বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে না গিয়ে এখন থেকে সরকার পতনের আন্দোলন জোরদার করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। গতকাল সোমবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা জানান দলের দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনের মাধ্যমে আবারো প্রমাণিত হয়েছে এ সরকার একটি দানব সরকার। এ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে বিএনপি জাতীয় নির্বাচন না করার যে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল- আজ তা সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। দিনের অপর এক ব্রিফিংয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার মো. আবদুল মোবারককে তার বক্তব্যের জন্য জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে রিজভী আহমেদ বলেন, নাকে খত দিয়ে বিএনপি নির্বাচনে এসেছে বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা দিয়ে মোবারক মূলত প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করেছেন। এ ধরনের বক্তব্য বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে মানায়, নির্বাচন কমিশনে নয়। কমিশনের এ ধরণের আচরণে স্পষ্ট যে, আমরা এরকম কলাগাছ মার্কা কমিশনের অধীনে আর কোন নির্বাচনে যাব না।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ, প্রশিক্ষণ সম্পাদক কাজী আসাদ প্রমুখ।
অবিলম্বে এ অবৈধ সরকারের পতন ঘটানোর জন্য জোটের আন্দোলন আরো বেগবান করা হবে মন্তব্য করে বিএনপির মুখপাত্র রিজভী আহমেদ বলেন, ৫ম ধাপে অনুষ্ঠিত দেশের বিভিন্ন উপজেলায় কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, সশস্ত্র হামলা ও তা-বের মাধ্যমে ভোট ডাকাতির মহোৎসব চালিয়েছে। তিনি বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবেই উপজেলা নির্বাচনে গিয়েছে জোট। এই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, এদের আর ক্ষমতায় রাখা যাবেনা। এরা ক্ষমতায় থাকার নৈতিক সব অধিকার হারিয়েছে। রিজভী আহমেদ বলেন- কয়েকদিনের মধ্যেই যৌক্তিক কর্মসূচি দেবে বিএনপি। সে কর্মসূচির মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী এ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরও তীব্র থেকে তীব্রতর করা হবে।
তিনি বলেন, এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনে বিএনপি জাতীয় নির্বাচন না করার যে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে সিদ্ধান্তই আজ সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। নতুন করে আবারো প্রমাণিত হয়েছে এই সরকার একটি দানব সরকার। তাই এই সরকার এবং এই কমিশনের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে যাবে না বিএনপি।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রসঙ্গে রিজভী আহমেদ বলেন, প্রভুর অন্নে পালিত ইসি তো আর কোনো কিছু দ্বারাই চালিত হতে পারে না। সংবিধান তাদের যতোই ক্ষমতা দিক সেটিকে তারা পরোয়া করে না। সুতরাং পুরোপুরি ডাকাতি ও জালিয়াতির ওপর সাজানো এই উপজেলা নির্বাচন সরকারি দলের পরিকল্পনা মতো হরেক রকম অশুভ কারসাজিতে সামিল হতে হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। নইলে সকল সংযমের বাঁধ ভেঙ্গে ফেলে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাকে উপেক্ষা করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার কী বলতে পারেন দেশের একটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে যে, দলটি নাকে খত দিয়ে নির্বাচনে এসেছে। তিনি বলেন, সরকারি চাকরিরত অবস্থায় ভারপ্রাপ্ত নির্বাচন কমিশনারকে সবাই জানতো তিনি বর্তমান সরকারি দল আওয়ামী লীগের জবরদস্ত সমর্থক। কিন্তু নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের পর সবাই তার কাছ থেকে নিরপেক্ষতা আশা করেছিল। কিন্তু কথায় বলে ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। তা তিনি সাহসের সাথেই প্রমাণ করেছেন। ভারপ্রাপ্ত সিইসি মোবারকের বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী আরো বলেন, তিনি যখন আমলা ছিলেন তখনই মুজিব কোর্ট পরে অফিস করতেন। এখন তিনি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে থেকেও কুৎসা রটাচ্ছেন। তার বক্তব্যে মনে হয়, তিনি আওয়ামী লীগের প্রচার অথবা দফতর সম্পাদক। কি নির্লজ্জ্ব হতে পারে মনুষ! ভবিষ্যতে দেশের মানুষ তার নাক মাটিতে ঘষে প্রতিশোধ নেবে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে কেন্দ্র দখল, জাল ভোট প্রদান, নেতা-কর্মীদের উপর হামলাসহ নানা অনিয়মের তথ্য তুলে ধরে রিজভী বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আমরা যে আশঙ্কা করেছিলাম এখন তাই মিলে যাচ্ছে। পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে সরকারী দল ভোট ডাকাতির উপর নির্ভরশীল। যারা ডাকাতি করে তাদের কাছে বিবেক থাকে না। এ সকল কর্মকা-ের মাধ্যমে শাসকদল ভোটারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। সরকারের ছত্রছায়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও জনগণের ভোটাধিকার ছিনিয়ে নেয়ার এই যজ্ঞে যোগ দিয়েছে।
উপজেলা নির্বাচনে নির্বাচনী এলাকায় নারকীয় হিংস্রতার বিস্তার লাভ করেছে। কেন্দ্র দখলের হিড়িক পড়ে গেছে। তিনি বলেন, বিরোধী প্রার্থীর পোস্টার, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা, মাইক ভাংচুর, ভোটকেন্দ্র দখল, আগের রাতে এবং সোমবার সকাল থেকে ভুয়া ভোট দিয়ে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা, সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বিরোধী দলের এজেন্টদের বিতাড়িত করার মহাযজ্ঞ চলেছে। তিনি বলেন, এজেন্টদের ছবি ও ঠিকানা দেখে পুলিশ-র্যাব বাড়িতে বাড়িতে হুমকি, ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধাদান, সরকারি দল সমর্থিত প্রার্থীর অনুকূলে বান্ডিল বান্ডিল ব্যালট পেপার একসঙ্গে সিল মারা মহাসমারোহে চলেছে। তিনি বলেন, এভাবে শাসক দল ভোটারদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। নির্বাচনী এলাকার মহল্লায়-মহল্লায়, পাড়ায়-পাড়ায় রক্ত ঝরেছে, গ্রামের পর গ্রাম আক্রান্ত, বিরোধী দল সমর্থিত প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস এবং কর্মীদের বাড়িঘর ধুলিস্যাৎ কিম্বা ভস্মীভূত অব্যাহত ছিল।
প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, তিনি রংধনুর মত একেক সময় একেক রং ধারণ করেন। এখন বলছেন তিনি নাকি ত্যাগ স্বীকার করতে রাজি আছেন। এর আগে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে জনগণকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে ত্যাগ স্বীকার করেছেন। এখন আবার কি ত্যাগ স্বীকার করতে চান জাতি তা দেখার জন্য প্রস্তুত। সাবেক এ ছাত্রনেতা বলেন, আওয়ামী গু-াদের আক্রমণে নির্বাচনের দিন খুন হয়েছে বিরোধী নেতাকর্মীরা। তাদের সন্ত্রাস ও সহিংসতায় শিউরে উঠেছে দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরা। গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, মানুষের ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসের এই চরম অভিযানে গোটা জাতি বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছে।