বাংলাদেশে তিস্তার পানি প্রবাহ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। এ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে উত্তরাঞ্চলের সাধারণ মানুষ এবং দেশের পানি বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। জার্মান রেডিও ডয়েছে ভেলের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেয়া হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের দাবির কথা উল্লেখ করে ডয়েছে ভেরে জানায়, তিস্তার পানি প্রবাহ স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে না আনলে উত্তরাঞ্চলের কৃষি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিস্তার পানি প্রবাহ স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনতে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা এবং ঢাকায় পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো এখন প্রতি সপ্তাহেই কোনো না কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে। পালন করেছে লংমার্চ কর্মসূচি।
পানি বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে তিস্তার পানি প্রবাহ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। গত বছর এই সময়ে বাংলাদেশে তিস্তার পানি প্রবাহ ছিল ৪ হাজার কিউসেকের কিছু বেশি। কিন্তু এবার তা ৪০০ কিউসেকে এসে ঠেকেছে। বাংলাদেশের পানি বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ার ম ইমামুল হক ডয়চে ভেলের কাছে দাবি করেন, ভারত একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
হাওর অঞ্চলবাসী-ঢাকার আহ্বায়ক শামসুদ্দোহা শোয়েব ঢাকায় এক প্রতিবাদ সমাবেশে শুক্রবার বিকেলে বলেন, ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারে কারণে তিস্তা একটি মৃত নদী হতে চলেছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এ ব্যাপারে নীরব।
তিস্তা নদীরক্ষা সংগ্রাম কমিটির ফরিদুল ইসলাম ফরিদ ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প থেকে অভিন্ন নদী গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র নদকে বাদ দেয়ার দাবি জানান।
ম ইমামুল হক বলেন, বাংলাদেশে তিস্তার পানি প্রবাহ সর্বোচ্চ ১৪ হাজার কিউসেক হলেও ঐতিহাসিক প্রবাহ ৫ হাজার কিউসেক। তাই আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ কমপক্ষে ৫ হাজার কিউসেক পানির দাবিদার। এর জন্য কোনো চুক্তির প্রয়োজন নেই। তিনি সরকারকে এই পানির জন্য উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান।
তিনি আরো বলেন, তিস্তার পানির ওপর নির্ভর করেই তিস্তা ব্যারেজ ও সেচ প্রকল্প। আর এই প্রকল্পের অধীনে সাড়ে ৬ লাখ হেক্টর কৃষি জমিতে এখন আর সেচ দেয়া যাচ্ছে না। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুরের কৃষি এবং মত্সজীবীদের জীবন ও পেশা এখন হুমকির মুখে। নদীতে পানি নেই। তাই ফসল নেই, মাছ নেই, জীবিকাও নেই। বেকার হয়ে পড়েছেন নৌ শ্রমিকরাও।
এদিকে গত সপ্তাহে তিস্তা বাঁচাও, উত্তর জনপথ বাঁচাও, বাংলাদেশ বাঁচাও- এ স্লোগানে পানির দাবিতে তিস্তার চরে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয়রা।
গত শনিবার দেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানী ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজের সামনে ধূ ধূ বালুচরে এ কর্মসূচি পালিত হয়। তিস্তা বাঁচাও সংগ্রাম কমিটি ও লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা প্রেস কাবের আয়োজনে কর্মসূচিতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ অংশ নেয়। তারা তিস্তা ও বরাক নদীসহ অভিন্ন সব নদীর ওপর ভারতের একতরফা ড্যাম ও ব্যারেজ নির্মাণের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেন।
উল্লেখ্য ২০১২ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিস্তা পানি চুক্তির যে আশা জেগে উঠেছিল তাও আর অবশিষ্ট নেই। আর তা আদৌ হবে কিনা তাও বলা যায় না।