সাত বছর পর আবারও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত। এ রকম বড় টুর্নামেন্টে ভারতকে এভাবে খেলতে দেখাটা আসলেই দারুণ। এই প্রতিযোগিতার আগে তাদের সময়টা খুব ভালো যাচ্ছিল না। কিন্তু এখানে তাদের দুর্দান্ত লাগছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তারা অসাধারণ। চাপটাকে যেন তারা জলবৎ তরলং বানিয়ে ফেলেছে। পরশু ম্যাচের বিরতির সময়ও যদি বলা হতো ওদের (দক্ষিণ আফ্রিকার) রানটা খুব বেশি হয়নি, তাহলে সেটি মিথ্যা বলা হতো। কিন্তু বিরাট কোহলির ক্রমেই পরিণত হয়ে ওঠা কাঁধে চড়ে সেটা সহজেই পেরিয়ে গেছে ভারত। ভারতের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে ভালো দিকটি হলো ক্রিজে যে-ই আসুক, কখনোই প্রয়োজনীয় রানরেটকে বাড়তে দেয়নি। আমরা দেখেছি খুব বড় রান তাড়া না করেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাকিস্তান কীভাবে পা হড়কেছে। এক ওভার বাকি রেখেই যে ভারত জিতল তার বড় কারণ ভারতের ব্যাটসম্যানদের দারুণ গতি। রোহিত শর্মা ও অজিঙ্কা রাহানে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েছিল। কাউকে দেখেই মনে হয়নি বড় উপলক্ষটা চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার মতে বড় উপলক্ষে এটাই ভারতের মূল শক্তি, বড় টুর্নামেন্টে তারা আরও বেশি সুসংহত। তাই গত কয়েক বছরে তাদের বেশ কয়েকটি বড় শিরোপা জেতার পেছনে কোনো বিস্ময় নেই।
আমার কাছে কোহলিই এখন ‘ম্যান অব দ্য মোমেন্ট’। ক্যারিয়ারে বেশ কয়েকজন বড় খেলোয়াড়ের সঙ্গে আমি খেলেছি। আমি বলতে পারি ও তাদের মাপেরই একজন। চাপের মধ্যেও সে যেভাবে ইনিংসটা খেলেছে, সেটা শুধু তার দক্ষতাই প্রমাণ করে না, বড় ম্যাচে তার ক্ষুরধার মস্তিষ্কেরও পরিচয় দেয়। অনেকেই বলে কোহলি বড় রান তাড়া করতে পছন্দ করে। কথাটা ঠিক। সে নিজেকে বিস্ময়ের কাতারে নিয়ে যাচ্ছে, সামনে অনেক রেকর্ডই হয়তো ভেঙে দেবে। আমার যে দুটি দৃশ্যের কথা মনে পড়ছে তার একটি, রোহিত শর্মা যখন সীমানার কাছে একটি ফিল্ডিং মিস করল তখন কোহলির প্রতিক্রিয়া। এবং ধোনি যখন শেষের আগের ওভারে বলটা ঠেকিয়ে খেলাটা ওকে শেষ করার সুযোগ দিল। এতেই প্রমাণ হয় দল ও জয় মানে তার কাছে কী। এবি ডি ভিলিয়ার্সের পাশে সে-ই এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা। এই মনোভাবটাই বাকিদের চেয়ে ওকে আলাদা করেছে এবং এটার জন্য ভারত সমর্থকেরা সামনের বছরগুলোয় দলের ওপর আস্থা রাখবে।
আজকের ফাইনালে খেলবে টুর্নামেন্টের সেরা দুই দল। শেষবার শ্রীলঙ্কার হয়ে টি-টোয়েন্টি খেলবে সাঙ্গা (সাঙ্গাকারা) ও মাহেলা (জয়াবর্ধনে)। দল ফাইনালে উঠেছে, তাঁদের জন্য এর চেয়ে ভালো উপলক্ষ আর হতে পারে না। শ্রীলঙ্কা ২০০৭, ২০১১ ও ২০১২ সালে দুটি সংস্করণেরই বিশ্বকাপ ফাইনালে খেলেছে। কিন্তু হেরেছে তারা এর তিনটিতেই। তাদের দলে ভারসাম্য আছে, কিন্তু ভারতের মতো দুর্বার দলকে থামানোর মতো মানসিক শক্তি কি তাদের আছে? ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক লাসিথ মালিঙ্গার অধীনে তারা বিস্ময়করভাবে ভালো খেলেছে। এখন ওকে ভারতকে হারানোর কৌশল খুঁজে বের করতে হবে। শ্রীলঙ্কার বোলিং এই কন্ডিশনে ভারসাম্যপূর্ণ মনে হচ্ছে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে কোহলিকে ফিরিয়ে দেওয়ার একটি উপায় ওদের বের করতে হবে। সেটা করতে না পারলে হয়তো আবারও দ্বিতীয় হয়েই টুর্নামেন্ট শেষ করতে হবে ওদের।