সব লোকে কয় রনি এখন কোন দলে- বাক্যটি কেমন জানি হয়ে গেলো। মরমী সাধক লালন ফকিরও একবার নিজেকে নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন- সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে! তারপর আবার নিজেই সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন-সে এক লম্বা কাহিনী এবং ভিন্ন প্রসঙ্গ। আমি কোন মরমী কবি নই- হতেও পারবো না। সাধক ঠাকুর ফকির লালন তো বিরাট ব্যাপার- তাঁর একটি পশম হবার যোগ্যতা নেই কোন রাজনীতিবীদের; অন্তত এই বঙ্গ সন্তানের! তারপরও একটু ভাব ধরলাম- সবাই ধরে-নিজেকে আর বঞ্চিত করা কেনো- একেবারে লালন শাহের গানের মতো করে একটি শিরোনাম সাহস করে দিয়েই ফেললাম।
আমাকে নিয়ে লোকজন এতো কথা কয় কেনো? লোকজনের তো দোষ না-সব দোষ এই অধমেরই। আমি মাঝে মধ্যে কি সব কান্ড কারখানাই না করে বসি- তা ভাবলে নিজে নিজেই অবাক হই। শুনেছি বোকা হরিন নাকি নিজের পেটের গুড়গুড়ির শব্দ শুনে একা একা লাফাতে থাকে। কখনো ৮/১০ গজ যায়গার মধ্যে তিড়িং বিড়িং করে লাফায় আবার কখনো কখনো প্রচন্ড গতিতে দৌড়াতে থাকে। দৌড়ের মাঝে-প্রায়ই শূন্যে উড়ে যাবার ব্যর্থ প্রচেষ্টায় প্রচন্ড লাফ মারে। প্রকৃতি প্রেমিরা হরিনের এসব কান্ড কারখানা দেখে বড়ই মজা পায়। আর বিশেষজ্ঞরা বলেন- হরিনের বদ হজম হয়েছে!
হরিনের না হয় বদ হজম হয়েছে- কিন্তু আমার কি হয়েছে। আমিতো কিছু খাইনি বা খেতে চাইনি- তবে আমার পেটে গুড়গুড়ানি বা ঠোঁটে পট পটানী হচ্ছে কেনো? আমি তো শেয়ার মার্কেটে কোনদিন বিনিয়োগ করিনি! আমার চৌদ্দ গোষ্ঠীর কেউতো শেয়ার মার্কেটের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি! তবে আমি কেনো এত্তোসব বলতে গেলাম এবং এত্তোসব করতে গেলাম? সব লোক তো এসব প্রশ্ন করেনা? এসব কথা কয়ও না। তবে আমি বলছি- কেনো আমার পেটে বেদনা অনুভব করলাম।
২০১১ সালে সেনাবাহিনীর মেজর পদ মর্যাদার এক কর্মকর্তা ফোন করে আমার এ্যাপয়েন্টমেন্ট চাইলেন। ভদ্রলোক ইতিপূর্বে র্যাবে ছিলেন এবং আমি তাকে সৎ কর্মকর্তা হিসেবেই জানতাম। অনেকটা ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতাম বলে তিনি কোন দ্বিধা না রেখেই আমার নিকট আসতে পেরেছিলেন এবং সব কথা বলতে পেরেছিলেন। তিনি জানালেন-জাতিসংঘ মিশন খেটে যে টাকা পয়সা উপার্জন করেছিলেন তার পুরোটাই শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করে সব কিছু হারিয়েছেন-উল্টো ট্রাস্ট ব্যাংকে দেনাদার হয়ে পড়েছেন। গ্রামের নিম্ন বিত্ত পরিবারের সন্তান-পদ পদবীর কারনে বিয়ে করেছেন উচ্চবিত্ত পরিবারে। স্ত্রীর ভারী দেমাগ-কথায় কথায় মেজর সাহেবের মা ও বোনকে ছোট লোক বলে জ্বালাতন করে। আর সব সময় স্বামীর ওপর কড়া নজর রাখে যেনো সংসারের আয় গ্রামে যেতে না পারে। মাস শেষে বেতনের টাকাটা হস্তগত করার পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়ে স্বামীকে শাসন করাই যেনো ভদ্র মহিলার ফ্যাসন এবং প্যাসন হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।
