প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বাজারে স্বর্ণের মূল্য কম থাকায় বাংলাদেশকে স্বর্ণ চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহার করছে আর্ন্তজাতিক চোরাকারবারীরা। ঢাকার হযরত শাহজালাল (র.) আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে একের পর এক চালান আটক করে শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তারা এমন তথ্য দিয়েছেন।
তবে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তদন্তে এবার বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। শুধু ভারতে পাচারই নয়, রাজধানীর পুরান ঢাকাসহ কিছু এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী চোরাকারবারীদের কাছ থেকে স্বর্ণের বার সংগ্রহ করছে। এ চক্র দেশের অভ্যন্তরে স্বর্ণ পাচারের পর সড়কপথে ভারতেও উচ্চমূল্যে পাচার করছে। সম্প্রতি কয়েকটি চালান আটকের পর পুলিশ, র্যাব ও শুল্ক গোয়েন্দারা বাংলামেইলকে এ তথ্য জানিয়েছেন। সর্বশেষ রামপুরায় আটক করা ১৩৫টি বারসহ রামপুরা থানার এসআই মঞ্জুরুল আলম, কনস্টেবল ওয়াহিদ ও আকাশ চৌধুরী এবং তাদের সোর্স রনিকে আটক করার পর নতুনভাবে ভাবছে পুলিশ প্রশাসন। দেশের ভুখণ্ড দিয়ে স্বর্ণ পাচারে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের বড় যোগসাজশ আছে বলে ধারণা করছেন তারা।
ডিবি পুলিশের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বাংলামেইলকে বলেন, ‘সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনা পাওয়ার কারণে পুরান ঢাকা, বায়তুল মোকারমসহ অর্ধশত স্বর্ণের ব্যবসায়ীর ওপর এখন নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’
গুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মঈনুল খান বাংলামেইলকে বলেন, ‘বাংলাদেশের চেয়ে ভারতে সোনার মূল্য কম হওয়ার কারণে আমাদের পোর্টকে ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে কম মূল্যের কারণে দেশে এনে বিক্রিরও প্রবণতা আছে।’
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা আনেক চালান ধরেছি। এসব চালানের হোতা পাওয়া গেলে রুটও বেরিয়ে আসে।’
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জুয়েলারি ব্যবসার আড়ালে চোরাই স্বর্ণ কেনাবেচা করছে একটি চক্র। এ কারণে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। দিনের পর দিন প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অসাধু স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা অবৈধ পথে সোনার বার নিয়ে আসছে। চোরাই স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিমানবন্দর কাস্টমস, শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ ও আর্মড পুলিশের কিছু অসাধু কর্মচারী ও কর্মকর্তার যোগসাজস রয়েছে।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর রাতে রাজধানীর উত্তরা, এয়ারপোর্ট ও মগবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাকারবারী চক্রের প্রধান মোহাম্মদ আলীসহ পাঁচ জনকে ১৩৪ ভরি স্বর্ণসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব-১। ওই মাসেই ওয়ারী এলাকা থেকে দুই কেজি ৪০০ গ্রাম স্বর্ণসহ কমল দাস নামে এক স্বর্ণ চোরাকারবারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি পুরান ঢাকার কণিকা জুয়েলার্সের কর্মচারী বলে দাবি করেন। তবে তিনি জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানিয়েছিলেন, স্বর্ণগুলো তার মালিক সঞ্জয় পোদ্দারের। প্রতিষ্ঠনটির পক্ষ থেকেও তা দাবি করা হলেও বৈধ কোনো কাগজপত্র ছিল না। এসব তথ্য দিয়েছেন ওয়ারি থানার ওসি তপন চন্দ্র।