ক্ষমতাসীনদের মামলা নির্ভরতা বাড়ছে

0
201
Print Friendly, PDF & Email

৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের পর সরকারের কর্তাব্যক্তিরা পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেও তাদের জনসমর্থন শূন্যের কোটায় এসে দাঁড়িয়েছে। বাইরে হম্বি-তম্বি ছাড়লেও ভেতর থেকেই তারা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এজন্য তারা এখন আগের চেয়ে আরো বেশি মামলা নির্ভর হয়ে পড়ছে। সম্ভাব্য গণআন্দোলনের মোকাবেলায় বিরোধী দলের সর্বপর্যায়ের নেতাকর্মীদের মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করাই তাদের টার্গেট। এর মাধ্যমে ক্ষমতাকে নির্বিঘœ করতে চায় তারা।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে নিয়মরক্ষার নির্বাচন এবং সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার নির্বাচন বলে উল্লেখ করেছিলেন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। কিন্তু প্রার্থীবিহীন, ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনের পর মন্ত্রিত্বের শপথ নিয়ে ক্ষমতাসীন হয়েই তাদের সুর পাল্টে যায়। নির্দলীয় সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের প্রশ্নকে তারা এড়িয়ে চলছে। তারা এখন ৫ বছরই ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখছে। আর সেজন্য ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করতে আরও বেশি মামলা নির্ভর হয়ে পড়ছে ।

১০ম সংসদ নির্বাচনের ৪ দিন আগে গত ১ জানুয়ারি বুধবার ধানমন্ডিস্থ দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক জরুরি সাংবাদিক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রকাঠামো রক্ষার অত্যাবশ্যকীয় তাগিদে ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়া বাস্তবসম্মত ও সংবিধানসম্মত কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচনের পর সংলাপ ও সমঝোতার মাধ্যমে প্রধান বিরোধী দলসহ সকল নিবন্ধিত দল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা আশা করি, বিরোধী দল প্রধানমন্ত্রীর এই প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেবেন।

 নির্বাচনের ১ দিন আগে গত ৩ জানুয়ারি শুক্রবার সিলেটে গণমাধ্যমের কর্মীদের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, “নতুন সরকার পাঁচ বছর থাকবে বলে মনে করি না। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সরকার গঠিত হলে যেকোনো সময় নতুনভাবে নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে।” দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সরকারের ওপর সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, “সরকার এই দায়িত্ব পালনে বদ্ধপরিকর। দশম জাতীয় সংসদ পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হচ্ছে কি না জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, “নতুন সরকার পাঁচ বছর থাকবে বলে মনে করি না। নতুন সরকার গঠনের পর বিরোধী দলের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হলে যেকোনো সময় নতুনভাবে নির্বাচন করা যেতে যারে।”

নির্বচনের পরের দিন ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন চত্বরে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “আগামী নির্বাচন সম্পর্কে আলোচনা করেই সমাধান করা হবে। সেজন্য সবাইকে ধৈর্য ধরতে হবে, সহনশীল হতে হবে এবং সবধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।” একই দিন ৬ জানুয়ারি সোমবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ের সামনে ২২টি সংগঠনের সমন্বয়ে সম্মিলিত আওয়ামী সমর্থক জোটের ব্যানারে আয়োজিত হরতাল ও অবরোধবিরোধী এক মানববন্ধনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশান সম্পাদক এবং বন ও পরিবেশমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেও বিরোধী দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমঝোতায় যেতে রাজি আছে। তবে এ জন্যে বিরোধী দলকে অবশ্যই সন্ত্রাস, নাশকতা বন্ধ করতে হবে বলেও জানান তিনি।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতি-লীর সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ৭ জানুয়ারি মঙ্গলবার বিকেলে ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ঢাকার আশ-পাশের কয়েকটি জেলার সভাপতি সাধারণ সম্পাদক এবং সংসদ সদস্যদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন “নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি এটা বলা যাবে না। তবে নির্বাচন সর্বজনগ্রাহ্য হয়নি। বিরোধী দল এ নির্বাচনকে সীমাবদ্ধতা এনে দিয়েছে।” মন্ত্রিত্বের শপথ নেয়ার পর এই ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ৫ বছর ক্ষমতায় থাকবো এমনটি অন্যদের মত বলব না।

মন্ত্রিসভার শপথের পর ক্ষমতাসীনদের এই সুর পাল্টে গেছে। তারা এখন মধ্যবর্তী নির্বাচনের কথা আর বলছে না। তারা মনে করছে যে, বিএনপি যেভাবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে তেমনি আগামীতেও এমন কোন আন্দোলন তার সৃষ্টি করতে পারবে না যাতে সরকারকে ক্ষমতা ছাড়তে হয় বা মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে বাধ্য করা যেতে পারে। আর সেজন্য এখন সম্ভাব্য আন্দোলন সংগ্রামের সমুদয় রাস্তা বন্ধ করতে আরো অধিক হারে মামলা নির্ভর হয়ে পড়ছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই এই সরকার মামলাকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেছে। রাজনৈতিক বিষয়গুলো কোর্টে নিয়ে গিয়ে প্রতিপক্ষ নেতৃবৃন্দকে জেলে পুরেছে, জেল দিয়ে হয়রানি করছে। বিগত ৫ বছর ধরেই তারা এটা চালু রাখার পাশাপাশি এখন তা বাড়িয়ে দিয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো ৫ জানুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনের পর অবৈধভাবে ক্ষমতায় পুনরায় বসাকে বৈধতা দেয়া। আন্দোলন-সংগ্রাম যাতে আদৌ গড়ে উঠতে না পারে সেজন্য এই মামলা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, আব্দুস সালামের জামিন বাতিল করে জেলে ঢোকানো হয়েছে। ড. খন্দকার মোশারফ হোসেনকেও জেলে ঢোকানো হয়েছে। আর আগে থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী তো জেলে আছেই।

শেয়ার করুন