ওএসডিই শেষ নয়, এখন হয়রানিরও অভিযোগ

0
120
Print Friendly, PDF & Email

৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর প্রায় তিন মাস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সচিবালয়ে অফিস করতে পারছেন না মহাজোট সরকারের সময় ওএসডি হওয়া কর্মকর্তারা। মাঝে এসব কর্মকর্তা তাদের দাবি নিয়ে দুজন সচিবের সঙ্গে দেনদরবার করলেও তার কোনো ফল হয়নি। বরং এখন চাকরি নিয়ে চিন্তিত তারা।

এখন ওএসডি কর্মকর্তাদের সচিবালয়ের প্রবেশপথে হয়রানির শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সচিবালয়ে প্রবেশে বাধা ও পুলিশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করা হয়েছে ওএসডি কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে।

একজন ওএসডি কর্মকর্তা নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “আমরা সাত বছর ধরে বঞ্চিত। ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের আগে জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে বেশ কবার দেখা করেছি আমরা। কিন্তু এখনো আমরা কোনো দায়িত্ব পাইনি। তার ওপর এখন সচিবালয়ে পুলিশি হয়রানি করা হয়েছে। অনেক কর্মকর্তা পুলিশের ভয়ে সচিবালয়ে যাচ্ছেন না।”

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী বেগম ইসমত আরা সাদেক নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “বর্তমান সরকারের মাত্র কয়েক মাস পার হয়েছে। এখনো আমরা ভালো করে ওএসডি কর্মকর্তাদের তালিকা সম্পূর্ণ করতে পারিনি। ওএসডি কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি হলে তাদের যোগ্যতা অনুসারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হবে।”

কাউকে কাউকে দলীয় পরিচয়ে চিহ্নিত করায় ওএসডি কর্মকর্তারা সচিবালয়ে আসতে পারছেন না, এমন অভিযোগ নাকচ করে দেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, “সরকারি কর্মকর্তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। এখানে কোনো দল নেই। তারা সচিবালয় আসতে পারছেন না, এটা সত্য নয়।”

সচিবালয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এডিসি কাজী মশিউর রহমান এ ব্যাপারে নতুন বার্তা ডটকমকে বলেন, “সচিবালয়ে আসা কোনো কর্মকর্তাকে পুলিশ হয়রানি করে না। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে কাজ করে। এখানে কারো দলীয় পরিচয় দেখা হয় না। হয়রানির অভিযোগ মিথ্যা।”

২০০৯ সালে ক্ষমতার পালাবদলের পর ভিন্নমতাবলম্বী অনেক কর্মকর্তার ভাগ্যে বিপরর্যরয় নেমে আসে। ওএসডি করা হয় অনেক কর্মকর্তাকে। তারা প্রতিদিন সচিবালয়ে গিয়ে বসার জায়গা না পেয়ে লাইব্রেরিতে পত্রিকা পড়ে সময় কাটান। আবার অনেক কর্মকর্তা কেন্টিনে চা পান বা অন্যভাবে ঘোরাঘুরি করেন। গত ছয় বছর ধরে এভাবেই কাটছে তাদের।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর ওএসডি ও পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তারা তাদের দাবি নিয়ে কথা বলেন দুজন সচিবের সঙ্গে। প্রায় অর্ধশত কর্মকর্তা মন্ত্রিপরিষদ-সচিব ও জনপ্রশাসন-সচিবের সঙ্গে দেখা করে তাদের পদায়ন ও পদোন্নতির দাবি জানান। তাদের বিএনপি-জামায়াতের সমর্থক হিসেবে চিহ্নিত করে ওএসডি ও পদোন্নতিবঞ্চিত করে রাখা হয়েছে বলে তারা তখন অভিযোগ করেন।

ওই সময় জনপ্রশাসন-সচিব আবদুস সোবহান সিকদারের দপ্তরে গিয়ে ওএসডি কর্মকর্তারা বলেন, পদোন্নতি পাওয়ার সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাদের কয়েক দফায় বঞ্চিত করা হয়েছে। একই সঙ্গে অনেককে দীর্ঘদিন ধরে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে যেন তাদের পদোন্নতি ও পদায়ন করা হয়।

এরপর কর্মকর্তারা যান মন্ত্রিপরিষদ-সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞার দপ্তরে। সেখানেও তারা পদায়ন ও পদোন্নতির দাবি করেন।

সেই সময় একজন ওএসডি যুগ্ম সচিব বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে ওএসডি করে রাখায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছি। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য কাউকে বঞ্চিত না করার কথা, তাই প্রতিকার চেয়েছি।”

এ ছাড়া অনেকের চাকরিকাল তখন শেষ হওয়ায় পথে ছিল বলে তারা পদোন্নতি ও পদায়নের জন্য শেষ চেষ্টা করেন।

কিন্তু নির্বাচনকালীন সরকারের সময় ওই কর্মকর্তাদের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। নতুন সরকারের তিন মাস হতে চলল, এখনো তাদের ভাগ্য ঝুলে আছে। বরং তারা এখন চাকরির নিশ্চয়তা নিয়েই চিন্তিত।

ক্ষমতার পরিবর্তনের পর সব সরকারের সময়ই সরকারি কর্মকর্তাদের একটা অংশকে এভাবে ওএসডি করা প্রশাসনে সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা বিএনপির আমলে যেমন হয়েছে, আওয়ামী লীগ বা মহাজোট সরকারের সময়ও হয়েছে। ক্ষমতায় এসেই কিছু কিছু কর্মকর্তাকে ভিন্নমতাবলম্বী চিহ্নিত করে ওএসডি করা হয়। এর মধ্যে অনেকে কারো ব্যক্তিগত ঈর্ষা ও পূর্বশত্রুতার শিকারও হন।

ওএসডির এই সংস্কৃতির কারণে বহু কর্মকর্তাকে যেমন বসিয়ে বসিয়ে সরকারি কোষাগার থেকে বেতন দিতে হয়, তেমনি প্রশাসন বঞ্চিত হয় দক্ষ কর্মকর্তাদের সেবা থেকে।

জনপ্রাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মহাজোট সরকারের গত মেয়াদে ৩৪৫ জন সরকারি কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে। এর মধ্যে সচিব পর্যায়ের সাতজন, অতিরিক্ত সচিব ৪০ জন, যুগ্ম সচিব ৯৯ জন, উপসচিব ১২৩ জন, সিনিয়র সহকারী সচিব ৬৭ জন এবং সহকারী সচিব নয়জন।

বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে (২০০১-২০০৭) সালে ওএসডি করা হয় ৪১০ জনকে। এর মধ্যে সচিব ১৭ জন, অতিরিক্ত সচিব ৪০ জন, যুগ্ম সচিব ৬০ জন, উপসচিব ১৩৬ জন, সিনিয়র সহকারী সচিব ৭৪ জন এবং সহকারী সচিব ৮৩ জন।

শেয়ার করুন