ভারতের পররাষ্ট্রসচিব সুজাতা সিং এর আমন্ত্রণে সম্প্রতি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হকের নয়াদিল্লী সফর নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। শহিদুল হক এমন নয়াদিল্লী সফর করেন যখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং’র সরকার দেশটির জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে অšত্মবর্তীকালীন অবস্থায় থাকে এবং মনমোহনের ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেস যখন দেশটির এপ্রিল ও মে মাসের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ব্য¯ত্ম সময় পার করছিল।
ভারতের জাতীয় নির্বাচনের ঠিক আগ মুহুর্তে যে কোন চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে না এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ ও দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশংকর মেননের আহবানে গত ১৯ মার্চ নয়াদিল্লীর দক্ষিণ-ব্লকে বাংলাদেশ ও ভারতের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনায় দুদেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবরাও উপস্থিত ছিলেন। যদিও এ থেকে প্রমাণিত হয়, ভারতের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বাংলাদেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু রয়েছে।
যেমন তি¯ত্মা নদীর পানির ¯ত্মর সর্ব নিম্ন পর্যায়ে নেমে আসা, সীমানা নির্ধারণ, ছিটমহল বিনিময়, সীমাšেত্ম বিএসএফ’র হাতে বাংলাদেশিদের হত্যা বন্ধ না হওয়া এবং ভারতের বিভিন্ন শহরে বাংলাদেশি পর্যটকদের হোটেল বুকিং নিয়ে হয়রানি উল্লেখযোগ্য।
তবে ভারতের অšত্মবর্তীকালীন সরকারের সময় দিল্লীতে দুদেশের জেষ্ঠ্য আমলাদের আলোচনা থেকে ঢাকার বেশি কিছু আশা করা উচিত নয়। কারণ কোন সরকারের অšত্মর্বর্তীকালীন সময়ে আমলারা কেবল নিয়মতান্ত্রিক দাপ্তরিক কাজ করে থাকে। সুতরাং এ সময় দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনা অনেকটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যেই পড়ে।
হতে পারে গত মার্চে মিয়ানমারে অনুষ্ঠিত বিমসটেক সম্মেলনের অবকাশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর সাথে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাতের পর এটা একটা রুটিন ফলোআপ। তবে দুদেশের সরকার প্রধানের এই বৈঠক থেকে তি¯ত্মার পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলে ইঙ্গিত আসলেও ভারত থেকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ আমদানির ব্যাপারে সšেত্মাষ প্রকাশ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ অবস্থায় ভারতের জাতীয় নির্বাচনের পর বাংলাদেশের জন্য তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে।
প্রথমত,পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও ভারতের তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জীর শক্তি ও দুর্বলতার বিষয়টি যা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
দ্বিতীয়ত: নয়াদিল্লীতে যদি তৃতীয় কোন পক্ষের দ্বারা সরকার গঠিত হয় তাহলে ভারতের সাথে বাংলাদশের কাঙ্খিত চুক্তি সম্পাদন করা কঠিন হয়ে পড়বে।
তৃতীয়ত: বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট যদি ভারতে কেন্দ্রীয় সরকার গঠন করে তাহলে তা হাসিনার সরকারের জন্য মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে উঠবে। কারণ বিজেপি এরইমধ্যে আসামে অবৈধ অভিবাসনের ইস্যু উত্থাপন করে আসছে। অথচ পশ্চিম বাংলা ও ত্রিপুরা রাজ্যে বাংলা কমন ভাষা হওয়ার পরও এখানে অবৈধ অভিবাসনের কোন অভিযোগ নেই।
এই অবস্থায় ভারতের জাতীয় নির্বাচনের পর বাংলাদেশ ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বর্তমান রাজনৈতিক চিত্র ভিন্নও হতে পারে। এমন এক পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গবেষক ও ঢাকায় নিযুক্ত প্রতিবেশি দেশগুলোর কূটনীতিকদের প্রশ্ন দুদেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর যখন সমাধান সম্ভব নয় তখন কেন ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিবকে নয়াদিল্লীতে আমন্ত্রণ জানালেন ?