মেজর সাহেবও কম যাননা-তিনি তার উপার্জিত সব টাকা ট্রাস্ট ব্যাংকে এফ.ডি. আর করলেন। তারপর সেই এফডিআরের বিপরীতে ঋন নিলেন-বিনিয়োগ করলেন শেয়ার মার্কেটে। প্রথম প্রথম দারুন ব্যবসা। গোপনে মাকে টাকা পাঠান। অসুস্থ বোনকে চিকিৎসা করান এবং বিধবা বোনের সংসার চালান। ব্যবসাটা আরো রমরমা করার জন্য তিনি শেয়ারের বিপরীতে ব্যাংক থেকে লাখ পনের টাকা ঋন নিলেন এবং নতুন করে বিনিয়োগ করলেন। এর পরই ঘটলো দূর্ঘটনা-সব মিলিয়ে প্রায় ২৫/৩০ লাখ টাকা শেষ। সারা জীবনের সঞ্চয় এবং ব্যাংকের ঋনের অর্থ পুঁজি বাজারে হারিয়ে তিনি দিশেহারা হয়ে পড়লেন।
গ্রাম থেকে রোজ ফোন আসে- টাকা পাঠাও, না খেয়ে আছি। মেজর সাহেব কি করবেন ভেবে পেলেন না। স্ত্রীর নিকট আব্দার করলেন বেতনের টাকা থেকে কিছু টাকা গ্রামে পাঠানোর জন্য। এ নিয়ে শুরু হলো পারিবারিক কলহ- এক সময় বিয়েটা ভেঙেই গেলো-কথাগুলো বলে সেনা কর্মকর্তা আমার দিকে তাকালেন। তার চোখ ছল ছল করছিলো। আমার সারা জীবনের সাধ ছিলো সেনাবাহিনীতে যাবো। সেনা বাহিনীর সকল পদ পদবীর মধ্যে মেজর পদটিই আমার ভালো লাগতো- এতো ভালো লাগতো যে- ইচ্ছে ছিলো- মেজর পদের উপর আমি পদোন্নতি নেব না। সেই পদের একজন চৌকস কর্মকর্তা আমার সামনে বসে চোখের পানি ফেলছেন-মাথায় আগুন ধরে গেলো-শেয়ার মার্কেটের কেলেঙ্কারীর হোতাদেরকে ঘৃনা করতে শুরু করলাম।
সরকারের অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রী, সরকারী কর্মকর্তা এবং দলের কতিপয় লোকজনের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য আমার তলপেটে হঠাৎ করেই গুড়গুড়ানী এবং কুরকুরানী শুরু হলো- অথচ কোন কাজেই আমার ব্যক্তিগত স্বার্থ ছিলোনা। কোনদিন কোন সরকারী অফিসে যাইনি-কোন তদ্বির করিনি এমনকি সুপারিশও করিনি। আমি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন মন্ত্রনালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। জনাব আবুল হোসেন কিংবা জনাব ওবায়দুল কাদের উভয়েই আমার সব কথা শুনতেন। মন্ত্রনালয়ের সব বিভাগ অনুবিভাগের কর্মকর্তারা আমার কোন অনুরোধ পেলে বোধ হয় খুশীই হতেন-কিন্তু কোন দিন কোন অফিসে যাইনি- কোন কথা বলিনি কেবল তাদের কৃত অন্যায়ের প্রতিবাদ ছাড়া।
এমপি কালীন পাঁচটি বছর আমার জন্য স্বর্ণ সময় ছিলো। সবাই-বিশেষ করে বড় বড় মন্ত্রীগন আমাকে স্নেহ করতেন। কোনদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট একবারের জন্যও কোন ব্যক্তিগত কাজের জন্য যাইনি। যদি যেতাম-তিনি করে দিতেন। আমিও হতে পারতাম ব্যাংক, বীমা, টিভি চ্যানেল, কুইক রেন্টাল বা আরো অনেক কিছুর মালিক। কারন যারা পেয়েছেন তাদের অনেকের চেয়ে নেত্রী আমাকেই পছন্দ করতেন বেশি। অন্যদিকে ওসব ব্যবসা করার অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা এবং আর্থিক সামর্থ যে আমার অন্য সবার চেয়ে বেশি ছিলো-তা আমার প্রচন্ড বিরোধীরাও স্বীকার করেন। কিন্তু কেন আমি ওসব করলাম না- তাহলে কি আমি আসলেই একজন বোকা এবং নির্বোধ মানুষ! হয়তো তাই- আবার নাও হতে পারে।
