অর্থাভাবে বাড়িভাড়া দিতে অপারগ খালেদা: ছাড়ের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

0
114
Print Friendly, PDF & Email

দৈনিক কালের কণ্ঠের এক প্রতিবেদনে আজ বলা হয়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অর্থের অভাবে তিন বছর বাড়িভাড়া দিতে পারছেন না- এমন তথ্য খতিয়ে দেখে সেই পরিমাণ অর্থ ছাড় দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে বিষয়টি সামনে এনে খালেদা জিয়া দেশের মানুষের সহানুভূতি কুড়ানোর চেষ্টা ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করছেন কি না তা-ও খতিয়ে দেখতে বলেছেন তিনি। মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ নিয়ে গতকাল সোমবার আলোচনা হয়। গতকাল সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে এক সিনিয়র মন্ত্রী এ তথ্য জানান। অপরদিকে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই বৈঠকে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা কঠোর সমালোচনা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশ্ন- উনি (খালেদা জিয়া) কালো টাকা সাদা করেছেন, সে টাকা কোথায়? এখন তার সব অ্যাকাউন্ট প্রকাশ করা হবে। আলোচনায় অংশ নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ বেশ কয়েকজন খালেদা জিয়ার তীব্র সমালোচনা করেন। মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা বলেছেন, পত্রিকায় খালেদা জিয়ার বাড়িভাড়া নিয়ে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। খালেদা জিয়া নিজেকে আবারও প্রমাণ করতে চাচ্ছেন যে তার স্বামী ভাঙা স্যুটকেস আর ছেঁড়া লুঙ্গি ছাড়া কিছুই রেখে যাননি। একজন মন্ত্রী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, খালেদা জিয়া সরকারের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে এক বিঘা আট কাঠা বাড়ি নিয়েছেন। সেই বাড়ি তিনি ভাড়া দিয়েছেন। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা প্রশ্ন রেখে বলেন, সেই ভাড়ার টাকা যায় কোথায়? বৈঠকসূত্র জানায়, আইনমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার এ ধরনের বক্তব্যের ভিন্ন অর্থ বা উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এ বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি সুবিধা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে আমাদের উচিত তার সে উদ্দেশ্য খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া। এদিকে খালেদা জিয়ার মাসে সাড়ে ৫ লাখ টাকা আয়ের বিবরণ দিয়ে জাতীয় সংসদে দুজন মন্ত্রী জানতে চেয়েছেন_ তিনি বাড়িভাড়া দিতে পারেন না, নাকি ভাড়া পরিশোধ করতে চান না? প্রতি মাসে খালেদা জিয়ার কত টাকা প্রয়োজন, সে প্রশ্নও তুলেছেন তারা। এ সময় সংসদকে জানানো হয়, এরশাদের কাছ থেকে পাওয়া গুলশানের ৩০ কাঠার ছয় তলা বাড়ি থেকে বেগম খালেদা জিয়া ভাড়া পান ৩ লাখ টাকা এবং ব্যাংক থেকে উত্তোলন করতে পারেন প্রতি মাসে আড়াই লাখ টাকা। তার দুই ছেলে থাকেন দেশের বাইরে। একা একজন মানুষ হিসেবে চলতে প্রতি মাসে তার কত টাকা লাগে? সংসদে গতকাল পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে এ প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইাঞ্জনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি সংসদকে জানান, ১৯৮২ সালের ১৬ জুন খালেদা জিয়াকে ১০১ টাকার বিনিময়ে গুলশান এভিনিউতে ৩০ কাঠার জমিসহ একটি বাড়ি দেওয়া হয়। বর্তমানে এ বাড়ির দাম ৪৫০ কোটি টাকার বেশি। গুলশানের সেই বাড়ি থেকে প্রতি মাসে অফিশিয়ালি ৩ লাখ টাকা ভাড়া পান খালেদা জিয়া। নন-অফিশিয়ালি কত পান জানা নেই। মতিয়া চৌধুরী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বাড়িভাড়া দিতে পারেন না, নাকি ভাড়া দিতে চান না? শুনেছি বিদ্যুৎ বিল ও ওয়াসার বিলও দেওয়া হয় না। তিনি বলেন, ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের সময় অনেক দামি পাথর ও হীরা বসানো নেকলেস পাওয়া গেছে। তার পরনের শাড়ির এক মিটারের দাম হিসাব করা হয়েছে ৫০০ ইউএস