ধূলিসাৎ হওয়ার মুখে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সব অর্জন। সহিংতা আর ভোটকেন্দ্র দখল এখন উপজেলা নির্বাচনের ট্রেডমার্ক। যদিও কোন কোন এলাকায় তারও প্রয়োজন হয়নি। ভোটের আগেই মাঠছাড়া করা হয়েছে বিরোধী পক্ষের সমর্থকদের। নির্বাচনের পুরনো ইতিহাস ফেরার মুহূর্তকে স্বাগতই জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ব্যালট পেপার রক্তাক্ত হলেও তাদের কোন বোধোদয় নেই। নির্বাচন কমিশন আল্লাহর শুকরিয়াই আদায় করছে। এ যখন অবস্থা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ অবস্থান করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখান থেকে এক ই-মেইল বার্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশনা দিলেও তার ডাকে সাড়া দেননি কেউ। ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদের হতাশা বেড়ে যায় বহু গুণ। এ অবস্থায় তিনি পদত্যাগ করতে চাইছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তাকে পদত্যাগ না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তাকে এপ্রিলের মধ্যে দেশে ফিরতেও বলা হয়েছে। ৫ই জানুয়ারি নির্বাচনে সব দল অংশগ্রহণ না করায় হতাশ হয়ে পড়েছিলেন কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ। সে সময় তিনি ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে পদত্যাগ নিয়ে আলোচনা করেন। একটি পদত্যাগপত্রও প্রস্তুত করেন। কিন্তু ঘনিষ্ঠজনরা তাকে জানান, তিনি পদত্যাগ করলে সরকারের জন্য তা হবে বিব্রতকর। সরকার ওই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করবে না। উল্টো নানা ঝামেলায় পড়তে হবে তাকে। পদত্যাগপত্র জমা দিয়েও পদত্যাগ করতে না পারার কিছু উদাহরণও তার সামনে তুলে ধরা হয়। এ জন্য সিদ্ধান্ত নিলেও তখন তিনি পদত্যাগ করেননি। ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন দেশ-বিদেশে সমালোচিত হয়। নির্বাচনের পরপরই উপজেলা নির্বাচন আয়োজনের পরামর্শ দেয়া হয় নির্বাচন কমিশনকে। নির্বাচন কমিশন কয়েক দফায় এ নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেয়। অনেকে অবশ্য একে বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলার সরকারি কৌশল হিসেবে বর্ণনা করেন। প্রথম ও দ্বিতীয় দফার উপজেলা নির্বাচন ছিল মোটামুটি শান্তিপূর্ণ। এরই মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান প্রধান নির্বাচন কমিশনার। দেশত্যাগের আগে তিনি রাষ্ট্রের এক শীর্ষ ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন। ওই সময় তিনি পদত্যাগের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। তবে রাষ্ট্রের ওই শীর্ষ ব্যক্তি প্রয়োজনীয় ছুটি কাটিয়ে তাকে আবার দায়িত্বে ফেরার পরামর্শ দেন। আনুষ্ঠানিকভাবে সিইসি ক্লান্ত বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়। নির্বাচন নিয়ে একের পর এক বিতর্কিত অধ্যায় রচনার প্রেক্ষাপটে সর্বশেষ আবার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন কাজী রকিব উদ্দীন আহমেদ। তবে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতিতে আন্তর্জাতিক সমালোচনার মুখে থাকা সরকার কিছুতেই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ চাইছে না। এ কারণে পদত্যাগ করলেও তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হবে না।