আমার কাছে মনে হয়েছে দেশ জাতির কল্যান করার জন্যই আল্লাহর ইচ্ছায় আমি পদ পদবী প্রাপ্ত হয়েছি। সেই পদ পদবী ব্যবহার করে কোন ব্যক্তিগত ব্যবসা বানিজ্য, ঘুষ বা দূর্নীতির সঙ্গে জড়ানো- রীতিমতো আল্লার একটি উত্তম নেয়ামতের সঙ্গে জঘন্য নাফরমানী ছাড়া আর কিছুই নয়। নিজের আত্ম মর্যাদা এবং দায়িত্ব সম্পর্কে আমি কতটা সচেতন ছিলাম তার একটি উদাহরন পেশ করার লোভ সামলাতে পারছিনা-
তখন সৈয়দ আবুল হোসেনের যুগ-রাস্তাঘাটে তার ভারী বদনাম। কিন্তু মন্ত্রী পরিষদে তিনি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। তার ব্যক্তিগত শিক্ষা, নৈতিকতা, যোগ্যতা এবং সৌজন্যবোধ নিয়ে আমার কোন দ্বিমত ছিলোনা। কিন্তু তিনি যে পন্থায় কাজ করছিলেন তা নিয়ে আমার ঘোরতর আপত্তি ছিলো যা পরে প্রকাশ্য বিরোধে রুপ নেয়। একটি সময় তিনি এবং আমি বুঝলাম- আমাদের উভয়েরই সংশোধন হবার দরকার আছে। আমরা সংসদীয় কমিটির সবাই মন্ত্রীর সঙ্গে বসলাম এবং খোলামেলা আলোচনার পর সম্পর্কের অনেকটা উন্নতি হলো। কিন্তু ততোদিনে সর্বনাশ যা হবার হয়ে গেছে। আমি যে কাহিনী বলছি তা মন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হবার পরের ঘটনা।
৬/৭ জন মন্ত্রী এবং এমপির সঙ্গে বসে সংসদ লাইব্রেরীতে পত্রিকা পড়ছিলাম। সৈয়দ আবুল হোসেনও সেখানে ছিলেন এবং ঠিক আমার সামনের চেয়ারে বসে পত্র পত্রিকায় নজর দিচ্ছিলেন এবং চিরায়ত হাসিমুখে টুকটাক মন্তব্য করছিলেন। হঠাৎ আমার নজর পড়লো তার হাতের দিকে- চমৎকার একটি ওমেগা ঘড়ি পরেছিলেন তিনি। আমি বললাম ভাই ঘড়িটা তো ভারী সুন্দর। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ঘড়িটি হাত থেকে খুলে আমায় পরিয়ে দিলেন। বললেন-আরে! আপনার হাতে দেখি একদম কাফে কাফ লেগে গিয়েছে- মানিয়েছেও বেশ। তারপর সবাইকে অবাক করে দিয়ে বললেন-দয়া করে হাত থেকে খুলবেন না। ওটি যদি আপনার হাতে থাকে তবে আমি সম্মানীত বোধ করবো।
আমি সহ উপস্থিত সবাই তাজ্জব বনে গেলাম। আমার নিকট উপহারটি ছিল ভয়ানক ওজনের। কিছুক্ষন নিরব থেকে বললাম-ভাই! আপনার উপহার নিঃসন্দেহে যে কারো জন্য মর্যাদার বিষয়। তাছাড়া ঘড়িটি আমার বেশ পছন্দও হয়েছে কিন্তু আমি এটা নিতে পারবো না। কারন আমি সব সময় আপনার বিরোধীতা করেছি এবং আপনার বিরুদ্ধে অনেক টক শোতে অনেক কথা বলেছি। এই কথা বলে আমি ঘড়িটি ফেরত দিলাম। উপস্থিত লোকজন ভারী আশ্চর্য হলো আমাদের কান্ড কারখানা দেখে। জনাব আবুল হোসেন মলিন মুখে ঘড়িটি ফেরত নিলেন এবং বললেন- এটি আপনার ঘড়ি। আপনাকে এটি নিতেই হবে-আজ না হলে অন্যদিন।
এই ঘটনার পর আমি জনাব আবুল হোসেনের বিনয় ও ভদ্রতার নিকট পরাজিত হয়ে গেলাম। বাংলাদেশ প্রতিদিনে তার সংগ্রামী জীবনের সফলতা এবং পদ্মা সেতুর ব্যর্থতা নিয়ে একটি কলাম লিখলাম। পরের দিন সকালে তিনি ফোন দিলেন এবং বললেন-রনি আপনি আমার আপন ভাই – এবার তো আমি ঘড়িটি আপনার নিকট পাঠাতে পারি। আমি বললাম-আচ্ছা দেখা যাবে। এরপর আরেকদিন দু’জনে একসঙ্গে সংসদে ঢুকছিলাম- তিনি হেসে বললেন – ঘড়িটির কথা। এর কিছুদিন পর উনার মন্ত্রীত্ব চলে যায়। উনিও ভদ্রতা করে প্রসঙ্গটি আর আনেননি এবং আমারও সুযোগ হয়নি ওটা নিয়ে কিছু একটা বলে নিজের বাহাদুরী জাহির করার জন্য।
