দুর্নীতি, অপচয় আর আর্থিক অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে কঠোর হচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের এ বার্তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে প্রতিটি মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে। বিশেষ করে যেসব রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে লোকসান দিচ্ছে তাদের আর্থিক গ্যারান্টি দেওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, নতুন বোয়িং বিমানের উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এরই মধ্যে সতর্ক করে দিয়েছেন বিমান কর্তৃপক্ষকে। তিনি সুস্পষ্ট বার্তা দিয়ে বলেছেন, লোকসান কাটাতে না পারলে বন্ধ করে দেওয়া হবে বিমানের কার্যক্রম। প্রধানমন্ত্রীর ওই বার্তা কেবল বিমান নয়, প্রতিটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের জন্য কার্যকর হবে বলে জানায় সূত্রগুলো। সরকারি পাটকলগুলোকেও একই ধরনের বার্তা দেওয়া হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। শ্রমিকদের স্বার্থ তুলে ধরে বিজেএমসি সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়ন স্কিমে সরকারের আর্থিক গ্যারান্টি চেয়ে আবেদন জানায়। ওই আবেদনের বিপরীতে অর্থ মন্ত্রণালয় স্পষ্ট বলে দিয়েছে লোকসানি প্রতিষ্ঠানকে এ ধরনের আর্থিক গ্যারান্টি দেওয়া যাবে না।
গত ১১ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি বলেন, বিজেএমসি নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারি পাটকলগুলো লোকসানে পরিচালিত হচ্ছে। এগুলোর পারফরম্যান্স সন্তোষজনক নয়। এর আগে বিজেএমসি যেসব শর্তে সরকারের আর্থিক সহায়তা নিয়েছে সংস্থাটি সেসব শর্ত পরিপালন করতে পারেনি।
অর্থনৈতিক সমীক্ষায় দেওয়া তথ্যমতে ২০১০-১১ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থার নিট লোকসান ছিল ৯ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে তা বেড়ে ৯ হাজার ৪১৪ কোটি টাকায় পৌঁছে। আর ২০১২-১৩ অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের নিট লোকসান ছিল ৭ হাজার ৩৮৬ কোটি টাকা। অন্যদিকে সরকারি প্রতিষ্ঠানে গত অর্থবছরে প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ভর্তুকি গেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, লোকসানি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কেবল সরকারের আর্থিক গচ্চা যাচ্ছে তা-ই নয়, এতে করে বাজেটের আর্থিক শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে, প্রতিবছর বেড়ে যাচ্ছে ভর্তুকির পরিমাণ। এমন কি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান ঠেকাতে মূলধন জোগানের নামে আর্থিক সহায়তা দিতে হচ্ছে সরকারকে। জানা গেছে, অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের মতো সরকারি ব্যাংকগুলোকেও একই ধরনের বার্তা দেওয়া হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। দুর্নীতি, অপচয় আর আর্থিক অব্যবস্থাপনা থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে রক্ষা করতে কর্মপরিকল্পনাও চাওয়া হয়েছে প্রতিটি ব্যাংকের কাছে। সেই সঙ্গে সরকারি ব্যাংকগুলোর অংশীদারিত্ব বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিয়ে সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের। অপচয় কমাতে বলা হয়েছে বাজেটেও। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্প এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করে অহেতুক বাজেটের ভার না বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই প্রকল্প বছরের পর বছর সংশোধন করে অহেতুক ব্যয় না বাড়ানোর পরামর্শও দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এ ব্যাপারে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের আর্থিক অপচয় কমাতে হলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা জেঁকে বসেছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। এসব কারণে সরকারের অপচয় বাড়ছে। সরকারি সংস্থাগুলোর অব্যবস্থাপনা দূর করার পাশাপাশি অপচয় কমাতে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার