পঞ্চম দফাতেও উত্তরাঞ্চলে এগিয়ে বিএনপি-জামায়াত

0
127
Print Friendly, PDF & Email

পঞ্চম দফা উপজেলা নির্বাচনে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় আওয়ামী লীগ এগিয়ে থাকলেও আগের চার দফার মতোই উত্তরাঞ্চলে এগিয়ে আছে বিএনপি- জামায়াত জোট। ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত এই অঞ্চলের দুই বিভাগের ১৩ উপজেলার ফলাফলে দেখা গেছে চেয়ারম্যান পদে সাতটিতে আওয়ামী লীগ আর ছয়টিতে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি-জামায়াত প্রার্থী। ভাইস চেয়ারম্যান পদের আটটিতে জামায়াত, তিনটিতে আওয়ামী লীগ, একটিতে জাতীয় পার্টি ও একটিতে ওয়ার্কার্স পার্টি বিজয়ী হয়েছে। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছয়টিতে বিএনপি-জামায়াত, চারটিতে আওয়ামী লীগ, দু’টিতে স্বতন্ত্র এবং একটিতে জেপি প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে, পঞ্চম দফায় রংপুর বিভাগের চার জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে তিনটি বিএনপি, তিনটিতে আওয়ামী লীগ, একটিতে জামায়াত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ৬৩ হাজার ২৪০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন জামায়াতের তরুণ প্রজন্মের নেতা মাজেদুর রহমান। দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বিএনপির প্রার্থী আ ন ম বজলুর রশিদ কালু ৫৩ হাজার ১৫৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। পার্বতীপুর উপজেলায় বিএনপি প্রার্থী আমিনুল ইসলাম ৬৮ হাজার ১৪ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। হাকিমপুর উপজেলায় ২০ হাজার ৪২ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি প্রার্থী মো: আকরাম হোসেন।
রংপুর বিভাগের লালমনিরহাটের কালিগঞ্জে ৩৫ হাজার ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহবুবুজ্জামান আহমেদ। নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় ৩৫ হাজার ৯৪১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের আব্দুর রাজ্জাক বসুনিয়া। গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব ২০ হাজার ৪০০ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন।
অপর দিকে রাজশাহী বিভাগের চার জেলার ছয়টি উপজেলার মধ্যে চারটিতে আওয়ামী লীগ, একটিতে বিএনপি ও একটিতে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে পাবনা সদর উপজেলায় এক লাখ ২০ হাজার ৬৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোশাররফ হোসেন। বেড়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের আব্দুল কাদের ৬৮ হাজার ৫০৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। সিরাগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আলী আকন্দ ৪১ হাজার ৩৮৭ ভোট পেয়ে জয়ী হন। এই জেলার শাহজাদপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান হিসেবে এক লাখ ৬০ হাজার ৫৩৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের আজাদ রহমান। এই দুই উপজেলাতেই ভোট কারচুপি, জালভোট প্রদান, কেন্দ্র দখল ও কর্মী-সমর্থকদের মারধরের অভিযোগে হরতাল পালন এবং ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন ১৯ দলের প্রার্থীরা। বগুড়া সদরে বিএনপি প্রার্থী আলী আজগর তালুকদার হেনা এক লাখ ৫৪ হাজার ৮০৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। আর রাজশাহীর পবা উপজেলায় জামায়াত প্রার্থী মকবুল হুসাইন ৬৫ হাজার ৮৯৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
ভাইস চেয়ারম্যান : রংপুর বিভাগের সাত উপজেলার মধ্যে ছয়টিতেই জামায়াত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। আর একটিতে বিজয়ী হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। বিজয়ী জামায়াত প্রার্থীরা হলেনÑ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের অধ্যাপক এম সোলায়মান সাজা, লালমনিরহাটের কালিগঞ্জে মাস্টার আব্দুল লতিফ, দিনাজপুরের বিরলে আফজালুল আনাম, পার্বতীপুরে আনোয়ারুল ইসলাম, হাকিমপুরে আমিনুল ইসলাম, নীলফামারীর ডোমারে আব্দুল। তারা সবাই হারিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে। আর জাতীয় পার্টি থেকে একমাত্র বিজয়ী ভাইস চেয়ারম্যান গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলায় শহিদুল ইসলাম।
অন্য দিকে রাজশাহী বিভাগের ছয় উপজেলার মধ্যে দু’টিতে জামায়াত, তিনটিতে আওয়ামী লীগ এবং একটিতে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে বগুড়া সদরে জামায়াতের তরুণ নেতা আবিদুর রহমান সোহেল। সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে আওয়ামী লীগের লুৎফর রহমানকে অর্ধেকেরও বেশি ভোটে হারিয়ে বিজয়ী হয়েছেন আরিফুল ইসলাম। আওয়ামী লীগ থেকে তিনজন বিজয়ী হয়েছেন। তারা হলেনÑ পাবনা সদরে গোলাম আজম শাওয়াল বিশ্বাস, বেড়া উপজেলায় আবু সামা মোল্লা, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে মোস্তাক আহম্মেদ। তারা হারিয়েছেন জামায়াত ও বিএনপি প্রার্থীদের। আর রাজশাহীর পবাতে বিজয়ী হয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির আশরাফুল ইসলাম। এখানেও বিএনপি প্রার্থী হেরে গেছেন।
মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান : মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পঞ্চম দফায়ও উত্তরাঞ্চলে বাজিমাত করেছেন বিএনপি জামায়াতের মহিলা নেত্রীরা। এর মধ্যে ছয়টিতে বিএনপি-জামায়াত, চারটিতে আওয়ামী লীগ, দু’টিতে স্বতন্ত্র ও একটিতে জামায়াতের সমর্থন নিয়ে জেপি প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।
রংপুর বিভাগের সাতটির মধ্যে তিনটিতে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি প্রার্থী। তারা হলেনÑ দিনাজপুরের বিরলে ফিরোজা বেগম। পার্বতীপুরে বিজয়ী হয়েছেন সাহিদা খাতুন। হাকিমপুরে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী আখতারা চৌধুরী। এই বিভাগে নীলফামারীর ডোমারে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সন্ধা রানী রায়। লালমনিরহাটের কালিগঞ্জে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাহিদা আখতার, গাইবান্ধার ফুলছড়িতে স্বতন্ত্র প্রার্থী রাশেদা বেগম এবং সুন্দরগঞ্জে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন নিয়ে জাতীয় পার্টি (জেপি) প্রার্থী রোজিয়া বেগম নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হারিয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে।
রাজশাহী বিভাগের ছয় উপজেলার মধ্যে তিনটিতে আওয়ামী লীগ, দু’টিতে জামায়াত, একটিতে বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে পাবনার বেড়া উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন বিএনপির আসমা খাতুন। পাবনার সদর উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের শামসুন্নাহার রেখা। সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী এলিজা খানম। বেলকুচিতে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের রাজিয়া সুলতানা মিলন। এই বিভাগে দু’টি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পেয়েছে জামায়াত। এর মধ্যে বগুড়া সদরে বিজয়ী হয়েছেন জামায়াতের সাজেদা সামাদ এবং রাজশাহীর পবা উপজেলায় বিজয়ী হয়েছেন জামায়াতের খায়রুন্নেসা বেগম।
পঞ্চম দফা নির্বাচনেও পাবনা সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধায় ব্যাপক কারচুপি, মারধর, ব্যালট ছিনতাইসহ কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করা হয়।

শেয়ার করুন