ডলার। ফ্রান্স শিপনের একেকটি শাড়ির দাম ৫ লাখ টাকা। এসবের পেছনেই কি সব টাকা শেষ হয়ে গেল? এ জন্য কি তিনি অর্থকষ্টে আছেন? অপরদিকে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, খালেদা জিয়ার গুলশানে ৩৮ কাঠার একটি বাড়ি রয়েছে। ওই বাড়িটি তিনি বিদেশি একটি কোম্পানির কাছে ভাড়া দিয়েছেন। এ বাড়ি থেকে প্রতি মাসে ১০ লাখ টাকার বেশি ভাড়া আসে। অথচ বর্তমানে তিনি নিজের বাড়িতে না থেকে অন্যের বাড়িতে বিনা পয়সায় থাকেন। সেগুনবাগিচার খাজা নিজামুদ্দিন মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু একাডেমি আয়োজিত আলোচনা সভায় গতকাল সোমবার এ কথা বলেন ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কাছ থেকে মাত্র ১ টাকায় ৩৮ কাঠার ওপর একটি বাড়ি নিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। এদিকে দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের অপর এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, খালেদা জিয়ার আসলে বাড়ি নিয়ে কোনো সমস্যাই নেই। ‘খালেদার বাড়ি নিয়ে তোলপাড়’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকালই প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন সংস্থা থেকে এ ব্যাপারে জানানো হয়েছে, বাড়ির ভাড়া দেওয়া নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন কোনো সমস্যায় নেই। ১৯৬ গুলশান এভিনিউয়ে তার ব্যক্তিগত বাড়িটি থেকে তিনি নিয়মিত ভাড়া পান। এ বাড়িটি তিনি ২৯ বছর ধরে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। প্রতি মাসে সে বাড়ি থেকে তিনি আড়াই লাখ টাকা ভাড়া পান। তাই বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি কোনো সংকটে নেই। তা ছাড়া দলীয় কার্যালয়ের ভাড়া, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পার্টির বিভিন্ন ফান্ড থেকে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে দলের অনেক নেতা ও শুভানুধ্যায়ী ভূমিকা রাখছেন। প্রধানমন্ত্রীকে আরও জানানো হয়েছে, বিএনপি চেয়ারপারসনের বহুল আলোচিত গুলশানের বাড়িটি বহুজাতিক কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর (বিটিএ) কাছে ভাড়া দেওয়া রয়েছে। এ ছাড়া জিয়াউর রহমান জীবিত থাকাকালে সাভারে ১০ কাঠা জমি কিনেছিলেন। এর বাইরে রাজধানীর উত্তরখানে আর্মি সোসাইটিতেও আট কাঠা জমি রয়েছে। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তৎকালীন চিফ মার্শাল ল’ অ্যাডমিনিস্ট্রেটর (সিএমএলএ) লে. জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রতীকী মূল্যে এক টাকার বিনিময়ে খালেদা জিয়াকে গুলশান এভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর প্লটের সরকারি বাড়িটি বরাদ্দ দেন। সেটি এখন ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার সরকারি বাড়িটি বর্তমানে আড়াই লাখ টাকা মাসিক ভাড়ায় ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির এমডি শেহজাদ মুনিম ব্যবহার করছেন। ২০১০ সালের এ সংক্রান্ত চুক্তিনামায় বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও আরাফাত রহমানের নাম রয়েছে। তবে চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করেন বেগম খালেদা জিয়া। তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান দেশের বাইরে থাকায় তাদের স্বাক্ষরের জায়গা খালি রাখা হয়। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর পক্ষে স্বাক্ষর করেন কোম্পানির হেড অব লিগ্যাল অ্যান্ড কোম্পানি সেক্রেটারি মাহবুবুর রহমান। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বেগম খালেদা জিয়ার আয়কর আইনজীবী আহমেদ আজম খান বলেন, ম্যাডামের গুলশানের বাড়িটি ১৯৮৫ সাল থেকে ভাড়া দেওয়া রয়েছে। পাঁচ বছর পর পর এর ভাড়া চুক্তি নবায়ন করা হয়। ডিসেম্বরে বাড়িটির চুক্তির মেয়াদ শেষ হবে। