সংঘাতের রাস্তা ছেড়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনেই নিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে মঙ্গলবার রাতে দুর্গাপুরের এক হোটেলে সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি জানিয়ে দিলেন, ঘোরতর আপত্তি থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন এক জন জেলাশাসক ও পাঁচ জেলার এসপি-কে সরানোর যে নির্দেশ দিয়েছে, তা তিনি মেনে নিচ্ছেন।
আজ, বুধবার সকালেই বদলি কার্যকর করা হবে বলে নবান্ন সূত্রে খবর। যদিও ভোট চুকলেই ওই সব অফিসারেরা নিজের নিজের পদে ফিরে আসবেন বলে এ দিন ঘোষণা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
সোমবার শেষ দুপুরে কমিশনের নির্দেশ জানার পরে মুখ্যমন্ত্রী ‘চ্যালেঞ্জ’ ছুড়ে দিয়ে বলেছিলেন, তিনি ওই নির্দেশ মানবেন না। প্রয়োজনে তিনি জেলে যেতেও প্রস্তুত। কিন্তু কোনও অফিসারকে সরানো হবে না। তার নির্দেশে কমিশনকে তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আর্জি জানানো হবে বলে ঠিক হয়। সেই মতো মঙ্গলবার সকালেই মুখ্যসচিবের চিঠি পৌঁছয় দিলিস্নতে, কমিশনের সদর দফতরে। দুপুরে জরুরি বৈঠকে বসে কমিশনের ফুল বেঞ্চ। বিকেলে তারা জানিয়ে দেয়, রাজ্য সরকারের আর্জি তারা মানছে না।
বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে অফিসার বদলের সিদ্ধান্ত কার্যকর না-হলে রাজ্যে ভোট স্থগিত করে দেওয়া হতে পারে বলে ইঙ্গিতও মেলে কমিশন সূত্রে। এর ফলে যে সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হবে, তার দায়ও যে রাজ্য সরকারের উপরে বর্তাবে সেটাও ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দেয় কমিশন।
কমিশনের জবাবি চিঠি নবান্নে পৌঁছনোর পরেই মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র পদস্থ অফিসারদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন। সেখানেই ঠিক হয়, কমিশনের নির্দেশ মেনে নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানানো হবে। সেই মতো টেলিফোনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেন শীর্ষ সচিবরা। এর ঘণ্টা দুয়েক পরেই এ দিন রাত আটটা নাগাদ দুর্গাপুরে কমিশনের নির্দেশ মেনে নেওয়ার কথা জানিয়ে দেন মমতা। বলেন, “আই রেসপেক্ট দ্য কনস্টিটিউশনাল বডি (আমি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে সম্মান করি)। কনস্টিটিউশনাল অবলিগেশন (সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা) বলে আমি মেনে নিলাম।”
মানতে যে তাকে হবে, সেটা মমতা এ দিন শুরু থেকেই বুঝতে পারছিলেন বলে নবান্ন সূত্রের খবর। সোমবার তিনি ‘কমিশনকে কেয়ার করি না’ বলে তোপ দাগার পরেই দল ও প্রশাসনের শীর্ষ নেতৃত্ব তাকে বোঝান, কমিশনের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া ছাড়া কোনও পথ নেই। না-হলে সাংবিধানিক সঙ্কট দেখা দেবে, যার দায় বর্তাবে রাজ্য সরকারের উপর। এ ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রী আইনজ্ঞদের সঙ্গেও কথা বলেন। সেখানেও পরিষ্কার হয়, কমিশনের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ আদালতে গিয়েও লাভ নেই। পরে মমতার নিজের কথাতেও এই বাস্তবটা প্রকাশ পায়।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন, “ভোট শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোর্ট কেস নেবে না। কিন্তু আমরা গেলেই জাস্টিস পাব। কনস্টিটিউশনাল বডি বলেই যা খুশি করা যায় না। আফটার ইলেকশন, ইট উইল বি আ বিগ ইস্যু।”
সংঘাতের পথ বদলে মুখ্যমন্ত্রী এ ভাবে সন্ধির রাস্তা নেওয়ায় বিরোধীরা অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত বদলের আগেই বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলে রেখেছিলেন, “পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অকথা-কুকথা বলেছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে ধমকে-চমকে যে কিছু করানো যায় না, বুঝতে পারবেন!”
আর সিদ্ধান্ত বদলের পরে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রর প্রতিক্রিয়া, “আমরা তো আগেই বলেছিলাম, তার বক্তব্য সংবিধান বহির্ভূত, এক্তিয়ারের বাইরে এবং গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক। শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে এসেছেন। ওদের দৌড় কত দূর, আবার বোঝা গেল!”