আত্মগোপনেও তৎপর জামায়াতে ইসলামী

0
127
Print Friendly, PDF & Email

জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের আশঙ্কা। যুদ্ধাপরাধের মামলায় একের পর এক শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ। সারা দেশে কার্যালয় বন্ধ। সভা-সমাবেশ দূরে থাক, প্রকাশ্যে বের হতেই পারেন না নেতা-কর্মীরা। তৃণমূল থেকে শুরু করে শীর্ষ পর্যায়ের সব নেতার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা। মাথায় গ্রেফতারি পরোয়ানা। এত কিছুর পরও ভালোই চলছে জামায়াতে ইসলামী। যার প্রমাণ মেলে সদ্যসমাপ্ত পাঁচ দফা উপজেলা নির্বাচনে। চেয়ারম্যান পদে ৩৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান ১১৭ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তাদের সমর্থিত ৩৪ জন প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

জামায়াতের ভাষ্য অনুযায়ী, গত ৫ বছরে তাদের বিরুদ্ধে লক্ষাধিক মামলা, এসব মামলায় ৮ লাখ নেতা-কর্মীকে আসামি, ৫ লাখ নেতা-কর্মীকে অভিযুক্ত, লক্ষাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বর্তমানে অনেকে জামিনে। মগবাজারের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারা দেশের কার্যালয় বছরের পর বছর বন্ধ। কর্মসূচি বলতে ঝটিকা মিছিল-ভাঙচুর। আর গোপন স্থান থেকে মিডিয়ায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানো। উচ্চ আদালতে দলটির নিবন্ধনের বিষয়টি মীমাংসার অপেক্ষায় থাকলেও নিষিদ্ধ সংগঠনের মতোই আচরণ করা হচ্ছে।

জানা যায়, জামায়াতের ২১ সদস্যের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের ১২ জন কারাগারে, সাতজন বিভিন্ন মামলার আসামি হয়ে আত্মগোপনে। বাকি দুজনের একজন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতাদের প্রধান আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক। তিনি আইনি বিষয়াদি ছাড়া দলীয় অন্য কর্মকাণ্ডে সক্রিয় নন। তিনি প্রায় চার মাস ধরে দেশের বাইরে। অপরজন ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবু নাসের মো. আবদুজ জাহের। তিনিও দলীয় কর্মকাণ্ড থেকে দূরে। দলের ঢাকা মহানগর কমিটির সবাই আত্মগোপনে। এ অবস্থায় একাধিক মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দল পরিচালনা করছেন ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ। নেতা-কর্মীরা জানান, শীর্ষ নেতারা জেলে থাকায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় সংগঠন চলছে দলীয় গঠনতন্ত্রের জরুরি বিধান অনুযায়ী। এতে কমিটি গঠনসহ সংগঠনের স্বাভাবিক নিয়মানুযায়ী সব কাজ চলছে না। তবে দেশের অন্যত্র গোপনে হলেও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড কিছুটা বজায় রয়েছে। সে অনুযায়ী দুই বছর মেয়াদি জেলা কমিটির মেয়াদ থাকলেও এক বছর মেয়াদি উপজেলা কমিটিগুলোর মেয়াদ গত বছর ডিসেম্বরেই শেষ হয়েছে। তাই জরুরিভাবে এসব কমিটি পুনর্গঠনের কাজ চালানো হচ্ছে। কমিটি গঠন ছাড়াও অভ্যন্তরীণভাবে ঘোষিত সাংগঠনিক পক্ষ উপলক্ষে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ ও কর্মপরিষদ সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত আঞ্চলিক তত্ত্বাবধায়করা সারা দেশে সফর করছেন। একই সঙ্গে জামায়াতের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোরও কমিটি পুনর্গঠনসহ সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নতুন কমিটি চূড়ান্ত হয়েছে ইসলামী ছাত্রী সংস্থার। নতুন পরিকল্পনায় মাঠে নেমেছে জামায়াত। আন্দোলনের পাশাপাশি রাজনীতির মাঠে আবার সক্রিয় হওয়ার পরিকল্পনা করছে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির। প্রথম পর্যায়ে চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি থেকে ছয় মাসের পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামে দলটি। লক্ষ্য সংগঠনকে শক্তিশালী করা। দেশকে ১৫টি সাংগঠনিক অঞ্চলে বিভক্ত করে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা গোপনে সফর করে তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ কর্মসূচির মধ্যে নিজেদের সংগঠিত করছেন। তবে জুন থেকে শুরু করবে দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত আন্দোলন কর্মসূচি। লক্ষ্য থাকবে সরকারের ক্ষমতায় আঘাত করা। জামায়াতের রাজনীতির ভবিষ্যৎ কী- এমন প্রশ্নে দলটির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা বলেন, জামায়াতের অস্তিত্বের প্রশ্নটিই এখন দলের নেতা-কর্মীদের কাছে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। জামায়াতের নেতারা বলছেন, তাদের নেওয়া পরিকল্পনায় রাজনৈতিক কর্মসূচির মধ্যে থাকবে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। পাশাপাশি থাকবে দিবস ও বিষয়ভিত্তিক রুটিন কর্মসূচি। মিছিল-মিটিং সভা-সমাবেশও করবে, তবে যেখানে সম্ভব হবে সেখানে। এসব করতে গিয়ে সহিংসতা যেন না ঘটে বা কোনো পক্ষের সঙ্গে যেন সাংঘর্ষিক না হয়, সেটিও তারা পরিকল্পনায় নিয়েছে। এর মধ্যে দিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করে আগামী বছরে সরকার পতনের আন্দোলনে নামবে দলটি। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সরকার জামায়াত নেতাদের হত্যা করে দলকে নেতৃত্বশূন্য করতে চায়। এ লক্ষ্যেই দেশে চলছে বিচারবহির্ভূত নির্মম হত্যাকাণ্ড, মিছিলে অব্যাহতভাবে গুলিবর্ষণ ও গণগ্রেফতার। কিন্তু জনগণ আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটাবে।

শেয়ার করুন