রাজধানীতে বিশুদ্ধ পানির হাহাকার

0
221
Print Friendly, PDF & Email

ঢাকা ওয়াসার দাবির সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ পানি উৎপাদন বেশি দেখালেও প্রকৃত চিত্র ভিন্ন। গরম পড়তে না পড়তেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট। এ ছাড়া দুর্গন্ধের কারণে অনেক এলাকার মানুষ ওয়াসার পানি খেতে পারছে না। ফোটানোর পরও থেকে যাচ্ছে দুর্গন্ধ। সামর্থ্যবানেরা বাইরে থেকে ফিল্টার পানি কিনে খেতে পারলেও বেশির ভাগ মানুষকে নাক চেপে এ দুর্গন্ধযুক্ত পানি পান করতে হচ্ছে। আবার দুর্গন্ধযুক্ত পানি ব্যবহারের কারণে নানা ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন নগরবাসী।
জানা গেছে, রাজধানীর মগবাজার, মধুবাগ, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, নারিন্দা, চাঁদনীঘাট, তাঁতিবাজার, পানিটোলা, রামপুরা, শান্তিনগর, নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, কদমতলী,
আহমেদবাগ, রাজারবাগ, মাদারটেক, বাসাবো, কুসুমবাগ, গোড়ান, মুগদা, মানিকনগর,  গোপীবাগ, জিয়ামাঠ, অভয় দাস লেন, কেএম দাস লেন, স্বামীবাগ, ওয়ারী, মৈশুণ্ডি, বনগ্রাম, নবাবপুর, ধোলাইখাল, মিটফোর্ড, বাবুবাজার, সিক্কাটুলী, ইসলামপুর, বংশাল, আরমানিটোলা, লক্ষ্মীবাজার, বাংলাবাজার, শাঁখারীবাজার, মিরপুর, কুড়িল-বাড্ডা,  জোয়ারসাহারা, কুড়াতলী, মেম্বারবাড়ি, মিরপুর-১, ২, পল্লবী, ইব্রাহীমপুর, উত্তরা, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, মুগদা, খিলগাঁও, আজিমপুর ও নিউ ইস্কাটন, লালমাটিয়া, গণকটুলী, মোহাম্মদপুরের বাঁশবাড়ী রোড, শ্যামলী রিং রোডসহ আশপাশ এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই দেখা দিয়েছে পানির তীব্র সঙ্কট। সঙ্কটের বাইরে নেই রাজধানীর অভিজাত এলাকাগুলোও ।
খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম জানান, গত কয়েক দিন ধরে ওয়াসার লাইনে পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বাইরে থেকে পানি কিনতে হচ্ছে। কোনো কোনো দিন গোসলেরও সুযোগ হচ্ছে না। বাড়ির মালিক হওয়ায় ভাড়াটিয়াদের অভিযোগ শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছি। আর কত পানির কষ্ট সহ্য করা যায়?
মানিকতলার রুবিনা ইসলাম নামে এক গৃহিণী জানান, গত তিন দিন ধরে বাসায় পানি পাচ্ছি না, পানির অভাবে রান্না-বান্না ও গোসল করতে পারছি না। পানির অভাবে অনেক কষ্ট হচ্ছে।
পানি সঙ্কট নিয়ে রাজধানীর ওয়ারীর বাসিন্দা শামিমুল ইসলাম জানান, প্রতি বছর গরম এলেই আমাদের এলাকায় পানির সঙ্কট দেখা দেয়। কর্তৃপরে কাছে বার বার অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয় না। কোনো উপায় না দেখে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ওয়াসার পানির গাড়ি থেকে আমরা পানি কিনছি। তিনি আপে করে বলেন, এভাবে আর কত দিন। আমরা ওয়ারীবাসী পানি সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান চাই।
এ দিকে শুধু সঙ্কটই নয়, ওয়াসার পানিতে তীব্র দুর্গন্ধ রয়েছে। এসব পানি দিয়ে গোসল করাসহ অন্যান্য কাজ চালিয়ে নিলেও খাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাইরে থেকে উচ্চমূল্যে ফিল্টার পানি কিনে খাবার পানির চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। সামর্থ্যবানরা বাইরে থেকে ফিল্টার পানি কিনে খেতে পারলেও বেশির ভাগ মানুষকে এ দুর্গন্ধযুক্ত পানিই নাক চেপে পান করতে হচ্ছে।
