সারা দেশে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আজ। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি, মাদরাসা বোর্ডের অধীনে আলিম ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি (বিএম/ভোক) পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে। ১০টি বোর্ডের অধীনে এবার সর্বাধিক ১১ লাখ ৪১ হাজার ৩৭৪ জন পরীক্ষার্থী এইসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। যা বিগত বছরের তুলনায় এক লাখ ২৮ হাজার ৭৯৮ জন বেশি। এদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থী হচ্ছে ৯ লাখ ১৬ হাজার ৫৬৮ জন। অবশিষ্টরা অনিয়মিত (২ লাখ ১৫ হাজার ৭৫৭ জন), প্রাইভেট (৫ হাজার ৩২৭ জন) ও মানোন্নয়ন (৩ হাজার ৭২২ জন) পরীক্ষার্থী।
তবে শিক্ষা বোর্ডের যে তথ্যটি আশঙ্কা ও উদ্বেগের তা হচ্ছে এবারের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না ২ লাখ ৯ হাজার ৯১৩ জন নিবন্ধিত শিক্ষার্থী। এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য দুই বছর আগে নিবন্ধন করেছিল সর্বমোট ১১ লাখ ২৬ হাজার ৪৮১ জন শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে অংশ নিচ্ছে ৯ লাখ ১৬ হাজার ৫৬৮ জন। যারা অংশ নিচ্ছে না তাদের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-উপাত্ত বা পরিসংখ্যান নেই শিক্ষা বোর্ডগুলোর হাতে। তারা শুধু বলেছেন, এরা পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না। এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও তিনি স্বীকার করেন এরা দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতার জন্য ঝরে পড়েছে। অনেকটা ধারণামূলক ব্যাখ্যা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, কেউ আর শিক্ষাজীবন অব্যাহত না রেখে অন্য কোনো পেশায় অংশগ্রহণ করেছে। তবে এর কোনো সঠিক পরিসংখ্যান তিনি দেননি। মন্ত্রী বলেন, ঝরে পড়ার হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। পৃথিবীর কোথাও এর নজির নেই। তিনি দাবি করেন, ঝরে পড়ার হার আগের চেয়ে কমেছে। আগামীতে আরো কমবে।
গতকাল দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপনকালে এসব পরিসংখ্যান দেয়া হয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের এবং শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সাথে নিয়ে এসব তথ্য সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।
উচ্চশিক্ষায় অংশ নেয়ার ব্যাপারে ভর্তি পরীক্ষাসংক্রান্ত এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিবেচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নেয়া হলে কোচিং-বাণিজ্য বন্ধ হবে। তিনি নতুন এক তথ্য নিয়ে বলেন, বছরে ৩২ হাজার কোটি টাকার কোচিং-বাণিজ্য হয়ে থাকে। এটি বন্ধ করা গেলে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সম্ভব হতে পারে।
পর্বতারোহী মুসা ইব্রাহিম প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, সরকার যদি সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে পাঠ্যবই থেকে মুসা ইব্রাহিম সম্পর্কিত বিষয়গুলো সংশোধন করা হবে।
এবার যে ২ লাখ ৯ হাজার ৯১৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না তাদের মধ্যে ছাত্র ৯৮ হাজার ২৪০ জন আর ছাত্রী ১ লাখ ১১ হাজার ৬৩ জন। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ৫০ হাজার ৮৯১ জন, রাজশাহী বোর্ডে ২১ হাজার ৫৪০ জন, কুমিল্লা বোর্ডে ২৫ হাজার ৪৯৪ জন, যশোর বোর্ডে ২৩ হাজার ৬৬১ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে ১১ হাজার ৭৯৫ জন, বরিশাল বোর্ডে ১০ হাজার ৫৫৫ জন, সিলেট বোর্ডে ৭ হাজার ১১৮ জন, দিনাজপুর বোর্ডে ১৮ হাজার ৮২ জন, মাদরাসা বোর্ডে ৩০ হাজার ১৫৩ জন এবং কারিগরি বোর্ডে ৯ হাজার ৯৯৪ জন ও ঢাকা বোর্ডের অধীন ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিজে (ডিআইবিএস) ৬৩০ জন। এবার সারা দেশে ২ হাজার ৩৫২টি পরীক্ষাকেন্দ্রে ৮ হাজার ১০৪টি প্রতিষ্ঠানের শিার্থীরা অংশ নিচ্ছে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এ বছর পাঁচটি বিদেশ কেন্দ্র (জেদ্দা, রিয়াদ, দোহা, আবুধাবি, ত্রিপলি) থেকে ২০২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রী নাহিদ জানান, উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা এ বছর বাংলা প্রথম পত্র, রসায়ন, পৌরনীতি, ব্যবসায় নীতি ও প্রয়োগ, জীববিজ্ঞান, পদার্থবিদ্যা, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবসায় উদ্যোগ ও ব্যবহারিক ব্যবস্থাপনা, সমাজবিজ্ঞান, সমাজকল্যাণ এবং কম্পিউটার শিক্ষা বিষয়ের ২৫টি পত্রে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা দিবে। সৃজনশীল রচনামূলক প্রশ্নে ৬০ নম্বর এবং বহু নির্বাচনী (অবজেকটিভ) প্রশ্নে ৪০ নম্বর থাকবে। সৃজনশীল রচনামূলক প্রশ্নে দুই ঘণ্টা ১০ মিনিট, উত্তরপত্র গ্রহণ ও ওএমআর বিতরণের জন্য ১০ মিনিট এবং বহু নির্বাচনীর জন্য ৪০ মিনিট বরাদ্দ থাকবে।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী স্ক্রাইব (শ্রুতি লেখক) সাথে নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এ ধরনের পরীক্ষার্থীদের এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ২০ মিনিট বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।