বাকৃবিতে শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরীক্ষা বর্জন

0
205
Print Friendly, PDF & Email

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা সাদ ইবনে মমতাজ হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে বুধবার সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা। তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রশানিক ভবন ভাংচুর ও ঘেরাওসহ অবস্থান ধর্মঘট পালন করে। একই দাবিতে বুধবার দুপুর ১টার দিকে মৌন মিছিল করে সোনালী দল। হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে বাকৃবি ছাত্রলীগ। অন্যদিকে হত্যাকারীরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষকরা।
মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শেষবর্ষের শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ নেতা ও ক্লাস রিপ্রেজেনটেটিভ সাদ ইবনে মমতাজ হত্যাকরীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবিতে সকাল ৯টা থেকেই সব ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন। তারা মিছিল ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিছিলটি প্রশাসন ভবন থেকে শুরু হয়ে সব অনুষদ, সব আবাসিক হল, কেআর মার্কেট, জব্বারের মোড় প্রদক্ষিণ করে এবং আবার প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়। আন্দোলনে প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন। পরে প্রশাসন ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষার্থীরা অবস্থান ধর্মঘট পালন করেন। এতে প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে থাকা প্রায় দেড় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। এ সময় কয়েকজন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী প্রশাসন ভবন লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে ভবনের জানালার কাচ ভেঙে যায়। এতে শঙ্কিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের শেষ বর্ষের ক্লাস রিপ্রেজেনটেটিভ সাথী জানান, আজ সকাল ১০টার মধ্যে জড়িতদের ছাত্রত্ব বাতিল ও তাদের গ্রেফতার করা না হলে আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত থাকবে। এদিকে মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের এক জরুরি সভায় ১৬ জন শিক্ষক জড়িতদের গ্রেফতার ও বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রগতিশীল ছাত্র জোট ও বিভিন্ন অনুষদের ছাত্র সমিতি একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বাকৃবি ছাত্রদল হত্যাকারীদের বিচার দাবি করে। একই দাবিতে বুধবার দুপুর ১টার দিকে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিল করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সোনালী দল। এতে সোনালী দলের প্রায় শতাধিক শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। এরপর বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয়-৭১ প্রাঙ্গণে হত্যাকারীদের প্রতীকী ফাঁসির আয়োজনসহ তাদের কুশপুত্তলিকা দাহ করেছে। এর আগে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন মাইকিং করে প্রচার করে ‘দুর্বৃত্তদের হামলায় সাদ মৃত্যুবরণ করেন’। এ মাইকিংয়ের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। শিক্ষার্থীদের দাবি হত্যাকারী চিহ্নিত হলেও প্রশাসন তা আড়াল করার পাঁয়তারা করছে।
ছাত্রলীগের সংবাদ সম্মেলন : এদিকে বাকৃবি শাখা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে বুধবার দুপুর ৩টায় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সাইফুল ইসলাম। সম্মেলনে বক্তারা সাদ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করে জানান, হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত সাদের বন্ধু ও ছাত্রলীগের মাধ্যমে হলেও শেষটা ছাত্রশিবির করেছে। তারা আরও দাবি করেন, আনুমানিক সোমবার রাত ১২টার দিকে সাদকে দেখতে ছাত্রশিবিরের কামাল ও শাকিল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। এরপর আনুমানিক ভোর ৬টার দিকে কে বা কারা সাদকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে (বেসরকারি ক্লিনিক) পার্শ্ববর্তী ট্রমা সেন্টারে ফেলে যায়। সম্মেলনে উপস্থিত ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ মুর্শেদুজ্জামান খান বাবু ও সহ-সভাপতি বিজয় কুমার বর্মন প্রয়োজনে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়ার কথা উল্লেখ করেন। কিন্তু ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক মাজেদুল ইসলাম, কামাল ও শাকিলের ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে যাওয়ার বিষয়টি জানেন না বলে জানান। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ছাত্রশিবিরকে দোষ দেয়া ছাত্রলীগের চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য। যাদের কারণে সাদকে হাসপাতালে যেতে হল তাদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
অন্যদিকে সোনালী দল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরাই সাদকে নির্মমভাবে খুন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলের অতিথি কক্ষকে ছাত্রলীগ ‘টর্চার সেল’ হিসেবে ব্যবহার করে। শুধু তাই নয়, বাকৃবিতে ছাত্রলীগের হয়রানি ও নির্যাতন থেকে ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যবসায়ী কেউই রেহাই পাচ্ছে না। আর তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিষয়ক উপদেষ্টা, প্রক্টর ও হল প্রভোস্টদের পদত্যাগ দাবি জানাচ্ছি।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে মামলা দায়ের করার জন্য বিকাল ৫টা পর্যন্ত আলটিমেটাম দিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা করতে বাধ্য হয়। মামলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার প্রধান মহিউদ্দীন হাওলাদার বলেন, অপরাধীদের নাম অজ্ঞাত রেখে ও সংখ্যা উল্লেখ না করে ৩০২ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

শেয়ার করুন