আবুল হোসেন সাহেবের প্রসংগ আসলো সাম্প্রতিক কালে লিখা বেগম জিয়াকে নিয়ে একটি কল্পিত সাক্ষাৎকারের বিষয়ে দেশব্যাপী আলোচনা সমালোচনার কারনে। ইতিপূর্বে আমি অনেককে নিয়েই লিখেছি যা ছিলো প্রচলিত রাজনৈতিক ধারার সম্পূর্ন বিরুদ্ধে। আমি ডঃ মোহাম্মদ ইউনুসকে নিয়ে লিখেছি। প্রকাশ হবার পর ভদ্রলোক সুদূর আমেরিকা থেকে আমাকে ফোন করে কৃতজ্ঞতা জানালেন। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট অনুরোধ জানিয়েছিলাম ডঃ মোহাম্মদ ইউনুস প্রসঙ্গটিতে সমঝোতা করার জন্য। আমি যখন বলছিলাম-তিনি তখন অবাক বিস্ময়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। উপস্থিত লোকজন আমার দুঃসাহস দেখে তাজ্জব হয়ে আমাকে বকাঝকা করতে লাগলেন- এই বলে যে-তুমি তাকে কিভাবে চেনো, কেনো চেনো, কতদিন হলো চেনো, তোমার সঙ্গে তার কিসের সম্পর্ক। আমি নির্বিকার চিত্তে বলেছিলাম-আত্মার সম্পর্ক। ডঃ ইউনুস এসব কিছুই জানতেন না। কিন্তু তার সঙ্গে যে আমার আত্মার সম্পর্ক তা তিনি প্রমান করেছিলেন, আমার জেল বাসের সময় তিনি আমর স্ত্রীকে দাওয়াত করে নিয়ে সান্তনা দিয়েছিলেন।
যারা লেখালেখি করেন তাদের অনেকের হৃদয় হয়তো সত্য বলার জন্য মুখিয়ে থাকে। তাদের অনেকের আত্ম মর্যাদাবোধ মনে হয় সব সময় টনটনে থাকে। আর তাইতো মহামতি আলেকজান্ডারের দাওয়াত ফিরিয়ে দেবার সাহস দেখাতে পেরেছিলেন কোন এক জ্ঞানী ব্যক্তি-তাও এই ভারত বর্ষের। অগত্যা সম্রাট নিজে এসে তার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তদ্রুপ মহাকবি ফেরদৌসি প্রবল প্রতাপশালী বাদশাহ সুলতান মাহমুদের অর্থ ফেরত দিতে পেরেছিলেন। ভাব জগতের ঐ পর্যায়ে না গিয়ে এসকল মানুষের চিন্তা চেতনা অনুমান করা অন্য মানুষজনের পক্ষে সম্ভব নয়।
বেগম জিয়ার কল্পিত সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হবার পর অনেকেই প্রশ্ন করেছেন-ঘটনা কি আসলেই কল্পিত নাকি আপনি সত্যিই তার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। আলাপ চারিতায় মনে হচ্ছে- আপনি তার সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছেন যা একমাত্র তিনি ছাড়া বিএনপিতে কেউ জানেনা। আমি গর্বের হাসি হেসে বলেছি-বিষয়টি তো ছিল স্বাপ্নিক। বিএনপির কিছু নেতৃবৃন্দ ফোন করে বললেন- চলুন আপনাকে ম্যাডামের নিকট নিয়ে যাই। আমি বললাম কি দরকার! উনার নিকট তো আমার কোন প্রয়োজন নেই।
এখন প্রশ্ন হলো-বিষয়টি কেন স্বপ্নাকারে হলো। আমি চাইলে তো বাস্তবেও হতে পারতো! আর এখানেই লেখক মনের অন্তহীন রহস্য। আমার মনে হয়েছে আমাদের দেশের লোকজন কাজকর্ম করার চেয়ে স্বপ্ন দেখতে বেশি ভালবাসে। স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা নেতা নেত্রীদের বাস্তব কর্মযজ্ঞের তুলনায় তাদের স্বপ্ন যজ্ঞের তান্ডবে পীড়িত হই অহরহ। জাতির জন্য কাজ করা খুবই কঠিন কিন্তু স্বপ্ন দেখা ততোধিক সহজ। স্বপ্ন দেখার সবচেয়ে বড় সুফল হলো- এটি নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন করে না। স্বপ্নে সত্য মিথ্যা নিয়ে কেউ আপত্তি তুলেনা। আর স্বপ্ন সমর্থকদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো- কোন কালে কাজটি যদি আসলেই হয়ে যায় এবং সেখানে যদি স্বপ্ন দ্রষ্টার সমর্থকদের পেশী শক্তির বাহুল্য থাকে তবে অনায়াসে বলা যায়-তোরা সব ভাগ-এই কাজের কোন কৃতিত্ব তোদের নেই। আমাদের নেতা স্বপ্ন দেখেছিলেন বলেই কাজটা হয়েছে। আর তোদের সাত জন্মের ভাগ্যি যে তোরা নেতার স্বপ্নের কাজটির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পেরেছিস।
এবার বোধ হয় বলার পালা এলো- আমি এখন কোন দলে? নিতান্ত নির্বোধ হলেও এতোদিনে বুঝেছি- আমি কোন দলে নেই যতক্ষন না পর্যন্ত দলীয় প্রধান বলবেন যে ও আমার দলে আছে। আবার উল্টোটাও হতে পারে- দলীয় প্রধান বের করে না দেয়া পর্যন্ত কেউ বিশ্বাস করবে না যে আমি সেই দলে নেই। যেমন আমার যে এমপি গিরি ভালো লাগেনি সে কথা এদেশের একটি পাগলও বিশ্বাস করবে না। অথচ আমার নির্বাচনী এলাকার জনগন জানেন যে, নির্বাচনের প্রথম বছরই একাধিক জনসভায় আমি ঘোষনা দিয়েছিলাম- আগামীতে নির্বাচন তো দুরের কথা- মনোনয়নই কিনবোনা। এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন না পাবার কোন কারনই ছিলোনা। আবার-এলাকায় যে গ্রহনযোগ্যতা, প্রভাব এবং জনপ্রিয়তা ছিলো তাতে স্বতন্ত্র নির্বাচন করা যেতো-কিন্তু কি করে বুঝাই যে জেল থেকে বের হবার পরের দিন আমি গাড়ী থেকে সংসদ সদস্য লিখা স্টিকার তুলে ফেলেছিলাম। আমার এমপির পরিচয় পত্রও ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলাম। একদিনের জন্য সংসদে যাইনি। কেনো-এমনটি হলো তা আমি বলতে পারবো না-তবে এমন উদাহরন অনেক আছে মানুষ মনের টানে রাজ্য, রানী এবং রাজপাট ছেড়ে বনে যায়। আবার অন্যরা ওগুলো দখল করার জন্য বনভূমি উজাড় করে, লোকালয় ধ্বংশ করে এবং দেবালয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
আমি যদি বলি ৬০ বছর বয়সী এক অপরুপ সুন্দরী বঙ্গ ললনা আমায় ভালবাসছে গত চার বছর ধরে। তিনি ধনবতী, শিক্ষিতা এবং পুরুষের মন হরনের সকল জিনিসই তার রয়েছে। তিনি প্রবলবেগে আমায় তাড়া করে ফিরছেন এবং সমাজ সংসার ত্যাগ করে আমার স্ত্রী (অবশ্যই দ্বিতীয়) হবার বাসনায় উম্মাদিনীর মতো দিন কাটাচ্ছেন-অথচ আমি তাকে পাত্তা দেই না। অধিকন্তু তার বাড়াবাড়ির জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেবার কথা ভাবছি- একথা কেউ বিশ্বাস করবেনা। বিশ্বাস করেননি জুয়েল আইচ, সামিনা নবী, চাষী নজরুল, সুবর্না মোস্তফা, শিল্পী রফিকুল আলমসহ অনেকে-সে এক অন্য প্রসঙ্গ-অন্য একদিন হয়তো বলবো। এখানে যেটা বলা যায়- একজন প্রেমিক পুরুষের কাছে এক অসাধারন সুন্দরী যতটানা কাম্য-একজন লোভী এবং উচ্চাভিলাষী পুরুষের কাছে এমপি-মন্ত্রী তার চেয়েও বেশী কাম্য। কাজেই আমার প্রথম কথা যারা বিশ্বাস করবেন না তারা কি করে বিশ্বাস করবেন কোন মানুষ সেচ্ছায় পদ পদবী ছেড়ে দিয়ে পত্রিকার কলাম লেখক হতে চায়!