ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া রয়েছে শতাধিক কোটি টাকা। এর মধ্যে ১০ লাখ টাকার অধিক বকেয়া রয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাই রয়েছে ১১৪টি। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বিদেশী দূতাবাস, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, হোটেল, ট্রাস্ট, সমিতি প্রভৃতি। বছরের পর বছর এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে ট্যাক্স বকেয়া থাকলেও তা আদায় করতে পারছে না ডিএনসিসি।
ডিএনসিসির রাজস্ব বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ২০১১ সালের ১ ডিসেম্বর ডিসিসি বিভক্তির পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় দেড় লাখ হোল্ডিং রয়েছে। এর মধ্যে দীর্ঘ দিন থেকে ১১৪টি প্রতিষ্ঠানের কাছে শতাধিক কোটি টাকা ট্যাক্স বকেয়া পড়ে রয়েছে। যাদের একেক জনের কাছে ১০ লাখ থেকে সাড়ে ২৬ কোটি টাকা পর্যন্ত রয়েছে। এ ছাড়া ১০ লাখের নিচেও আরো কয়েক শ’ প্রতিষ্ঠানের কাছে হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া রয়েছে।
তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, গুলশানের ৭১ নম্বর রোডে অবস্থিত কনটিনেন্টাল হাসপাতালের কাছে ডিএনসিসির সর্বোচ্চ বকেয়া রয়েছে। তাদের কাছে পাওনা ২৬ কোটি ৪৬ লাখ ৯৩ হাজার টাকা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উচ্চ আদালতে মামলা করায় ট্যাক্স আদায় করতে পারছে না ডিএনসিসি। এ ছাড়া বাংলাদেশ তার ও টেলিফোন বোর্ডের কাছে চার কোটি ৬০ লাখ ২০ হাজার টাকা। সরকারি প্রতিষ্ঠানটিও এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে মামলা করেছে। একইভাবে দক্ষিণ বিশিলের হজরত শাহ আলী মার্কেট বহুমুখী সমবায় সমিতির কাছে দুই কোটি ২৭ লাখ ১৩ হাজার ৬০০ টাকা, কল্যাণপুরের এক ব্যবসায়ীর কাছে দুই কোটি ১৫ লাখ ৮৫১ টাকা, একটি রিয়েল এস্টেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে দুই কোটি এক লাখ ৪০ হাজার ৫৬০ টাকা, এয়ারপোর্ট রোডের হোটেল রিজেন্সির কাছে এক কোটি ৮৮ লাখ ৯ হাজার ২৫৩ টাকা, মিরপুরের পিডব্লিউডি, ডিভির কাছে এক কোটি ৭৮ লাখ ৭১ হাজার ৭০৭ টাকা, বনানীর এক ব্যবসায়ীর কাছে এক কোটি ৬৭ লাখ ৪৩ হাজার ৩৫৯ টাকা, মিরপুরের ঢাকা কমার্স কলেজের কাছে এক কোটি ৫৫ লাখ ৫৭ হাজার ৪৫১ টাকা, উত্তরার খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছে ৩৯ লাখ ৫৩ হাজার ৭০১ টাকা, স্কলাসটিকা স্কুলের কাছে ২৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৯৪ টাকা, মনিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের কাছে ৪৮ লাখ ৫৭ হাজার ৩০৭ টাকা, মিরপুরের মুসলিমবাজার বহুমুখী সমবায় সমিতির কাছে ১৯ লাখ ৫৮ হাজার ৫৩৭ টাকা, সেকশন-২ এর পিডব্লিউডি, ডিভির কাছে ১৩ লাখ ২৮ হাজার ৫৪০ টাকা, সেকশন-১৪-এর পিডব্লিউডি, ডিভির কাছে ৮২ লাখ ১০ হাজার ৭১০টাকা, চারটি দূতাবাসের কাছে দেড়কোটি টাকা, ইস্কাটনের বিসিএস প্রশাসন অ্যাসোসিয়েশনের কাছে ৪৩ লাখ ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা, মগবাজারের ওয়াকফ এস্টেটের কাছে ৬৭ লাখ ৭ হাজার ২৫৬ টাকা, মিরপুরের মনিপুর হাইস্কুলের কাছে ৫৩ লাখ ৫ হাজার ৩৮০ টাকা, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের কাছে ৪১ লাখ ৯৬ হাজার ৫২৫ টাকা, বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের কাছে ৯৮ লাখ ৬৮ হাজার ৬২ টাকাসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে শতাধিক কোটি টাকা হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া রয়েছে ডিএনসিসির।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো: মমতাজ উদ্দিন বলেন, রাজস্ব বাড়াতে ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নেয়া হয়েছে। এতে কিছু আদায় করা সম্ভব হয়েছে। তবে মামলার কারণে বকেয়া হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ে কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে।
সংস্থা সূত্রে জানা যায়, বকেয়া হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করতে না পারার কারণে সেবাদান কার্যক্রমও ব্যাহত হচ্ছে। ঠিকাদারদের বিলও সঠিক সময়ে পরিশোধ করতে পারছেন না তারা। এমনকি সংস্থাটি নিজের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ কার্যালয়েরও সংস্থান করতে পারেনি। এ দিকে ডিএনসিসির ২০১৩-১৪ অর্থবছরে হোল্ডিং কর আদায়ের ল্যমাত্রা ছিল ৩৮৮ কোটি টাকা। গত ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত আট মাসে আদায় হয়েছে মাত্র ১৪০ কোটি টাকা।
এ বিষয়ে ডিএনসিসির প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আমিরুল ইসলাম বলেন, ১০০ কোটি টাকার বেশি হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া রয়েছে। মামলাসহ বিভিন্ন কারণে সেগুলো আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে করপোরেশনের আর্থিক সঙ্কট রয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ঠিকমতো দিতে পারলেও ঠিকাদারদের বিল পরিশোধে কিছুটা সমস্যা রয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে গুলশানের মেয়র ভবন ও বনানী কমিউনিটি সেন্টারে ভাগ করে চলে ডিএনসিসির কর্মকর্তাদের কাজ। রাজধানীর কূটনৈতিক এলাকা হিসেবে পরিচিত বারিধারা, গুলশান, বনানী ও উত্তরার মতো অভিজাত এলাকা নিয়ে গঠিত সংস্থাটি। পাশাপাশি কারওয়ান বাজারের মতো বাণিজ্যিক এলাকা, তেজগাঁও শিল্প এলাকা, মিরপুর ও বাড্ডার মতো ঘনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকাও ডিএনসিসির আওতাভুক্ত।