মগবাজার এলাকার বাসিন্দা আশরাফুজ্জামান অভিযোগ করেন, গত দুই বছর ধরে এ এলাকায় বাস করছি। ওয়াসার পানিতে দুর্গন্ধ থাকার কারণে খাওয়া যায় না। পানি ফোটানোর পরও গন্ধ থেকে যায়। এ পানি খাওয়ার কারণে মেয়ের টাইফয়েড হয়েছে। এ কারণে স্বামী-স্ত্রী এ পানি কোনো রকমে নাক চেপে খেলেও মেয়েকে বাইরে থেকে উচ্চমূল্যে ফিল্টার পানি কিনে খাওয়াতে হচ্ছে। তিনি জানান, তার বাসার আশপাশের সবাইকে এভাবে পানি কিনে খেতে হচ্ছে।
কাটাসুর এলাকার ফজলুল লতিফ জানান, মাঝখানে কিছুকাল ঠিক থাকার পর ওয়াসার পানিতে আবার তীব্র গন্ধ দেখা দিয়েছে। পানিতে চাপ কমে যাওয়ার পাশাপাশি রয়েছে ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধ। ওয়াসার পানি সরবরাহের স্থানীয় অফিসে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। কর্তৃপ এলাকাবাসীর অভিযোগ কোনোভাবেই পাত্তা দিচ্ছে না। কিন্তু পানি নিয়ে কাঁটাসুর এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় এলাকায় পানিবাহিত রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে তিনি আশঙ্কা জানান।
এ ব্যাপারে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. তাকসিম এ খানের বক্তব্য নিতে কয়েক দিন ওয়াসার কারওয়ান বাজারের অফিসে গেলেও তার সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। গত বৃহস্পতিবার সকালে তার দফতরে গেলেও সাক্ষাৎ মেলেনি। সারা দিন কয়েক দফা টেলিফোন করলেও তিনি ধরেননি। মোবাইলে বিষয়টি জানিয়ে মেসেজ দিলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি। তবে তার ব্যক্তিগত সহকারী জানান, স্যার ঢাকাতেই আছেন। আগামী সপ্তাহে তিনি বিদেশে যাবেন।
ওয়াসার কারো কথা বলতে মানা : ওয়াসার কয়েকজন কর্মকর্তার সাথে গতকাল কথা বলে জানা যায়, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. তাকসিম এ খান নির্দেশ দিয়েছেন, ওয়াসার কোনো ব্যাপারে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে পারবেন না। একমাত্র তিনিই কথা বলতে পারবেন। আর উপ-প্রধান তথ্য কর্মকর্তা জাকারিয়া আল মাহমুদ সাংবাদিকদের প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিতে পারবেন। এ কারণে তারা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নির্দেশের কথা জানিয়ে কোনো ধরনের বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বক্তব্য না পাওয়ায় উপ-প্রধান তথ্য কর্মকর্তা জাকারিয়া আল মাহমুদ পানি সঙ্কট বিষয়ে এক লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ওয়াসায় বর্তমানে দৈনিক ২২০ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে দৈনিক ২৪২ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করা হচ্ছে। আগামীতে মোট উৎপাদনের ৭০ ভাগ ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যে মেঘনা নদীর নারায়ণগঞ্জের বৈদ্যেরবাজারের হারিয়া পয়েন্ট থেকে ৪৫ কোটি লিটার এবং আড়াইহাজার উপজেলার বিষনন্দী পয়েন্ট থেকে আরো ৫০ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করে তা রাজধানীতে সরবরাহের লক্ষ্যে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। পানিতে দুগর্ন্ধের বিষয়ে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, পানি শোধনের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া হয়। তবে অনেক এলাকায় চোরাই লাইন রয়েছে। সেসব লাইনের লিকেজ থাকায় অনেক সময় দুর্গন্ধ ঢুকে যেতে পারে। এ বিষয়ে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে বিস্তারিত কথা বলার অনুরোধ জানান।

শেয়ার করুন