লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার উত্তর বিছনদই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খুদে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলছে স্কুলে নয়, চৈত্রের কাঠফাটা রোদে, রাস্তায়। পছন্দের প্রার্থীকে নৈশপ্রহরী হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ায় রাগে-ক্ষোভে স্কুলের একমাত্র প্রবেশপথ বন্ধ করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের এক নেতা। আর এতেই রাস্তায় ঠাঁই হয়েছে কোমলমতি এই শিশুদের।
ক্ষমতাসীন দলের এই নেতার দাপটে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, অসহায় তাদের অভিভাবক ও শিক্ষকেরাও।
গতকাল শনিবার দুপুরে স্কুলটিতে গিয়ে দেখা যায়, মূল রাস্তা থেকে বিদ্যালয়টিতে প্রবেশের একমাত্র পথটি বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ছোট্ট শিশুশিক্ষার্থীরা বেড়ার পাশে রাস্তার ওপর বসে পাঠদান নিচ্ছে। চৈত্রের খরতাপে রোদে পুড়ে শিক্ষার্থীরা নাকাল হয়ে পড়লেও নিরুপায় শিক্ষক-শিক্ষিকারা। যেখানে বেড়া দেওয়া হয়েছে, সেখান থেকে স্কুলটি প্রায় দেড় শ গজ ভেতরে অবস্থিত।
বিদ্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক আবুল কাশেমের সঙ্গে ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আসাদুজ্জামানের স্কুলের নৈশপ্রহরী নিয়োগ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। এই পদে আবুল কাশেমের পছন্দের প্রার্থী তাঁর ভাতিজা শাহ আলম এবং আসাদুজ্জামানের পছন্দের প্রার্থী তাঁর চাচাতো ভাই মাহাফুজ্জামান।
সূত্রমতে, নৈশপ্রহরীর পদে আবেদনকারী সাতজন প্রার্থীর যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা গ্রহণের যাবতীয় প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। এতে আসাদুজ্জামানের পছন্দের প্রার্থীকে বাদ দিয়ে আবুল কাশেমের পছন্দের প্রার্থীকে নেওয়া হচ্ছে—এ রকম একটি খবর সম্প্রতি ছড়ালে এ দুই নেতার দ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে ওঠে। দ্বন্দ্বের জের ধরে গতকাল সকালে স্কুলের প্রবেশপথটি বন্ধ করে দেন আসাদুজ্জামান ও তাঁর লোকজন।
শিক্ষক-শিক্ষিকারা বলেন, আওয়ামী লীগের নেতার দেওয়া বেড়া সরানোর ক্ষমতা তাঁদের নেই। স্কুল তো বন্ধ রাখা যাবে না। তাই বাধ্য হয়েই স্কুলে ঢোকার পথে রাস্তায় এভাবে পড়াতে হচ্ছে তাদের।
রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমার দাদারা ওই স্কুলের প্রায় ১০০ শতাংশ জমির দাতা। তাই আমার চাচাতো ভাই মাহাফুজ্জামানকে নৈশপ্রহরী হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথায় ৯০ হাজার টাকা নিয়েছেন স্কুল কমিটির সভাপতি আবুল কাশেম। নিয়োগ দেওয়ার পর আরও এক লাখ ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের সহযোগিতায় আবুল কাশেম তাঁর পছন্দের প্রার্থীর কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা নিয়ে তাঁকে নিয়োগদানের চেষ্টা চালাচ্ছেন। বাধ্য হয়ে রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
তবে আবুল কাশেম কারও কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘মূল বিদ্যালয়টিতে ৮৮ শতাংশ জমি আছে। বাকি ১২ শতাংশ জমিতে রাস্তাটি। কিন্তু গায়ের জোরে এই রাস্তা আসাদুজ্জামান ও তাঁর লোকজন বন্ধ করে দিয়েছেন। নৈশপ্রহরী নিয়োগ নিয়ে নয়, মূলত স্কুলের জমি নিয়েই তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। তা ছাড়া পরীক্ষা হয়েছে, নিয়োগ কমিটি কাকে নৈশপ্রহরী নিয়োগ দেবে, তা তারাই জানে।’
প্রধান শিক্ষক ইসমাইল হোসেন জানান, ১৯৬৮ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ ৪৬ বছর ধরে ওই একটি পথই ব্যবহূত হয়ে আসছে। কিন্তু হঠাৎ করেই পথটি বন্ধ করে দেওয়ায় বিদ্যালয়ে ঢোকা যাচ্ছে না। বিষয়টি হাতীবান্ধা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।