৫ম দফা উপজেলা নির্বাচনে প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের যোগসাজসে আওয়ামী লীগের ক্যাডার এবং আইন-শৃংখলা বাহিনীর ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট ডাকাতি ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে নির্বাচনের ফলাফল হাইজ্যাক করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডাঃ শফিকুর রহমান গতকাল সোমবার বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ৫ম দফা উপজেলা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের সহায়তায় আইন-শৃংখলা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের ভোট কেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদান, ব্যালট ডাকাতি, ভোট ছিনতাই, এবং সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের মহোৎসব পালন করা হয়েছে। এটাকে কোনভাবেই নির্বাচন বলা যায় না। আওয়ামী ক্যাডার, সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারের মন্ত্রী-এমপিগণ জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে নির্বাচনের কবর রচনা করেছে। স্বয়ং নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের ভাষায় কথা বলছেন। তিনি বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক ৩০ মার্চ নির্বাচন কমিশনের সচিবলায়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে ১৯ দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ‘নাকে খত দিয়ে জিরো কমিশনের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন’-মর্মে অশালীন মন্তব্য করে সরকার দলীয় নেতার মত বক্তব্য রেখেছেন। তিনি উপজেলা নির্বাচনে সরকার দলীয় ক্যাডারদের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও ভোট ডাকাতি করে ফলাফল হাইজাক করাকেই সমর্থন করেছেন।
ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ৫ম দফা উপজেলা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পূর্বেই আওয়ামী ক্যাডাররা অনেক উপজেলার অধিকাংশ কেন্দ্র দখল করে নেয়। তাদের দলীয় ক্যাডাররা ব্যালট পেপার ছিনতাই করে সিল মারতে থাকে। ভোট শুরু হওয়ার পূর্বেই ফেনী জেলার ছাগল নাইয়া উপজেলার পাঠান নগর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জয়পুর স্বরনী উচ্চ বিদ্যালয়-এ দুটি ভোট কেন্দ্রে ৪৯০০টি সিলমারা ব্যালট উদ্ধার করা হয়। লক্ষ্মীপুর সদরে আওয়ামী লীগের গডফাদার সন্ত্রাসী আবু তাহের ও তার পুত্র টিপু চৌপল্লী, পালপাড়া, মুসলিমাবাদ ভোট কেন্দ্রসহ বিভিন্ন ভোট কেন্দ্র থেকে ১৯ দলীয় জোটের সমর্থিত প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টদের অস্ত্রের মুখে বের করে দিয়ে ব্যালট ডাকাতি করে। টাংগাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায় ভোট শুরুর পূর্বেই আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী আইন-শৃংখলা বাহিনীর সহায়তায় সকল ভোট কেন্দ্র দখল করে ব্যালট ডাকাতি করে। ভোট শুরুর ৩০ মিনিটের মধ্যেই বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলায় আইন-শৃংখলা বাহিনীর সহায়তায় আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী ১২টি ভোট কেন্দ্র দখল করে নেয়। সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার সকল ভোট কেন্দ্র থেকে ১৯ দলীয় জোটের সমর্থিত প্রার্থীদের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয় এবং ভোট কেন্দ্র থেকে ১৯ দলের সমর্থকদের বিতাড়িত করা হয়। মোমেনশাহী জেলার গফরগাঁও উপজেলার ১০৯টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৮০টি ভোট কেন্দ্র আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী দখল করে নেয়। সিরাজগঞ্জ উপজেলার শাহাজাদপুর উপজেলার সকল ভোট কেন্দ্র থেকে ১৯ দলীয় জোটের সমর্থিত প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দিয়ে ভোট ডাকাতি করা হয়।
ডা:শফিকুর রহমান বলেন, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, ফেনীর ছাগলনাইয়া, জামালপুরের মাদারগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার কসভা, চুয়াডাঙ্গার সদর ও আলমডাঙ্গা, সাতক্ষীরার সদর, তালা ও দেবহাটা, গাইবান্ধার ফুলছড়ি ও সুন্দরগঞ্জ, সিলেটের বিয়ানীবাজার, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি, পাবনার তারাবুনিয়া, মুন্সিগঞ্জের লৌহজং, কুমিল্লার চান্দিনা, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর সদর ও রামগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারসহ বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী ক্যাডারা প্রশাসনের সহায়তায় নজিরবিহীন সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করে।
তিনি বলেন, গতকালকের নির্বাচনে ভোট ডাকাতি ও নৈরাজ্যের মহোৎসবে প্রমাণিত হয়েছে বর্তমান সরকার ও সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোন নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হতে পারে না। তিনি জনগণের ন্যায্য ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ ফ্যাসিস্ট, গণতন্ত্র হত্যাকারী, স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
উপজেলা নির্বাচনের যেসব ভোটকেন্দ্রে সন্ত্রাস, জালভোট ও ব্যালট ডাকাতি ও কেন্দ্র দখল করে নির্বাচন হাইজ্যাক করা হয়েছে সেসব এলাকায় পুনরায় নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য তিনি নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান