গণজাগরণে ঈর্ষান্বিত ছাত্রলীগ

0
136
Print Friendly, PDF & Email

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সৃষ্ট গণজাগরণ মঞ্চ ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে যথাযথ সিদ্ধান্তের অভাবে জনপ্রিয় হওয়ার পরিবর্তে মানুষের বিরাগভাজন হয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ছাত্রলীগ তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের নেতারা।

নেতারা জানান, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার স্বাধীনতাকামী মানুষের প্রাণের দাবি। যুদ্ধাপরাধী ও জামায়াত ইস্যুতে দ্বৈত ভূমিকার কারণে সরকারের প্রতি মানুষ ক্ষুব্ধ। যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত, তাদের সংগঠন নিষিদ্ধ করা, তাদের সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা এবং যারা তাদরে সহযোগিতা করছে তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করতে ছাত্রলীগ মূখ্য ভুমিকা পালন করতে পারতো। কিন্তু আগে তারা গণজাগরণের আন্দোলনে শরীক হলেও রহস্যজনক কারণে অনেক দিন থেকে নীরব।

নেতারা অভিযোগ করেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আগের মতোই সরব গণজাগরণ মঞ্চ। সম্প্রতি তাদের নীরবতার ঘুম ভাঙলেও তারা আন্দোলনে সামিল না হয়ে নানা ছলা কলায় গণজাগরণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। কিন্তু আপোষহীন নীতির কারণে গণজাগরণ মঞ্চের প্রতি ধর্ম-বর্ণ শেণী-পেশা নির্বিশেষে অসংখ্য মানুষ সংহতি প্রকাশ করে। তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ায়। আকাশচুম্বী জনাপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে ছাত্রলীগ গণজাগরণের বিরুদ্ধে হামলাসহ নানা অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে।

এদিকে, শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, ছাত্রলীগ একটি প্রতিষ্ঠিত সংগঠন। গণজাগরণ মঞ্চ জনবিচ্ছিন্ন। গণজাগরণ মঞ্চ পর্দার অন্তরালে বিভিন্ন স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন থেকে টাকা নিচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। এই কারণেই জনগণের মঞ্চ থেকে তারা আজ বিচ্ছিন্ন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বলা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। কারণ মিডিয়া কাভারেজ পাওয়া যায়। দীর্ঘ ১০ মাস ধরে গণজারণ মঞ্চের সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের সঙ্গে বিরোধ থাকার কোনো প্রশ্নই আসে না।

একই দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে, সরকার সমর্থিত সংগঠন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার কর্মীদের ওপর হামলা ও তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারের শাস্তির দাবি করে।

অন্যদিকে, গণজাগরণ নেতৃবৃন্দ বলেন, গণজাগরণ মঞ্চ যথেষ্ট সঙ্ঘবদ্ধ। ৩৯টি রাজনৈতিক অরাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সমন্বয়ে গণজাগরণ মঞ্চ গঠিত। গণজাগরণ মঞ্চ আন্দোলন সংগ্রামের কর্মসূচি ঘোষণা করলে মানুষ সে কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া দেয়। দিন দিন গণজাগরণের প্রতি তৃণমূলেরও সমর্থন বাড়ছে। অথচ ছাত্রলীগকে এখন আর এসব সংগঠন ও মানুষগুলো বিশ্বাস করতে চায় না। তারা ছাত্রলীগের কথা শুনতে চায় না। ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে তাদের পাওয়া যায় না। এসব কারণেও ছাত্রলীগ গণজাগরণ মঞ্চের ওপর ক্ষুব্ধ।

শুক্রবার ইমরান এইচ সরকার সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানাতে শাহবাগে আসি। অথচ পুলিশ সমাবেশ করতে না দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে। পুলিশের সঙ্গে সরকার দলীয় লোকজন ছিল। তারা আমাদের লোকজনকে চিনিয়ে দিচ্ছিল। তারা হামলায়ও অংশ নেয়।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীও আমাদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্ম হয়ে মোমবাতি জ্বালিয়েছিলেন। এখানে এক সময় সরকারি দলের লোকজনও এসেছিলেন। তাই বলে এখানে যারা এসেছিলেন, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় চলে যায়নি। আমাদের ওপর হামলাকারীরা নিজেদের যে পরিচয়ই দিক না কেন, তারা মূলত সরকারি দলের কর্মী হিসেবেই কাজ করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ও সমাজতান্ত্রিক ‍ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি জয়ন্ত দত্ত নান্টু প্রাইমনিউজ.কম.বিডিকে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। গণজাগরণ মঞ্চ যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে তাদের আগের সিদ্ধান্তে অটল। কিন্তু সরকার গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকে এখন আর সইতে পারছে না। ছাত্রলীগও সইতে পারে না।

গণজাগরণ মঞ্চ নেতা হাসান শিবলী প্রাইমনিউজ.কম.বিডিকে বলেন, ছাত্রলীগ আমাদের সভাসমাবেশে বিনা উস্কিানিতে হামলা করছে। টিএসসি থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত সভা করতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতারা তাদের অনুমতি ছাড়া সভা নিষিদ্ধ করে। এমনকি ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নেতা শেখ আসমান গণজাগরণ মঞ্চের কাছে কিছু টাকা পয়সাও দাবি করে। ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ আসমানের টাকা দাবির বিষয়টি স্বীকার করলেও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ছাত্রলীগ।

তিনি আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্নে গণজাগরণ মঞ্চ এখন পর্যন্ত তাদের সিদ্ধান্তে অটল। আপোষহীন নীতির কারণে গণজাগরণের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের অপপ্রচার মানুষ আমলে নিচ্ছে না। আমাদের প্রতি মানুষের আস্থা অটুট।

শেয়ার করুন