মাঠ মাড়িয়েই দখলে নিতে চান খালেদা

0
135
Print Friendly, PDF & Email

বড় আর অবাস্তব কর্মসূচি দিয়ে মাঠ দখলের পাঁয়তারা না করে এবার মাঠ মাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে তবেই তিনি নামবেন মাঠ দখলে।

সূত্র জানায়, এই মুহুর্তে বড় ধরনের আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়াটা যৌক্তিক মনে করছেন না সাবেক এই বিরোধী দলীয় নেতা। এর চেয়ে ভবিষ্যৎ আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে সারাদেশে সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ও জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে নিজেই মাঠে নামবেন। সঙ্গে চলবে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার ও দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে অন্তরঙ্গতা বৃদ্ধি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, সবাইকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হতে হবে। এ কাজে দলের প্রধানই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখবেন। খালেদা জিয়া সব সময়ই মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। সবাইকে নিয়েই তিনি প্রস্তুত হবেন।

দলটির বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবুর রহমান সরোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, যেকোনো সময় খালেদা জিয়া আসতে পারেন ভেবেই আমরা প্রস্তুত থাকি। এখানের মাটি ও মানুষ সব সময় খালেদা জিয়ার মুখের কথা শুনতে চায়। তিনি যখনই আসবেন, বরিশাল তার আগমনকে স্মরণীয় করতে প্রস্তুত।

সারোয়ার বলেন, চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে তৃণমূলের কাছাকাছি এসে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিতে পারেন খালেদা জিয়া। সাধারণ মানুষ সরকারের ওপর থেকে আস্থা হারিয়েছেন অনেক আগেই। খালেদা জিয়ার কাছ থেকে একটু ভরসার কথা শুনতে চান তারা। তিনি সফরে এলে ভালো হবে।

রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, তার এমন কর্মসূচির কথা শুনতে পাচ্ছি। নিশ্চিত খবর পেলেই প্রস্তুতি বাড়বে। এমনিতেই আমরা প্রস্তুত থাকি। যেকোনো নির্দেশনা বা কর্মসূচি দিলে তাৎক্ষণিক পালন করা হবে, সফল করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নাম না প্রকাশের শর্তে দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বাংলানিউজকে বলেছেন, এই মুহুর্তে কোনো বড় ধরনের কর্মসূচি নয়, আমরা দেশ-বিদেশের সমর্থন আদায়ে কাজ করছি ও করবো।

বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক পর্যায়ের সম্পর্কগুলো আরও সক্রিয় করা, দাতা ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার কাজ করছি আমরা কয়েকজন।

ভিন্ন সূত্র জানায়, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নীতি ও আদর্শ থেকে বিএনপি সরে এসেছে- এমন অভিযোগ দূর করতে চান খালেদা। জিয়া যেমন মাঠ পর্যায়ে সবার সঙ্গে মিশতেন, সাধারণ মানুষের বাড়ি বাড়ি যেতেন, খালেদা তেমনটি না পারলেও চেষ্টা করবেন, নিজের অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ জনসংযোগের।

নির্ভরযোগ্য অন্য এক সূত্র জানায়, তৃণমূলকে সংগঠিত করা, বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করাই এখন খালেদার মূল টার্গেট। বছরের শেষে চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য এভাবেই মাল-মশলা যোগাড় করবে দলটি।

দেশের অন্যতম প্রধান এই বিরোধী দলের নির্ভরযোগ্য অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, উপজেলা নির্বাচন শেষ হওয়ার পর থেকেই খালেদা সারাদেশের জেলা-উপজেলায় বিভিন্ন সমাবেশ করবেন এবং স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সার্কিট হাউজে বা যেখানে তিনি অবস্থান করবেন, সেখানে সভা করবেন।

জানা গেছে, সমাবেশ উপলক্ষে খালেদা যেখানে অবস্থান করবেন, সেখানে এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গেও বৈঠক করতে পারেন তিনি। এর ফলে বিএনপির সঙ্গে সেসব ব্যক্তির সুসম্পর্ক বাড়বে বলেও বিশ্বাস করছে দলটি।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের শেষ দিকে চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রস্তুতিতে এসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আন্দোলনের রূপ চূড়ান্ত করতে ‍ও সুফল পুরোপুরি পেতে ভেবে-চিন্তে এগোবেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।

সূত্র জানায়, দলের সিনিয়র নেতারাও নিজ নিজ এলাকায় বৈঠক, সভা-সমাবেশ করার নির্দেশনা পেয়েছেন খালেদার কাছ থেকে। একই সঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে নিয়মিত বসে তাদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়গুলো নেতারা লক্ষ্য রাখবেন। তৃণমূলের পরামর্শকে গুরুত্ব দেওয়ারও তাগিদ দিয়েছেন খালেদা।

তিনি বলেন, বছরের শেষ দিকে সরকার পতনের যে কর্মসূচি ও নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন সফল করতে আমাদের এই উদ্যোগ। এতে সাধারণ মানুষকে রাজপথে নেমে আসতে উদ্বুদ্ধ করা হবে।

এই নেতা বলেন, কুটনীতিকদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. মঈন খান, দলের ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মোবিন চৌধুরী অন্যতম দায়িত্বে থাকবেন।

তৃণমূলকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানসহ অন্য কয়েকজন জনপ্রিয় নেতা দায়িত্ব পালন করবেন।

শেয়ার করুন