আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী অ্যালেন ডানকান বলেছেন, বিরোধী জোট অংশ না নেয়ায় ৫ জানুয়ারির নির্বাচনটা ছিল অস্বাভাবিক, তবে বৈধ। প্রধানমন্ত্রী পূর্ণ পাঁচ বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন কিনা তা বলা আমরা কাজ না। বাংলাদেশ সরকারের সাথে ব্রিটেন ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। ব্রিটেন চায় প্রকৃত গণতন্ত্র, যা হবে সহিংসতামুক্ত এবং যার লক্ষ্য থাকবে জনগনের চাহিদা পূরণ।
মন্ত্রী বলেন, আমাকে স্বীকার করতেই হবে জাতীয় পার্টির ভূমিকা কিছুটা অস্বাভাবিক। তারা সরকারেরও অংশ, আবার সংসদে প্রধান বিরোধী দল। অবাধ সংবাদ মাধ্যম গণতন্ত্রের অন্যতম উপাদান। নির্বাচন ও বিরোধী দলের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকতা সাংবাদিকদের ওপর দায়িত্ব আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
বাংলাদেশে তিনদিনের সফর শেষে বুধবার ব্রিটিশ হাইকমিশন কাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডানকার বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলেন। ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন এসময় উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় নির্বাচকে কেন্দ্র করে প্রায় ৫০০ মানুষের প্রাণহানি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় মন্তব্য করে ডানকান বলেন, নির্বাচনের আগে-পরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমন অত্যন্ত নিন্দনীয়। একইভাবে বিচার বহির্ভুক্ত হত্যাকান্ড অগ্রহণযোগ্য।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদ্বন্দ্বপ্রাপ্ত চৌধুরী মাইনুদ্দিনকে ব্রিটেন ফেরত দেবে কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি মন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রয়োজনীয়তা আমরা বুঝি। যে কোন বিচারই হওয়া উচিত আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে ব্রিটেন মৃত্যুদ্বন্দ্বের বিরোধী। এটাই যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে ব্রিটেনের অবস্থান।
লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমান তার বাবা জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসাবে দাবি করায় ব্রিটিশ মন্ত্রী বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন এবং ইতিহাস বিকৃতিতে হতবাক হয়েছেন- পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের এমন বক্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে ডানকান বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস নতুনভাবে ব্যাখ্যা দেয়া আমার কাজ না। আমার মনে হয় আপনার সবাই বুদ্ধিমান মানুষ এবং বাংলাদেশের ইতিহাস আপনাদের ভালভাবেই জানা। বাংলাদেশের উন্নয়ন, নতুন সরকার ও নির্বাচন নিয়ে তার সাথে কথা হয়েছে। আমি বলেছি, আমরা বাংলাদেশে সহিংসতামুক্ত রাজনীতি দেখতে চাই যার লক্ষ্য হবে জনগনের চাহিদা পূরণ করা।
তারেক রহমান পর্যটক নাকি রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হিসাবে ব্রিটেনে রয়েছেন – জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারেক রহমানের বিষয়টি পুরোপুরি আদালতের ওপর নির্ভর করছে। এতে ব্রিটিশ সরকারের করার কিছু নেই। এটা আইনী ব্যাপার, রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়।
ক্রিমিয়ার ওপর জাতিসঙ্ঘ সাধারন পরিষদের ভোটাভুটিতে বাংলাদেশের অনুপস্থিতি সম্পর্কে এ প্রশ্নের জবাবে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, ইউক্রেন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রাশিয়ার সাথে ক্রিমিয়ার যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াটি ছিল অবৈধ এবং আমরা এটিকে সমর্থন করি না। এ প্রক্রিয়ার বিরোধীতা করে জাতিসঙ্ঘ সাধারন পরিষদে উত্থাপিত প্রস্তাব ব্রিটেনের নীতি এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বকে সমুন্নত রেখেছে। আমরা চেয়েছি সব বন্ধু রাষ্ট্র এ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিক। বাংলাদেশ তার দীর্ঘমেয়াদি পররাষ্ট্রনীতিকে সামনে রেখে এতে ভোটদানে বিরত ছিল। আমরা আশা করি বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ব্রিটেনকে সমর্থন দেবে।
বিরোধী দল হিসাবে জাতীয় পার্টি যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারবে কিনা – প্রশ্ন করা হলে ডানকান বলেন, রওশন এরশাদের সাথে আমার সাক্ষাতে বিরোধী দল হিসাবে দায়িত্বশীলতার গুরুত্বের কথা বলেছি। রওশান আমাকে জানিয়েছিন, তিনি চান অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি যাতে সমালোচনা হবে গঠনমূলক।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে ডানকান বাংলাদেশের তৈরী পোশাক শিল্পের শ্রমমান ও ভবন নিরাপত্তা উন্নয়নে ১০ লাখ পাউন্ডের তিনটি প্রকল্প হাতে নেয়ার কথা জানান। তিনি বলেন, ব্রিটেন উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে বাংলাদেশের অনেক চাহিদা পূরন করতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। তবে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।