সাংবাদিকদের বিশেষ কোন অধিকার নাই, আছে অধিকারহীনতা। কিন্তু বাংলাদেশের প্রথম আলোর ক্ষেত্রে নিয়মটা একেবারেই আলাদা। দেশের কৃতিসন্তানদের পিছু টেনে ধরাই যেন ‘প্রথম আলোর’ অধিকার। নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কা না করে প্রথম আলো টুর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ে সাকিব আল হাসানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ ও তা প্রচার করেছে।
টুর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ে প্রথম আলোকে সাক্ষাৎকার দিয়ে শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন সাকিব আল হাসান। সাকিব যখন সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন তখন বাংলাদেশ দলের জন্য সময়টা ছিল খুবই স্পর্শকাতর। দেশের মাটিতে ওয়ার্ল্ড টি২০ এর মতো টুর্নামেন্ট চলছে। অথচ একের পর এক পরাজয়ের শিকার হচ্ছে বাংলাদেশ দল। সাকিব আল হাসান নিজেও দলের জন্য যথোপযুক্ত ভূমিকা রাখতে পারছিলেন না।
এমন মুহুর্তে যে কেউই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করে নিস্তার পেতে চাইবে। প্রথম আলো সম্ভবতঃ সাকিব আল হাসানের সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নিজের পত্রিকার পাঠক বাড়াতে চেয়েছে। একারণেই, নিয়ম-নীতির মুণ্ডুপাত করে টুর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ে সাকিবের সাক্ষাৎকার নিয়ে তা প্রকাশ করেছে। এইভাবে দেশের কৃতিসন্তানদেরকে বিতর্কিত করে দিয়ে প্রথম আলো চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিল।
নিঃসন্দেহে আবেগতাড়িত সাকিব আল হাসান নিজেকে ছুঁড়ে দিয়েছিলেন ব্যবসায় উন্মুখ প্রথম আলোর সাংবাদিকের সামনে। আর, সেই সাকিব আল হাসানকে ফেঁড়ে-ফুড়ে নিজের স্বার্থ উদ্ধার করেছে প্রথম আলো। ওই সাক্ষাৎকারে সাকিব আল হাসানের যে চরিত্র প্রকাশ পেয়েছে তা প্রকৃত সাকিব আল হাসান নয়। একটি সাক্ষাৎকার নেওয়া, লেখা ও প্রকাশ করার মাঝখানে একটি পত্রিকার অনেকগুলো মাথা অনেকগুলো মানুষ জড়িত থাকে। কোন সাক্ষাৎকার পড়ে পাঠকের সেই প্রতিক্রিয়াই হয়, যা পত্রিকাটি চায়। সাকিব আল হাসানের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রথম আলো এমনভাবে সাক্ষাৎকারটি নিয়েছে, লেখেছে ও ছাপিয়েছে যাতে দর্শকরা রেগে যান, উত্তেজিত হন। এবং হয়েছেও তাই। এইভাবে সাকিব আল হাসানের মতো একজন বিশ্বমানের খেলোয়াড়কে পিছু টেনে ধরার অধিকার প্রথম আলোকে কে দিল?
প্রচুর ত্যাগ ও অনুশীলনের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আজকের পর্যায়ে এসেছে। আমরা খুব দ্রুতই অতীত ইতিহাস ভুলে যাই। ক্রিকেটার পরিচয় দিলে বিয়ে করতেও সমস্যা হওয়ার করুণ কাহিনীগুলো খুব বেশি দিনের পুরনো নয়। ওই দিনগুলো পার করেই আজকের বাংলাদেশ ক্রিকেট দল তৈরী হয়েছে। সাকিব আল হাসানের মতো বাঙ্গালীরা বিশ্বের সেরাদের তালিকায় নিজেদের নাম লেখাতে শুরু করেছে মাত্র। আমাদের যাওয়ার আছে অনেক দূর। এই প্রতিজ্ঞা সাকিব আল হাসান থেকে শুরু করে বাংলাদেশের বর্তমান ও অনাগত সকল ক্রিকেটারেরই আছে।
আর, ক্রিকেটার এমন প্রতিজ্ঞার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম আলো। সবাই একসাথে বড় না হলে, আলাদাভাবে কেউই বড় হতে পারে না। যতদিন পর্যন্ত দেশের সংবাদকর্মী ও দর্শকরা বড় মনের অধিকারী না হবে ততদিন সাকিব আল হাসান কিংবা বাংলাদেশ ক্রিকেট দল চাইলেও সফল হতে পারবে না। কেননা, প্রথম আলোর মতো করেই কেউ না কেউ সাকিব আল হাসানের মতো কৃতিসন্তানদের পিছু টেনে ধরবে। তাই, নিজেদের স্বার্থে নয়, দেশের স্বার্থে হলেও প্রথম আলোর বোঝা উচিত দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা কী?