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হবে কিনা তা শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বাংলাদেশ প্রতিদিন তার প্রতিবেদনে জানায়, ৩২ কাঠা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই বাড়িটির দুটি অংশের মধ্যে একাংশ একতলা এবং অপর অংশ দোতলা। এ বাড়িটি ১৯৮৫ সাল থেকে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি ভাড়ায় ব্যবহার করছে। বাড়িটির একাংশ খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা কর্মীদের আবাসন হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ওই প্রতিবেদনের শেষাংশে বিশেষভাবে জানায়, খালেদা জিয়া সরকারিভাবে পাওয়া এ বাড়ির পাশের অন্য একটি বাড়িতেই ভাড়া থাকছেন। ২০১০ সালে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ছেড়ে আসার পর খালেদা জিয়া বর্তমান বাড়িটিতে ওঠেন। এটি স্থানীয় এক বিএনপি নেতার বাড়ি। এদিকে সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীরাও বিএনপি চেয়ারপারসনের বাড়ি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। গতকাল জাতীয় সংসদে পূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বক্তব্য রাখেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকেও এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এ বিষয়ে কথা বলেন। তারা পুরো বিষয়টিকে বিএনপির তৈরি করা নতুন নাটক হিসেবে মন্তব্য করেন। (দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন) – অর্থাভাবে প্রায় তিন বছর বাড়ি ভাড়া দিতে পারছেন না সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা হারে বাড়ি ভাড়া ছাড়াও তার অনেক খরচ রয়েছে। তিন মেয়াদের সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর ব্যাংক হিসাবগুলো জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) দীর্ঘ ৭ বছর জব্দ থাকায় তার সংসারে চলছে এখন টানাপড়েন। মাত্র ৫০ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলনের যে অনুমতি রয়েছে, তা দিয়ে সংসার চালাতে পারছেন না সাবেক সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার আয়কর আইনজীবী এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে সাক্ষাতের জন্য বার বার সময় চেয়েও পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন। এ তথ্য জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী আহমেদ আজম খান। তার আইন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘আজম খান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস’ বেগম খালেদা জিয়ার কর-সংক্রান্ত আইনি বিষয়গুলো দেখভাল করছে। এনবিআরের প্রতি অভিযোগের কথা জানিয়ে আহমেদ আজম খান আরও বলেন, গত এক মাস যাবৎ এনবিআর চেয়ারম্যানের সাক্ষাৎ চাচ্ছি। কিন্তু পাচ্ছি না। সর্বশেষ এনবিআর চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সচিব আমার ব্যক্তিগত কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন তিনি চলতি মাসের ১৭-১৮ তারিখ সময় দিতে পারেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্যমতে, বেগম খালেদা জিয়ার জব্দকৃত ৮টি ব্যাংক হিসাব খুলতে নানা টানাপড়েন চলছে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মধ্যে। কোনো কর মামলা না থাকা সত্ত্বেও বিগত ৭ বছর যাবৎ ওই ব্যাংক হিসাবগুলো জব্দ রয়েছে। ২০০৭ সালের শেষের দিকে এ ব্যাংক হিসাবগুলো জব্দ করেছিল এনবিআর। তখনকার ১/১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাবগুলো জব্দ করতে নেপথ্যে ভূমিকা রাখে। পরে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাংক হিসাব খোলা হলেও, জব্দ রয়েছে বেগম খালেদা জিয়ার হিসাব। তিন মেয়াদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাব খোলার আবেদন তিন বছর ধরে আটকে আছে এনবিআরে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর সূত্র জানায়, বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাব অবমুক্তকরণ নিয়ে এনবিআরের কোনো আপত্তি নেই। বিষয়টি এনবিআর অর্থ মন্ত্রণালয়কে জানানোর পরও মন্ত্রণালয় বিষয়টি আমলে নেয়নি। কর প্রশাসনের কোনো কোনো কর্মকর্তার মতে, ওই ব্যাংক হিসাবগুলো অবমুক্তকরণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি প্রভাবশালী দফতর এবং