রাজধানীর শাহবাগে গতকাল শুক্রবার পুলিশের বাধায় গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ পণ্ড হয়ে গেছে। এছাড়া মঞ্চের কর্মী এবং মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কাউন্সিল নামে অপর একটি সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে পুলিশের পৃথক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে পুলিশের লাঠিপেটায় আহত গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ও ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লাকী আক্তারসহ দুই জনকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের কয়েকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিত্সা নিয়েছে। আইন-শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে ১০ জনকে আটক করা হয়েছে। ওই দুই সংগঠন একই সময়ে সমাবেশ ডাকায় পুলিশ কাউকেই সমাবেশ করতে দেয়নি বলে জানা গেছে।
শাহবাগ থানা সূত্র এবং প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের ২০-২৫ জন সদস্য শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে জড়ো হলে তাদের ওই স্থান ত্যাগ করতে বলে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা। এর প্রতিবাদে বিকাল চারটার দিকে সংগঠনটি জাদুঘরের মূল গেট থেকে সরে এসে একটি সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে। এসময় পুলিশ ধাওয়া দেয়। ছত্রভঙ্গ তরুণরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ এবং গণগ্রন্থাগারের ভিতরে আশ্রয় নেন। এসময় কয়েকজন আহত হন।
এ ঘটনার পর বিকাল সাড়ে চারটার দিকে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা.ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে মঞ্চের কর্মীরা একটি মিছিল নিয়ে শাহবাগ জাদুঘরের সামনে সমাবেশ করতে আসেন। পুলিশ তাদেরও ওই স্থান ত্যাগ করতে বলে। কিন্তু কর্মীরা এতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে ছত্রভঙ্গ হয়ে তারা আজিজ সুপার মার্কেটের দিকে যায়। সেখান থেকে আবারো শাহবাগের দিকে যাত্রা করলে জাদুঘরের ফটকের উত্তর দিকের রাস্তায় পুলিশ তাদের লাঠিপেটা করে। এ সময় মঞ্চের কয়েকজন কর্মী পুলিশের দিকে ঢিল ছোঁড়ে। এ স্থান থেকে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী সোহাগ, ধীমান, টিটু, জয় ও ফরিদসহ সাতজনকে আটক করা হয়। এছাড়া বিকাল ৫টার দিকে জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি মেহেদী হাসান ও কর্মী ইমনসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ।
এ প্রসঙ্গে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে কয়েকদিন ধরে উত্তেজনা চলছিল। এরইমধ্যে একইসময়ে তারা সমাবেশ ডাকে। এতে অস্থিতিশীল ও অপ্রীতিকর ঘটনা সৃষ্টির শঙ্কা তৈরি হয়। তাই কাউকেই কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেয়া হয়নি।
পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার শিবলী নোমান বলেন, সমাবেশের অনুমতি না থাকায় আমরা তাদের সরিয়ে দিই। এ সময় কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।
যে কারণে একই সময়ে সমাবেশ: সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকেই গণজাগরণ মঞ্চের সাথে ঐকবদ্ধ হয়েই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলন করছিল মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। কিন্তু কয়েক মাসের ব্যবধানে তাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। আন্দোলন পরিচালনা নিয়ে তৈরি হয় বিরোধ। এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শাহবাগে দুই পক্ষের কয়েকজন নেতা-কর্মীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ছয়জন আহত হয়। এ ঘটনার জন্য দুই পক্ষই পরস্পরকে দায়ী করে। রাতে এ ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকালে শাহবাগে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে দুই পক্ষই। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার অভিযোগ করেন, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা বৃহস্পতিবার তাদের কর্মীদের উপর হামলা করেছে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডকে কেউ ইন্ধন দিয়ে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে চেষ্টা করছে। অন্যদিকে কমান্ডের সভাপতি মেহেদী হাসান দাবি করেন, ইমরান এইচ সরকারের কর্মীরা বৃহস্পতিবার আমাদের উপর হামলা করেছিল। আমরা নই।
পাল্টাপাল্টি মামলা: এদিকে বৃহস্পতিবার রাতের সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে। গভীর রাতে শাহবাগ থানায় মামলাগুলো দায়ের করা হয়। সাব-ইন্সপেক্টর কৃষ্ণ দাস জানান, সংঘর্ষের পর রাত ২ টার দিতে মামলাগুলো দায়ের করা হয়। কমান্ডের সভাপতি মেহেদী হাসান প্রিন্স বাদী হয়ে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, বাঁধন ও নবেন্দ্র সাহা জয় ছাড়াও অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। অন্যদিকে গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক নবেন্দ্র সাহা জয় বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনের বিরুদ্ধে অপর মামলাটি করেন। মামলায় যুবলীগ নেতা নাসিম আল মোমিন রূপক, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপ-সম্পাদক শেখ আসমান, শিশির, আবির, এসএম শাহিন, কমান্ডের সভাপতি মেহেদী হাসান প্রিন্স, বাবুল ও মিজবাহর নাম উল্লেখ করা হয়েছে