মামলায় জর্জরিত ঢাকার দু’টি সিটি করপোরেশন

0
190
Print Friendly, PDF & Email

মামলায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে ঢাকার দু’টি সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বিরুদ্ধে রয়েছে এক হাজার ২০০ বেশি মামলা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বিরুদ্ধে রয়েছে সাড়ে ৮০০ মামলা। বছরের পর বছর এসব মামলা পড়ে থাকলেও সুরাহা হচ্ছে খুব কমই। মামলা থাকায় প্রতিষ্ঠান দু’টির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিনিয়ত আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া মামলার কাগজপত্র তৈরিতেও ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে তাদের। ফলে কাজে বিঘœ সৃষ্টির পাশাপাশি কোটি কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান দু’টির।
ডিএনসিসির ভারপ্রাপ্ত আইন কর্মকর্তা ফসি উল্লাহ জানান, রায়েরবাজার কবরস্থান নিয়ে সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী জমি অধিগ্রহণ করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে এসব মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে শুনানির সময় তিন মামলা তুলে নেন বাদিরা। ১৩টি মামলা বর্তমানে আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। তিনি আরো জানান, গাবতলীতে আমরা ২০০৫ সালে একটি আধুনিক জবাইখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেই। যেখানে ১০ হাজার পশু জবাই করার সুব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু চারটি মামলার কারণে এখনো পর্যন্ত তা নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। ফসি উল্লাহ জানান, ডিএনসিসির বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ৮০০ মামলা রয়েছে। এ কারণে মামলার কাগজপত্র তৈরি, আদালতে হাজিরাসহ বিভিন্ন কাজে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। এতে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানটির কাজে মারাত্মক বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। তা ছাড়া মামলা পরিচালনা বাবদ প্রতি বছর এক কোটি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে বলে তিনি জানান।
ডিএসসিসির আইন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে এক হাজার ২০০ বেশি মামলা রয়েছে। এসব মামলার মধ্যে সম্পত্তি বিভাগ, রাজস্ব বিভাগ, প্রকৌশল বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মামলা রয়েছে। সম্পত্তি বিভাগের বিরুদ্ধে রয়েছে ৮০০ মামলা, রাজস্ব বিভাগের বিরুদ্ধে রয়েছে ৩০০ মামলা ও প্রকৌশল বিভাগের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা রয়েছে বলে তিনি জানান। এসব মামলার মধ্যে রয়েছে বিভাগীয় মামলা, রিট পিটিশন, সার্টিফিকেট মামলা, লিভ টু আপিল, টাইটেল মামলা, স্বত্বের মামলা প্রভৃতি।
গত কয়েকদিনে ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, তিনি মামলার কাগজপত্র নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তিনি জানান, দিলকুশা কার পার্কিং নিয়ে সিটি করপোরেশনের বিরুদ্ধে ১১টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলা নিয়ে তাকে নিয়মিত আদালতে যেতে হচ্ছে। এ ছাড়া কাগজপত্র তৈরিতেও সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। এ কারণে বিভাগীয় অন্যান্য কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
একইভাবে সম্পত্তি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মামলার কাগজপত্র তৈরি নিয়ে ব্যাপক ব্যস্ত। যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার মার্কেট নিয়ে সাতটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের এ ব্যস্ততা বলে তারা জানান। এ কারণে কথা বলারও সময় নেই তাদের ।
ডিএসসিসির আইন কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম বলেন, মামলা পরিচালনার জন্য আমাদের ৭০ জন প্যানেল আইনজীবী রাখতে হচ্ছে। প্রতিটি মামলা নিষ্পত্তির জন্য উচ্চ আদালতের আইনজীবীকে ৭০ হাজার এবং নিম্ন আদালতের আইনজীবীকে ৪০ হাজার টাকা করে দিতে হয়। এ কারণে তাদের ফি বাবদ প্রতি বছর বাজেট রাখা হয় ৮০ লাখ টাকা। এভাবে বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকা চলে যাচ্ছে মামলার পেছনে।
এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আনছার আলী খান নয়া দিগন্তকে বলেন, মামলার কারণে এক দিকে আমাদের অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হচ্ছে অন্য দিকে এসব খাত থেকে যে আয় হওয়ার কথা ছিল তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি আমরা। তিনি বলেন, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এ জন্য মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগ করা হচ্ছে।

শেয়ার করুন