফিরে পাওয়া উচিত বলে মনে করি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ জিএসপি সুবিধার মাধ্যমে ৫৬ মিলিয়ন ডলার আয় করে। যার মধ্যে পোশাক খাতে মাত্র ১০ মিলিয়ন ডলার। আর্থিক বিবেচনায় বিষয়টি তৈরি পোশাক খাতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ না হলেও দেশের ইমেজ সংকট হিসেবে দাঁড়িয়েছে এই জিএসপি। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের ২০ ভাগ যুক্তরাষ্ট্রে আর ৬০ ভাগ ইউরোপিয়ান ইউনিয়ানের বাজারে রপ্তানি হয়। যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি ইস্যুর প্রভাব বাংলাদেশের পুরো বাজারেই পড়েছে। এতে রপ্তানি ও রপ্তানি আদেশ ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। 

শেয়ার করুন