বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসার নবদিগন্তের সূচনা হলো : প্রধানমন্ত্রী

0
108
Print Friendly, PDF & Email

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের বৃহত্তম ক্যান্সার হাসপাতাল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসার নব দিগন্তের সূচনা হলো।
প্রধানমন্ত্রী জনগণের অর্থে নির্মিত এ প্রতিষ্ঠানকে জনগণের সেবায় উৎসর্গ করার জন্য আহ্ছানিয়া মিশন কর্তৃপরে প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, আমি আশা করব, সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে ক্যান্সার রোগীরা যাতে অতি সহজে ও কম খরচে এখানে চিকিৎসার সুযোগ পায় সে দিকে হাসপাতাল কর্তৃপ সার্বণিক দৃষ্টি রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল রাজধানীর উত্তরায় আহ্ছানিয়া মিশন ক্যান্সার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সমাজকল্যাণমন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এবং ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের উপদেষ্টা ও আহ্ছানিয়া মিশন ক্যান্সার অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার রফিকুল হক।
আহ্ছানিয়া মিশনের সভাপতি কাজী রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন মিশনের উপদেষ্টা সৈয়দা দীনা হক।
শেখ হাসিনা বলেন, ক্যান্সার ও সাধারণ উভয় প্রকার রোগীর চিকিৎসার েেত্র আগামীতেও এ হাসপাতালের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে অতীতের মতো সরকারের প থেকে সব ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী এ প্রতিষ্ঠানটিকে ক্যান্সার চিকিৎসার েেত্র একটি অত্যাধুনিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে সমাজের সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়ার অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, ‘আসুন, সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে জনগণের কল্যাণে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সবাই একত্রে কাজ করি, তাহলেই বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মাথা উঁচু হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন কর্তৃপ জনগণের অর্থে এ ধরনের একটি বিশাল প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সম হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করতে যারা অকুণ্ঠচিত্তে অর্থসাহায্য দিয়েছেন আমি তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শিা, স্বাস্থ্য, জীবন-জীবিকা, মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার েেত্র বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিশন দ্বারা নির্মিত দেশের বৃহত্তম এই ক্যান্সার হাসপাতাল, ক্যান্সার চিকিৎসার েেত্র একটি বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করেছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের ল্েয নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের রাষ্ট্র আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত হবে।
পরে প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালের উদ্বোধন ঘোষণা করেন এবং মুনাজাত অনুষ্ঠানে অংশ নেন। উদ্বোধনের পর শেখ হাসিনা হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন।
অনুষ্ঠানে হাসপাতালের উন্নয়নের জন্য ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ১৫ কোটি টাকা ও আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ১০ লাখ টাকার চেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেন। তুরাগ নদীর তীরে ৬.৫ বিঘা জমির ওপর নির্মিত ১৫ তলাবিশিষ্ট এ হাসপাতাল হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ১৯৯৭ সালের আওয়ামী লীগ সরকার হাসপাতালের জন্য এ জমি বরাদ্দ দেয়।
হাসপাতাল কর্তৃপ জানায়, ৪.৫ লাখ বর্গফুট স্পেসের এ হাসপাতালটির কাজ তিন ধাপে শেষ হবে। প্রথম ধাপের কাজ শেষ করে গতকাল থেকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান শুরু করা হয়েছে। ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালের দ্বিতীয় ধাপের কাজ শেষ হবে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে এবং তৃতীয় ধাপের কাজ শেষ হবে ডিসেম্বরে।
কর্তৃপ জানান, প্রাথমিকভাবে হাসপাতাল নির্মাণের জন্য আনুমানিক ব্যয় ২৫৬ কোটি টাকা ধরা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান হিসাব অনুযায়ী মোট ব্যয় হবে ৩৭৮ কোটি টাকা।
বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার পাশাপাশি ব্যক্তি অনুদানের সাহায্যসহ মোট ১১২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা হাসপাতাল কর্তৃপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে সমাজকল্যাণ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুদান রয়েছে ৬৪ কোটি টাকা।
হাসপাতাল কর্তৃপ জানান, ‘নো লাভ নো তি’ ভিত্তিতে হাসপাতালটি পরিচালিত হবে। দরিদ্রদের ৩০ শতাংশ ছাড়ে ও অতি দরিদ্রদের বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হবে।
হাসপাতালের বিভিন্ন চিকিৎসা ও পরিষেবার ব্যয়ে আগ্রহী দাতাগণ নিজের নামে বা প্রিয়জনের নামে তা চালু করতে পারবেন, এমন বিধান রাখা হয়েছে। তারপরও বাংলাদেশের অন্যান্য শীর্ষ হাসপাতাল থেকে এখানে চিকিৎসা ব্যয় কম হবে।
কর্তৃপ জানান, দরিদ্ররা যেন বিনামূল্যে বা ভর্তুকি দিয়ে চিকিৎসাসেবা পেতে পারে এ জন্য আহছানিয়া মিশন ইতোমধ্যে একটি তহবিল গঠন করেছে। ১০০ কোটি টাকার সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রার বছরব্যাপী সংরতি এ তহবিল থেকে বহির্বিভাগের চিকিৎসার জন্য ১.৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।

শেয়ার করুন