যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে হটাৎ করেই সংগঠিত শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ কি শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে! এমন গুঞ্জন চলছে এখন সংশ্লীষ্ট মহলে। বিশেষ করে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার একটি মন্তব্যকে ঘিরে এই গুঞ্জন আরো জোরালো হয়েছে।
গতকাল রবিবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান রাজনৈতিক দল গঠনেরই আভাস দেন।
মূলত শাহাবাগে প্রজন্ম চত্ত্বরে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিল গণজাগরন মঞ্চ। শুরু থেকেই এই সংগঠনটি ক্ষমতাসীনদের প্রত্যক্ষ সমর্থন এবং পুলিশি নিরাপত্তা পেয়ে আসছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই গত কয়েকদিনে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। গত কয়েকদিনের ঘটনায় বোঝা যায় সরকারের সমর্থন হারিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। প্রকাশ হয়ে পরে নিজেদের মধ্যে কোন্দল। বিশেষ করে ছাত্রলীগের সাথে তাদের কোন্দল নিয়ে মিডিয়া হয় সরব। গুঞ্জন ওঠে বিভিন্ন অর্থনৈতিক অনিয়মের। যে পুলিশ এতোদিন তাদের পাহারা দিয়েছিল সেই পুলিশই বেধড়কভাবে তাদের ওপর চড়াও হয়। যে ছাত্রলীগ এতদিন তাদের সাথে কাধে কাধ মিলিয়ে কথিত আন্দোলন চালিয়ে গেছে। কোটি কোটি টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন তারা। প্রায় দেড় শতাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করা হয়েছে মঞ্চের নামে। মঞ্চের নামে বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও অস্বচ্ছতার প্রতিবাদ জানিয়ে আন্দোলনের এক পর্যায়ে নোট অব ডিসেন্ট দেয় ছাত্র ফেডারেশন। অভিযোগ রয়েছে মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দিয়েছেন ইতিমধ্যে। নিজেও দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা করছেন। আর আন্দোলনের সঙ্গে জড়িতরা তার কাছে হিসাব চাইছেন। শুধু ডা. ইমরান এইচ সরকারই নয় আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা জড়িত রয়েছেন চাঁদাবাজিতে। তারা এখন হিসাব দিচ্ছেন না। এর মধ্যে কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বও রয়েছেন।
গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ওপর শুক্রবার পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলার পর বিষয়টি জোরালোভাবে সামনে এসেছে। গণজাগরণ মঞ্চ পর্দার অন্তরালে বিভিন্ন স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন থেকেও টাকা নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ছাত্রলীগ নেতারা। এর আগে একই ধরনের অভিযোগ করেন গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম রূপকার শহীদুল হক। টাকার ভাগাভাগি নিয়ে হচ্ছে মিটিংয়ের পর মিটিং।
কাদের মোল্লার রায়কে কেন্দ্র করে গত বছরের ৫ই ফেব্রুয়ারি ‘ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভেটিস্ট নেটওয়ার্ক’ নামে আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের কারণে এক প্রকার বাধ্য হয়ে সরকার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিটি) আইন সংশোধন করতে বাধ্য হয়েছিল। ২০১৩ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) সংশোধন বিল, ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাস হয়। আগের আইনে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের সুযোগ ছিল না। গতবছরের ১১ই ডিসেম্বর কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। এরপর পানি গড়িয়েছে অনেক। এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে বিতর্কিত দশম জাতীয় নির্বাচন। এখন ক্ষমতাসীনদের মদদেই তৈরি এই মঞ্চই এখন ক্ষমতাসীনদের বোঝা। সরকারের এমন মনোভাব বুঝে এখন নতুন সুর তাদের।
এমন এক পরিস্থিতিতে সরকারের কিছু সিদ্ধান্তের সমালোচনাও শুরু করেন মঞ্চের মূখপাত্র ড: ইমরান এইচ সরকার। এর পরপরই গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র সংবাদ মাধ্যমকে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, আমরা সরকারের কাছে এমনটি আশা করিনি।
রাজনৈতিক দল হিসেবে গণজাগরণ মঞ্চ প্রকাশ পাবে কিনা সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, এটি আসলে সময়ের দাবি। জনগণই নির্ধারণ করবে তারা কি চান। তাঁর কথায় পরিষ্কার হয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ অচিরেই রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।
তবে গণজাগরণ মঞ্চের মূল ইসু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিটি রাজনৈতিক মঞ্চে নিয়ে গিয়ে কতখানি সফলতা আসবে সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। কারণ অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে অনেকেই গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন অনেককেই প্রথমে বিভ্রান্ত করতে সমর্থ হলেও রাজনৈতিক লেবাস পরলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু থাকবে তানিয়ে সন্দিহান সংশ্লীষ্ট পক্ষরাই।