একজন মন্ত্রীর আপত্তি রয়েছে। আপত্তি আছে সরকার সমর্থক একজন প্রভাবশালী আয়কর পরামর্শকেরও। অনেকে মনে করেন, এনবিআরের অনেক সিদ্ধান্তই ওলট-পালট হয় ওই আয়কর পরামর্শকের ইশারায়। যিনি এখন নতুন একটি বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যানও। তথ্যমতে, এনবিআরের গোয়েন্দা শাখা ‘সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স সেল’র (সিআইসি) তৎকালীন মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলাউদ্দিনের কাছে ২০১১ সালের ৩০ জানুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাবগুলো খুলে দিতে আবেদন করেন অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান। মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বর্তমানে এনবিআরের সদস্য। ওই আবেদনে বলা হয়, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বর্তমানে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার সমুদয় ব্যাংক হিসাব জব্দ করা আছে, যাহা ইতোপূর্বে একাধিক আবেদন করা সত্ত্বেও অবমুক্ত করা হয় নাই। বেগম খালেদা জিয়ার নামে যেহেতু এনবিআরের কোনো মামলা নেই, তাই ব্যাংক হিসাবগুলো অবমুক্ত করতে আইনগত বাধা নেই’। আবেদনে আরও বলা হয়, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের কারণে তার বসবাসের জন্য ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে গুলশানের ৭৯ নম্বর রোডের ১ নম্বর বাড়িটি প্রতি মাসে দুই লাখ টাকায় ভাড়া নেওয়া হয়। ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ি ভাড়া ও সাংসারিক খরচসহ মোট দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়মিত ভিত্তিতে ব্যাংক থেকে উত্তোলন প্রয়োজন। আবেদনটি বিবেচনায় নিয়ে সোনালী ব্যাংকের ক্যান্টেনমেন্ট শাখায় বেগম খালেদা জিয়ার হিসাব নম্বর (…) হতে টাকা উত্তোলনের অনুমোতি দেওয়া হোক’। এ আবেদনের পর দুই বছর অতিবাহিত হলেও জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতার ব্যাংক হিসাবগুলো খুলে দেয়নি এনবিআর। সূত্র জানায়, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ২৫ এপ্রিল বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাব তলব করেছিল এনবিআরের গোয়েন্দা শাখা। পরে এ বছরের শেষের দিকে ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। তখন সংসারের খরচ চালানোর জন্য নিজের ব্যাংক হিসাব থেকে ৫০ হাজার টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। পরে বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাংক হিসাবগুলো খুলে দেওয়া অথবা প্রতি মাসে ৫০ হাজারের পরিবর্তে দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলনের জন্য ২০১১ সালের ৩১ জানুয়ারি এনবিআরে দ্বিতীয়বারের মতো আবেদন করেন বিরোধীদলীয় নেত্রীর আইন পরামর্শক আহমেদ আজম খান। সূত্র জানায়, ওই আবেদন এনবিআর পর্যালোচনা শেষে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বেগম খালেদা জিয়ার কর ফাইলটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। সেখানে তিন বছর যাবৎ ফাইলটি আটকে আছে বলে এনবিআরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা জানান, বেগম খালেদা জিয়ার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বোর্ড প্রশাসনের সভায় বিষয়টি আলোচনা হয়। সভায় দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলনের ব্যাপারে এনবিআরের সব সদস্য একমত পোষণ করে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেন। এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের জন্য আবেদনের ফাইল অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. গোলাম হোসেন বেগম খালেদা জিয়ার কর ফাইল নিয়ে কথা বলতে নিজের অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে আহমেদ আজম খান জানান, আমি নিজে এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যান ও এর আগে যিনি ছিলেন, তার সঙ্গে সশরীরে হাজির হয়ে অথবা টেলিফোনে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, আপনি যোগাযোগ রাখুন।

শেয়ার করুন